thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ৬ মে 24, ২২ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৭ শাওয়াল 1445

শিবিরের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে না

২০১৪ জানুয়ারি ০১ ০২:৪৭:০০
শিবিরের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে না

ছাত্রশিবিরের বার্ষিক সদস্য সম্মেলন এবার হচ্ছে না। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, গ্রেফতার আতঙ্কসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে এ সম্মেলন না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে নেতৃত্বেরও পরিবর্তন আসছে না।

ছাত্রশিবিরের একাধিক কেন্দ্রীয়, জেলা ও শহর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এ সব তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, সম্মেলনের মাধ্যমে ক্যাডারভিত্তিক এ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচন করা ছাড়াও বার্ষিক পরিকল্পনাগ্রহণসহ অন্যান্য নীতিনির্ধারণী পরিকল্পনা নেওয়া হয়ে থাকে।

ছাত্রশিবিরের গঠনতন্ত্রের ১২ ও ১৩ ধারা অনুযায়ী প্রতিবছর সদস্যদের ভোটে (সর্বোচ্চ স্তর) কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন, সেক্রেটারি জেনারেল ও সেক্রেটারিয়েট গঠন করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু চলতি বছর জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত এই ছাত্র সংগঠনটির সম্মেলন হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের সহকারী প্রচার সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এবার নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা যাচ্ছে না।’ কবে নাগাদ এ সম্মেলন হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।’ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান জামাল উদ্দিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রশিবিরের একাধিক শহর ও জেলা সভাপতি দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিই নেতৃত্বে থাকবে। একইভাবে অন্যান্য কমিটিও কাজ করে যাবে।’

ছাত্রশিবিরের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, মহানগর, শহর, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শাখা মিলে সারাদেশে সংগঠনটির ১২৪টি সাংগঠনিক শাখা রয়েছে। ক্যাডারভিত্তিক এ ছাত্র সংগঠনটি তিন ক্যাটাগরির (কর্মী, সাথী ও সদস্য) নেতাকর্মী রয়েছে সারাদেশে। এর মধ্যে সদস্য হচ্ছে সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি। শিবিরের গঠনতন্ত্রের ১২ ও ১৩ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ মানের জনশক্তি অর্থাৎ সদস্যদের ভোটে বছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হবেন। একই সঙ্গে সেক্রেটারি জেনারেল, সেক্রেটারিয়েট (অন্যান্য সম্পাদক) ও মহানগর, জেলাসহ অন্যান্য শাখার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এভাবেই সম্মেলন করে আসছিল ছাত্রশিবির। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে শিবিরের এ সম্মেলনে ভাটা পড়ে। ওই বছর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ বার্ষিক সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ নেতারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এরপর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিশেষ করে শীর্ষ নেতাদের মুক্তিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা শাখার নেতাকর্মীরা মামলার জালে বন্দি হয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ প্রথমসারির কেন্দ্রীয়, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা কারাগারে বন্দি আছেন। একই সঙ্গে বাকি নেতাকর্মীরাও মামলার জালে বন্দি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এ অবস্থায় গত তিন বছর প্রকাশ্যে ছাত্রিশিবিরের বার্ষিক সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১০ ও ২০১১ সালে কেন্দ্র অধীনস্থ শাখাগুলোতে ব্যালট পেপার ও বাক্স পাঠিয়ে ভোটগ্রহণ করা হয়। এরপর তা ঢাকাতে এনে স্বল্প পরিসরে সম্মেলনের মাধ্যমে (ছোট মিলনায়তন) কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনসহ অন্যান্য নেতা নির্বাচন করা হয়।

বিগত ২০১২ সালে এ ধরনের স্বল্প পরিসরেও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। কারণ শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাজপথে সহিংসতার ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তটস্থে থাকেন নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় অনলাইনে ভোট নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ অন্যান্য সম্পাদক পদে নেতা নির্বাচন করে শিবিরের সদস্যরা।

শিবির সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবির এখন চরম সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। স্বাধীনতার পর এ ধরনের সঙ্কট আর আসেনি তাদের। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারি ঘোষিত নির্বাচন ঠেকানো এখন তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিবির নেতারা মনে করেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাজনীতি করাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে তদের। তাই সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্যাডারভিত্তিক এ ছাত্র সংগঠনটি। রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কমিটিই নেতৃত্ব দেবে দলটির।

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার (আগে ইসলামী ছাত্রসংঘ) পর থেকে দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৎপরতা শুরু করে ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনটি। বিশেষ করে ৮০’র দশকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে শিবির। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় নিজেদের শক্ত অবস্থান করে নেয় তারা। যদিও এ সংগঠনটির বিরুদ্ধে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার নামে সহিংসতার অভিযোগ উঠে সুশীল সমাজ ও প্রগতিশীলদের পক্ষ থেকে।

ছাত্রশিবির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নয় বলে জামায়াতে ইসলামী বরাবরই দাবি করে এলেও মূলত শিবিরই তাদের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন সময়ে। বিশেষ করে জামায়াতের বর্তমান তরুণ নেতৃত্ব সাপ্লাই ও চলমান রাজপথে আন্দোলনে শিবিরের নেতাকর্মীদেরই অগ্রভাগে দেখা যায়।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এসবি/শাহ/জানুয়ারি ০১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর