thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,  ১৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার

২০১৩ ডিসেম্বর ২৭ ০০:৫৪:৪৮
জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার ১৫৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত উটেমবুর্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রহের গতিবিধির গাণিতিক ব্যাখ্যার জন্য বিখ্যাত তিনি। কেপলারের পরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন গ্রহগুলো উপবৃত্তাকার কক্ষপথ অনুসরণ করছে। কেপলারের সূত্রগুলো আইজাক নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া কেপলার শৈশব থেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। কিন্তু পড়ালেখায় বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। তিনি বৃত্তি নিয়ে টুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। সেখানেই তিনি কোপার্নিকাসের আবিষ্কারের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৫৯৬ সালে গ্রাজ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে তিনি কোপার্নিকাসের পক্ষে একটি প্রবন্ধ লিখেন।

কেপলারের পরিবার লুথারিয়ান মতবাদে দীক্ষিত হলেও তিনি লুথারিয়ান বা ক্যাথলিক কোনো মতবাদই গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এর জন্য তিনি শিক্ষকতার চাকরি হারান। পরে তিনি প্রাগে খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্রাহের সহকারীর কাজ নেন। ১৬০১ সালে টাইকো’র মৃত্যুর পর সহকারী থেকে রাজকীয় গণিতবিদের পদ অলঙ্কৃত করেন তিনি। এ সময় তিনি টাইকো’র সংগ্রহ করা তথ্যের বিশ্লেষণ করে মঙ্গলের ‍উপবৃত্তাকার কক্ষপথ আবিষ্কার করেন।

১৬০৯ সালে অ্যাস্ট্রোনোমিয়া নোভা’র এক প্রবন্ধে গ্রহের গতি সম্পর্কিত প্রথম দুটি সূত্র প্রকাশ করেন। এই সূত্র দুটিকে প্রাকৃতিক নীতিও বলা হয়।

১৬১২ সালে লুথারিয়ানদের চাপের মুখে তিনি প্রাগ ছেড়ে লিঞ্চে চলে যান। এর আগে তার স্ত্রী ও দুই পুত্র মারা যায়। তিনি আবারো বিয়ে করেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ও আর্থিক সমস্যায় পড়েন। দুটি কন্যা সন্তানের মৃত্যুর পর তিনি উটেমবুর্গে ফিরে যান। ১৬১৯ সালে তিনি হারমোনিক্সস মুন্ডি নামে তার তৃতীয় সূত্রটি প্রকাশ করেন। অবস্থান ত্যাগের অনেক চাপ থাকা সত্ত্বেও ১৬২১ সালে তিনি এপিটোমে অ্যাস্ট্রোনোমিয়া প্রকাশ করেন। এটি তার সবচেয়ে প্রভাবশালী কাজ। এতে তিনি সূর্যকেন্দ্রিক নিয়মকে ব্যাখ্যা করেন।

এই তিনটি সূত্র হলো-

প্রথম সূত্র- প্রতিটি গ্রহ সূর্যের চারিদিকে একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পরিক্রম করে। উপবৃত্তটির একটি ফোকাস বিন্দুতে সূর্যের অবস্থান।

দ্বিতীয় সূত্র- সূর্য থেকে কোন গ্রহ পর্যন্ত একটি সরল রেখা কল্পনা করা হয়, তাহলে গ্রহটি চলাকালে কল্পিত রেখাটি সমান সময়ে সমান ক্ষেত্র রচনা করবে।

তৃতীয় সূত্র- প্রতিটি গ্রহের প্রদক্ষিণের কালপর্বের বর্গ উপবৃত্তটির প্রধান অক্ষের ঘনফলের সমানুপাতিক।

তিনি টাইকোকে অনুসরণ করে রুডলফিন টেবলের বিন্যাস করেন। এলগারিদম ব্যবহার করে এর মাধ্যমে অতীত ও ভবিষ্যতের গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। এই টেবিল ব্যবহার করে তিনি বুধ ও শুক্রের যৌথভাবে সূর্য অতিক্রমের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। যদিও এই পরিভ্রমণকে দেখার কোন উপায় তখনো আবিষ্কৃত হয়নি।

এছাড়া তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে- ক্যামেরা পিন হোলের মাধ্যমে ছবি তোলার ধারণা, প্রতিসরণের মাধ্যমে আমাদের দেখার প্রক্রিয়া, কাছের ও দূরের বস্তু দেখার জন্য চশমার সূত্র, গভীরভাবে দেখার জন্য আমাদের দুই চোখের ব্যবহার, টেলিষ্কোপের কার্যপ্রণালী, জোয়ার-ভাটায় চাঁদের আকর্ষণ, নক্ষত্র লম্বনের মাধ্যমে নক্ষত্রে দূরত্ব নির্ণয়, খ্রিস্টের জন্ম সাল আবিষ্কার। এছাড়া তিনি আরো অনেক আবিষ্কার করেছেন- আজও জ্যোতির্বিজ্ঞান ও দৈনন্দিন বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তিনি প্রায় ১৯টির মতো বই লিখেছেন।

কেপলার রিজেন্সবুর্গে ১৬৩০ সালে ১৫ নভেম্বর মারা যান।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/জেএম/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর