thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ৬ মে 24, ২২ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৭ শাওয়াল 1445

পল্লী কবি জসীম উদ্দীন

২০১৪ জানুয়ারি ০১ ০৪:০৬:০০
পল্লী কবি জসীম উদ্দীন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : পল্লী কবি জসীম উদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা কবিতাকে তিনি দিয়েছেন গ্রাম বাংলার ভাব-ভাষার স্পর্শ। এতে বাংলা কবিতা পায় নতুন রূপ রস লাবণ্য। এ ছাড়া বাংলা গদ্য ও গানে তার অবদান অবিস্মরণীয়।

তাম্বলখানা ছিল তার নানার বাড়ি। নিজের বাড়ি ছিল গোবিন্দপুর গ্রামে। তার বাবা আনসার উদ্দীন ছিলেন ফরিদপুর হিতৈষী এমই স্কুলের শিক্ষক। মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়া লেখা শুরু শোভারামপুর গ্রামের অম্বিকা মাস্টারের পাঠশালায়। তারপর বাবার স্কুলে পড়েন চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত। তারপর জেলা স্কুল থেকেই ১৯২১ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং এমএ শেষ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সালে।

১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের অধীনে ‘রামতনু লাহিড়ী’ গবেষণা সহকারী নিযুক্ত হন। এরপর তিনি ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। অধ্যাপনা ছেড়ে ১৯৪৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগে চাকরি গ্রহণ করে ১৯৬১ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

জসীম উদ্দীনের কবি প্রতিভা বিকশিত হয় শৈশবেই। অভিজ্ঞতায় ধারণ করা গ্রামের মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের বিচিত্র বিষয় ছিল তার কবিতার বিষয়বস্তু। গ্রামের সাধারণ মানুষের কথাই তিনি তার কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। দেশের মানুষ তাকে ভালোবেসে ‘পল্লীকবি’ হিসেবে ভূষিত করে। কলেজে পড়াকালে ‘কবর’ কবিতাটি লিখে তিনি খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন। তিনি যখন বিএ ক্লাসের ছাত্র তখনই কবিতাটি প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীদের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়।

তার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- রাখালী (১৯২৭), নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯), বালুচর (১৯৩০), ধানখেত (১৯৩৩), সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪), হাসু (১৯৩৮), রঙিলা নায়ের মাঝি (১৯৩৫), রূপবতী (১৯৪৬), মাটির কান্না (১৯৫১), এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬), সকিনা (১৯৫৯), সুচয়নী (১৯৬১), ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৬২), মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩), হলুদ বরণী (১৯৬৬), জলে লেখন (১৯৬৯) ও কাফনের মিছিল (১৯৮৮)। নাটকের মধ্যে রয়েছে- পদ্মাপার (১৯৫০), বেদের মেয়ে (১৯৫১), মধুমালা (১৯৫১), পল্লীবধূ (১৯৫৬), গ্রামের মেয়ে (১৯৫৯), ওগো পুস্পধনু (১৯৬৮) ও আসমান সিংহ (১৯৮৬)। আত্মজৈবনিক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- যাদের দেখেছি (১৯৫১), ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় (১৯৬১), জীবন কথা (১৯৬৪) ও স্মৃতিপট (১৯৬৪)। তার একমাত্র উপন্যাস বোবা কাহিনী (১৯৬৪)। ভ্রমণ কাহিনীর মধ্যে রয়েছে- চলে মুসাফির (১৯৫২), হলদে পরির দেশে (১৯৬৭), যে দেশে মানুষ বড় (১৯৬৮) ও জার্মানীর শহরে বন্দরে (১৯৭৫)। সঙ্গীত নিয়ে লিখেছেন জারি গান (১৯৬৮) ও মুর্শিদী গান (১৯৭৭)। অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে- বাঙালির হাসির গল্প ও ডালিমকুমার (১৯৮৬)।

তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য হলো- প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরমেন্স (১৯৫৮), একুশে পদক (১৯৭৬), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৮, মরণোত্তর) ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি (১৯৬৯)। এ ছাড়া ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৭৬ সালে ১৪ মার্চ ঢাকায় জসীম উদ্দীন ইন্তেকাল করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী নিজ গ্রামে দাফন করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ০১, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর