thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

আল মাহমুদের কবিতা

নতুন ঊষার উদয়ের কবি

২০১৪ জানুয়ারি ০২ ২২:১৫:৫১
নতুন ঊষার উদয়ের কবি













আমারে কেন যে পথের মানুষ
আঙ্গুল তোলে-
বলে ঐ যায় দূরের যাত্রী
আমি কি দূরের
আমিতো সবার পাশেই রয়েছি
অজানা সুরের সঙ্গীত বাজে
আমার কানে-
আমি হেঁটে যাই, ইচ্ছার ঢেউয়ে
হাওয়ার টানে।

আমি ভালোবাসি
চলতে চলতে বলার নেশা
আমাকে কেবল দূর থেকে দূরে
ঠেলছে যে কারা!
আমার পেশা-
কেবল কাব্য
আর কিছু নয়
কবিতা ছাড়া।

আমাকে কি কেউ
আটকাতে পারে?
তবুতো কাহারা ইশারায় টানে
সমুখের পানে
শরীর ঘেষা।
কে যেন রয়েছে
আমার পাশেই দেখিনাতো তারে
অথচ আমারে বারে বারে করে আত্মহারা।
আমি পেরিয়ে যাচ্ছি সবার
চোখের পাহারা।

আমি পার হই অসম্ভবের নদীর শরীর
তবু যেন এক কালের চেহারা
আমার দিকেই তাক করে তীর
কী নিবিড় এই লক্ষ্যভ্রষ্ট
আঘাতের ছবি,
আমি তবু বলি আমি কেহ নই
আমি শুধু এক নতুন ঊষার উদয়ের কবি

[শ্রুতি লিখন : আবিদ আজম]

একটি কবিতা জন্মের সাক্ষ্য : পহেলা জানুয়ারি ২০১৪। সময় ছিল সকাল সাড়ে ১০টা। কিন্তু ঢাকা শহরে আপনি যদি গণপরিবহণে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান, তবে আপনাকে সময় বেশি নিয়ে বের না হয়ে উপায় নেই। ফলে ঘর ছাড়তে হল সাড়ে আটটায়। সময় মতোই আমি ও ফটোসাংবাদিক সুমন্ত চক্রবর্তী একত্র হলাম আমাদের কার্যালয়ে।

৩ জানুয়ারি দ্য রিপোর্টের শুভযাত্রা ইস্যুতে কবি আল মাহমুদের শুভেচ্ছা বাণী ও একটি অপ্রকাশিত কবিতা আনতে হবে। সম্পাদক মহোদয়ের নির্দেশনা ‘কবি আল মাহমুদের একটা অপ্রকাশিত লেখা চাই-ই চাই’। এবং ‘যেহেতু তিনি কবি সেহেতু অবশ্যই তা কবিতা’।

যা হোক, কার্যালয়ে সবই পেলাম- সমস্যা দেখা দিল ‘বুম’ ও ক্যামেরার ‘ট্রাইপট’ নিয়ে। সব ক’টি বুম ও ট্রাইপটই ব্যস্ত। কাছে যেটা ছিল সেটাও পেতে আধাঘণ্টার বেশি দেরি হবে- ব্যারিস্টা্র রফিক-উল হকের শুভেচ্ছা বাণী নিতে পল্টনে সেটি আরেক ফটোসাংবাদিকের কাছে। ফলে সময় মতো পৌঁছানো আর সম্ভব হবে না বুঝতে পেরে আবিদকে ফোন দিয়ে সময় একটু সময় পেছানো লাগল।

১১টার পর আমরা পৌঁছালাম কবি আল মাহমুদের বাসায়। কবির বড় ছেলে শরীফ মাহমুদ মৃদু হেসে ভেতরে ঢোকার আহ্বান জানিয়ে আমাদের আগমন সাবলীল করে দিলেন। আমরা ভেতরে ঢুকলাম। কবি শুয়ে ছিলেন। লেপের ভেতরে শরীর প্রায়ই ঢাকা। হাফহাতা সাদা গেঞ্জি পরা কবি।

আমাদের পরিচয়পর্বটাকে ভালোভাবেই নিলেন কবি। কিছু কথা বলে তিনি মৃদু হেসেই আবিদকে বললেন, ‘লেখ’।

আবিদ খাতা-কলম নিয়ে দ্রুত প্রস্তুত হল। কবি বললেন, “আমারে কেন যে পথের মানুষ/আঙ্গুল তোলে-/বলে ঐ যায় দূরের যাত্রী।” এরপর থামলেন। তারপর আবিদকে বললেন, ‘পড়’। আবিদ পড়ে শুনাল। কবি বললেন, “আমি কি দূরের’। একটু থেমে বললেন, ‘আমিতো সবার, পাশেই রয়েছি” একটু থেমে ফের বললেন, “অজানা সুরের সঙ্গীত বাজে/আমার কানে-/আমি হেঁটে যাই, ইচ্ছার ঢেউয়ে/ হাওয়ার টানে।”

এরপর ফের আবিদকে বললেন, ‘পড়’। আবিদ একটু জোরে-জোরেই আবৃত্তির ঢংয়ে পড়ে শোনাল। আবার তিনি কয়েক লাইন বললেন, থামলেন, আবিদকে পড়তে বললেন এবং কখনো একটু বেশি সময় থামলেন।...

এভাবে গেল মাত্র মিনিট দশেক। আমাদের সামনে বাংলার এক মহৎ-কবির একটি কবিতার জন্ম হল। আমরা সৌভাগ্যবান হলাম- কবিতাটির জন্মের সাক্ষী হিসেবে। আমরা পেলাম- ‘নতুন ঊষার উদয়ের কবি’। এর মধ্যে আমাদের জন্য চা এল। কবিতার জন্মের ঘোরলাগা অনুভূতিতে কবি আল মাহমুদের আপ্যায়নকৃত চা-টা একটু অন্যরকম তৃপ্তিদায়ক ছিল।

ইকবাল জাফর খন্দকার

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর