thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

কর্মকর্তাদের গা-ছাড়া ভাব

নখ-দন্তহীন দুদককে মাথাবিহীন করেছে সরকার

২০১৪ জানুয়ারি ০১ ০০:০২:৪৫
নখ-দন্তহীন দুদককে মাথাবিহীন করেছে সরকার

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। বরং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিপরীত ঘটনা ঘটেছে।

সরকারের মেয়াদ শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৩ পাসের মাধ্যমে কমিশনের কাজের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে সরকারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার জন্য সংস্থাটিকে নখ-দন্তহীন বাঘের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। আর সরকার সংশোধিত আইনের মাধ্যমে নখ-দন্তহীন দুদককে এখন মাথাবিহীন করেছে বলে মন্তব্য করছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।

২০ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৩ পাস হয়। সংশোধিত আইনের ৩২ক ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭-এর বিধান আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্ব অনুমোদন লাগবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধারাটি সংশোধিত আইনের মূল সমালোচনার বিষয়। যা দুদক কিংবা সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বহির্ভূত।

এ ছাড়া নতুন আইনের ২৮গ ধারায় মিথ্যা তথ্য প্রদানে দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে দুই থেকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ধারায় কাজ করে ‘সুরক্ষা’ পাওয়ার সুবিধা না থাকায় কমিশনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্তে গা-ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দুদক কর্মকর্তা জানান, এ ধারার ফলে দুদকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাজের প্রতি অনীহা থাকা স্বাভাবিক। দুদক নথিপত্রেরভিত্তিতে মামলা দায়ের করে ও চার্জশিট প্রদান করে। সে ক্ষেত্রে ভুল বা মিথ্যা তথ্য চিহ্নিত করা সহজ। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের অভিযোগের পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে মামলা দায়ের করা উচিত।

সংশোধিত আইন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সংশোধিত আইনের কিছু ভালো দিকও রয়েছে। তবে সব চেয়ে বড় বাধা হল এ আইনে কমিশনের কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নেই। দুদকের জন্য খারাপ হল ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭ প্রয়োগ। তবে সংশোধিত এ আইন নিয়ে আমরা এই মুহূর্তে কিছু করতে পারছি না। পরবর্তী সংসদ আসলে তখন আমরা এই আইন সংশোধনের জন্য চেষ্টা করব।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখায়রুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সংশোধিত আইনে কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। তবে ২০১৩ সালে যে আইন করা হয়েছে তাতে প্রধান যে প্রতিবন্ধকতা তা হল সরকারি কর্মকর্তা, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের পূর্ব অনুমতি লাগবে। এটা সাংবিধানিক বৈষম্যমূলক ও প্রতারণামূলক। কাজেই এর ফলে দুদককে আরও অকার্যকর করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। যা জনগণের জন্য হতাশাব্যঞ্জক। সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে স্বীকার করেছে যে এটা তাদের ভুল হয়েছে। আশা করব সরকার নিজ অবস্থান থেকে সরে এসে দুদকের এ সংশোধনী প্রত্যাহার করবে।’

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এসবি/সা/জানুয়ারি ০১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর