thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে 24, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১ জিলকদ  1445

অচল দেশ, কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না

২০১৩ ডিসেম্বর ২৮ ১৫:৪৮:৪৫
অচল দেশ, কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না

দ্য রিপোর্ট ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক : ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী। ঢাকার সঙ্গে সব জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাজধানীর মধ্যেও চলাচল করছে না গণপরিবহন। কর্মসূচির আগের দিন শনিবার সকাল থেকে রাস্তায় যানবাহন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়ে বিপদে পড়েন তারা।

দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ঢাকার স্ট্যান্ডগুলোতে আসতে দেখা যায়নি কিংবা রাজধানী থেকে ছেড়েও যায়নি। এদিকে, শুক্রবার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বাইরের জেলা থেকে কোনো পরিবহন রাজধানীতে প্রবেশ করেনি। অন্যদিকে, যে কোন নাশকতার আশংকায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েনের পাশাপাশি চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চলছে। চলছে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল।

শনিবার সকালে কর্মমুখী মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে পড়েন চরম ভোগান্তিতে। নগরীর দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও বেসরকারি অফিস খোলা থাকলেও পাবলিক পরিবহন ছিল প্রায় বন্ধ। রিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং কিছু কিছু সিএনজি অটোরিকশা ছাড়া রাস্তায় তেমন কোন যানবাহন চলাচল করছে না।

হাজার হাজার মানুষকে বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী, শ্যামলী, ধানমন্ডি, মতিঝিল, গুলিস্তান, গাবতলী, কল্যাণপুরসহ নগরীর আরও কিছু এলাকা ঘুরে মিলেছে এমন চিত্র।

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসতে বিএনপি-জামায়াতের রিজার্ভ করা যানবাহনগুলোও প্রশাসন আটকে দিয়েছে। শুক্রবার রাত থেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে রাস্তায় সাধারণের চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতেও পরিচিতজন ছাড়া কাউকে সিটভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় আসা লোকজন হোটেলে উঠতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হন।

বেচা-কেনা নেই দোকানিদের

‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’- এটা আমাগো কি কামে লাগবো। আমাগো ব্যবসা তো লাটে উঠছে। ‘মার্চ ফর সমোঝতা’ নিয়ে কাম করলে দেশে শান্তি ফিরবো। ব্যবসা কইরা দুই মুঠ ভাত খাইতে পারুম। শনিবার সকাল থেকে একজনও ক্রেতা না আসায় পাশের ফলের দোকানদারকে উদ্দেশ্য করে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন গাবতলী টার্মিনালের ফল ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া।

তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৬টায় দোকান খুলেছি। এখনও একজন ক্রেতা আসেনি। আর আসবে কি করে, সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিন এ সময় হাজার টাকা বেচা-বিক্রি হয়। কিন্তু সকাল থেকে এখনও বওনি করতে পারিনি। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরা লাগবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে ফলের ব্যবসা করি। কেনা-বেচা না হলে মহাজনকে কি দেবো, আর নিজে কি রাখবো। বিএনপির ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ও আওয়ামী লীগের ‘মার্চ ঠেকাও’ কর্মসূচিতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশে মিলিটারি নামাই ভালো। তা হলে হরতাল-অবরোধ থাকবে না। ব্যবসা কইরা দুই মুঠ ভাত খাইতে পারুম।’

পাশের ফল ব্যবসায়ী শামীম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আমাদের ব্যবসার সময়। এ সময় গাবতলী টার্মিনালে অনেক বাসযাত্রী থাকে। ফলে বেচা-কেনা ভালো হয়। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে টার্মিনালে বাস নেই, যাত্রীও নেই। যারা আসছেন, তারা আবার ফিরে যাচ্ছেন। সকাল থেকে এক কেজি আপেল বিক্রি করেছিলাম। খানিক বাদে ক্রেতা তা ফেরত দিতে আসে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা লাটে উঠবে। চিন্তা করছি দুই-এক ঘণ্টা পর দোকান বন্ধ করে দিবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেত্রীর সমোঝতার কথা ভাবা উচিৎ।’

রাজধানী থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো পরিবহন

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গাবতলী থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা অভিমুখে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কোনো ধরনের যাত্রীবাহী বাস ছাড়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে গাবতলী কাউন্টারে অবস্থানরত বাসমালিক কর্তৃপক্ষ।

ফলে শনিবার ভোর থেকেই দু্র্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ভোর থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালের বসে থেকে আবার বাড়ি ফিরেতে হয়েছে অনেক যাত্রীর।

তবে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দর্শনা-চৌগাছার উদ্দেশে লোকাল একটি বাস ছেড়ে যাবে বলে কাউন্টার থেকে হাঁক দিতে দেখা গেছে। কিন্তু তাতে যাত্রীদের বেশি আগ্রহ দেখা যায়নি। কারণ চলতি পথে কোন প্রতিবন্ধকতা হলে আরও বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান টার্মিনালে অপেক্ষমান আরিফ ও শাকিল।

সকালে সরেজমিনে গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগীয় জেলা শহরের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। আবার শুক্রবার বিকেলের পর থেকে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে ঢাকা অভিমুখে কোনো যাত্রীবাহী বাস আসছে না। ফলে ঢাকার সঙ্গে সকল জেলা-উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

যশোরে যাওয়ার উদ্দেশে ভোর থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালে অবস্থানরত মোঃ শফিকুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ভোর থেকে টার্মিনালে বসে আছি, একটি বাসও যশোরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। সারাদিনে কোনো বাস ছাড়বে কিনা তাও জানা যায়নি। কাউন্টারগুলোতে বারবার যোগাযোগ করেও কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি। তাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ফরিদপুরের মধুখালি যাওয়ার উদ্দেশে গাবতলী বাস টার্মিনালে অপেক্ষমান দুই মেয়ে ও ছোট এক ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাহমুদা পারভিন। বাবা অসুস্থ, গ্রামের বাড়ি যাওয়া জরুরি। তাই বাসের অপেক্ষায় সকাল ৭টা থেকে বসে আছেন গাবতলী টার্মিনালে। কিন্তু কোনো গাড়িই নেই। এখন বাড়ি ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই বলে জানান মাহমুদা।

গাবতলী টার্মিনালের ঈগল পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা আলী নেওয়াজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত পর্যন্ত গাবতলী থেকে গাড়ি ছেড়ে গেছে। কিন্তু সকাল খেকে আমরা গাড়ি বের করছি না। কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলাতে হরতাল কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে গাড়ি ছাড়া আমরা নিরাপদ মনে করছি না। আর পর্যাপ্ত যাত্রী না নিয়ে বাস ছাড়লে তো আমাদের ক্ষতি। কবে থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে তাও সঠিকভাবে বলতে পারছি না।’

রেল যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন

সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার সকাল ৮টার পর থেকে কোনো ট্রেন রাজাধানীতে প্রবেশ করেনি। তবে এর আগে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ থেকে কয়েকটি ট্রেন ঢাকায় এলেও খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর থেকে কোনো ট্রেন ঢাকায় আসেনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার থেকে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর থেকে কোনো ট্রেন রাজধানীতে প্রবেশ করেনি। তবে তুর্ণা নিশিথা (চট্টগ্রাম) রাত ২টায়, সুরমা মেইল (সিলেট) রাত ৩টায়, অগ্নিবীণা (তারাকান্দি) ৪টা ১০ মিনিটে, পারাবাত এক্সপ্রেস (সিলেট) সোয়া ৫টায়, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) সকাল সাড়ে ৬টায় কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এরপর অর্থাৎ শনিবার সকাল ৮টার পর আর কোনো ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে আসেনি।

কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার কামরুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, সকাল ৮টার আগে কিছু ট্রেন এলেও এরপর কোনো ট্রেন আসেনি। শুক্রবার রাত থেকে এ পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চল থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে আসেনি।

এদিকে, ঢাকার বাইরে থেকে অধিকাংশ ট্রেন না আসায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। টিকিট ফেরত দিতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়েন তারা। অনেকের অভিযোগ, টিকিট ফেরত নিলেও ভাড়ার অর্ধেক টাকা কেটে রাখা হয়েছে।

রাজশাহীর যাত্রী আনিছুর রহমান বলেন, ভাই সকাল থেকে এসে বসে আছি। ট্রেন আসবে কি আসবে না তাও জানি না। স্টেশন ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

টিকিট ফেরত দিতে আসা এক যাত্রী বলেন, ট্রেন আসবে না শুনে টিকিট ফেরত দিলাম। ভাড়ার অর্ধেক কেটে বাকি টাকা ফেরত দিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কমালাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোঃ খায়রুল বশির দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে সময়মতো ট্রেন ছাড়েনি। এ ছাড়া নিরাপত্তার কারণে ট্রেনগুলো ধীরে চলছে। এ কারণে ৮টার পর থেকে এখন পর্যন্ত অনেক ট্রেন ঢাকায় প্রবেশ করেনি। যাত্রীদের টিকিট ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যাত্রীদের টিকিট ফেরত নেওয়া হচ্ছে।

তবে নাম প্রকাশ না করে রেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রবিবার বিএনপির ‘ঢাকা অভিযাত্রা’ কর্মসূচি প্রতিহত করতে ট্রেন চলাচল অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকার উদ্দেশে কয়েকটি ট্রেন আসতে চাইলেও জয়দবেপুর থেকে তা ফেরত পাঠানো হয়েছে।

যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীদের অপেক্ষা, গাড়ি নেই

ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ীতে যাত্রী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। শনিবার সকাল থেকেই এখানে সীমিত সংখ্যক যান চালাচল করছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনের সংখ্যা একেবারেই কমে যায়। এ সময় হাজার হাজার মানুষকে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কখনো কখনো দু-একটি গাড়ি এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন যাত্রীরা।

এ ছাড়া সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের সামনে অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। নরসিংদী যাওয়ার জন্য পরিবার নিয়ে সায়েদাবাদ এসেছেন রাজমিন্ত্রী নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কিছুই তো জানি না, হঠাৎ এমন হইলো কেন! বড় বিপদে পাইড়া গেছি।’

সদরঘাটেও ভোগান্তি

বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে সদরঘাটে এসে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। সদরঘাটে শনিবার ভোরের দিকে একটি লঞ্চ ভিড়লেও যাত্রী ছিল খুবই কম। পরে ওই লঞ্চ থেকে সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করা হয়।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর আজিজুল ইসলাম বলেন, নাশকতার সন্দেহে ১০ জন আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঘাটে এসেও লঞ্চ পাচ্ছেন না। উপায়হীন হয়ে অনেকে চলেও যান।

তবে কুয়াশার কারণে ঘাটে লঞ্চ পৌঁছাতে পারছে না বলে জানিয়েছেন সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির হিসাবরক্ষক হান্নান খান। লঞ্চমালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে বাধার কারণে লঞ্চ সদরঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। তবে দিনের অন্য ভাগে লঞ্চ ঘাটে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে চাঁদপুর, সুরেশ্বর, ঈদগাঁও ফেরী ঘাট, নীলকমল ও ইচলী এলাকায় লঞ্চ ছেড়ে গিয়েছে বলে লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে।

বাবুবাজার সেতু এলাকায় যাত্রীদের তল্লাশি

বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর উভয়পাড়ে (বাবুবাজার ব্রিজ) গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে উভয় দিকে অল্পসংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে। তবে বাসের তুলনায় সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা ও টেম্পুর সংখ্যাই বেশি। সকাল ৯টা পর্যন্ত পুলিশকে কোন যানবাহনে তল্লাশি করতে দেখা যায়নি।

তবে সকাল ৯টার পর বাবুবাজার ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে কদমতলি গোলচত্বরে ঢাকামুখী সব ধরনের যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।

যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে এক এক করে তল্লাশি করতে দেখা যায়। যাত্রীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগও তল্লাশি করে পুলিশ। তবে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা।

তল্লাশির দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশে না করে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা তল্লাশি করছি। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীদের দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। মোঃ রফিক নামের এক যাত্রী দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘মিরপুর যাব। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু কদমতলী থেকে সব বাস কাউন্টার বন্ধ থাকায় কোন গাড়ি পাচ্ছি না।’

কদমতলী গোলচত্বরে ঢাকামুখী দিশারী এবং মাওয়া-মাদারীপুরমুখী সার্বিক ও চন্দ্রা পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় বন্ধ।

নাম প্রকাশ না করে সার্বিক পরিবহনের এক কর্মী দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘মালিকপক্ষ থেকে নিষেধ করায় আমরা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছি। কবে থেকে গাড়ি চলাচল শুরু হবে তাও জানি না।’

এদিকে সকালে কিছু দূরপাল্লার লোকাল বাস চলতে দেখা গেলেও সকাল ১০টার পর তাও বন্ধ হয়ে যায়।

মোটরচালক লীগের হরতাল

মোটরচালক লীগের ডাকা দুই দিনব্যাপী হরতাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২৮ ডিসেম্বর ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল পালনের ঘোষণা দেয় সরকার সমর্থিত সংগঠনটি।

মোটরচালক লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি আবু তাহের উদ্দিন এ হরতালের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চক্রান্ত এবং আন্দোলনের নামে পরিবহন চালক-শ্রমিকদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করছে বিএনপি-জামায়াত। আবার সেই পরিবহন দিয়েই ঢাকায় কথিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র নামে বিএনপি-জামায়াতের অরাজকতা সৃষ্টির কর্মসূচি রুখতে ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হবে। অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্রবাহী গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়ি, দোকান-পাট, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলেও জানান তিনি।

নাশকতার আশংকা

বিএনপির এ কর্মসূচিকে ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার আশংকা করছে সরকার। সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপির কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতারাও বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে। সবখানে সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়ি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি করা হচ্ছে। যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকেই আটক করছে পুলিশ। ঢাকার সবগুলো রাস্তার দৃশ্যপট অন্যদিনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফাঁকা রাস্তা। রাস্তার পাশে শুধু মানুষ আর মানুষ। সকালে অফিসমুখী অনেককেই পায়ে হেঁটে অফিসে যেতে দেখা গেছে।

রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে রুখতে রাজধানীমুখী সকল যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার সমর্থিত সংগঠন মটরচালক লীগের আহ্বানে ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী হরতালের প্রথম দিনে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো-

খুলনা : শুক্রবার রাত হতেই খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সকল বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বাস চলাচল বন্ধের কারণ হিসেবে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে বাস মালিক ও পুলিশ প্রশাসন। উভয়েই রুট বন্ধের কারণ হিসেবে পরস্পরের নির্দেশের কথা বলেছেন।

পটুয়াখালী : শুক্রবার বিকেল থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে পটুয়াখালী থেকে ঢাকামুখী সকল বাস ও লঞ্চ চলাচল। স্থানীয় বাস ও লঞ্চ কর্মকর্তারা জানান, মালিকদের নির্দেশে চলাচল বন্ধ রয়েছে।

যশোর : জেলায় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকেই ঢাকামুখী সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে টিকিট বিক্রি। বাতিল করা হয়েছে অগ্রিম টিকিট। বাস মালিকদের নির্দেশেই চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

ঝিনাইদহ : শুক্রবার দুপুর থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে ঝিনাইদহ-ঢাকা রুটের সকল বাস চলাচল। প্রশাসনের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন বাস মালিকপক্ষ।

রাজশাহী : ঢাকা-রাজশাহী রুটের সকল বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে। শ্রমিকনেতাদের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে বাস কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়েছে।

পিরোজপুর : শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকাগামী সকল বাস ও লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষের নির্দেশেই চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

রংপুর : রংপুর থেকে ঢাকা অভিমুখী সকল বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে শুক্রবার দুপুর থেকেই। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে এ রুট বন্ধ রয়েছে।

বাগেরহাট: শুক্রবার সকাল থেকেই বাগেরহাট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। বাস মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশেই সকল দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও শনিবার ঢাকায় কোনো বাস প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এইচবিএস/এএইচএস/এসআর/আরএম/এস/এএইচ/এমএআর/নূরুল/ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর