thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মে 24, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৮ শাওয়াল 1445

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

২০১৪ জানুয়ারি ০৪ ০০:৪৩:১৪
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের অন্যতম গদ্য লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ'র পরেই তিনি সর্বাধিক প্রশংসিত বাংলাদেশী লেখক।

তার পুরো নাম আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস। ডাক নাম মঞ্জু। ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার গোটিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি বগুড়া জেলায়। বাবা বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৪৭-১৯৫৩) এবং মুসলিম লীগে পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী ছিলেন। তার মায়ের নাম বেগম মরিয়ম ইলিয়াস।

তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন (১৯৬৪)।

তার কর্মজীবন শুরু হয় করটিয়া সা'দত কলেজে প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় দু-তিন দিন পর চাকরিটি ছেড়ে দেন। ১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন জগন্নাথ কলেজে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করার পর সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে তার উপরও বাকশালে যোগ দেয়ার চাপ পড়ে। কিন্তু তিনি বাকশালে যোগ দেননি। ১৯৮৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং ডিসেম্বরে সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন।

তার লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয় স্কুলে পড়াকালে৷ এ সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'সত্যযুগ' ও 'আজাদ' পত্রিকায় ছোটদের পাতায় তার লেখা ছাপা হতো। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় 'সওগাত'-এ প্রথম ছোটগল্প ছাপা হয়। ১৯৬৪ সালের দিকে তিনি সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা 'স্বাক্ষর'-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ বছরই আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত 'সাম্প্রতিক ধারার গল্প' নামক একটি গ্রন্থে ইলিয়াসের 'স্বগত মৃত্যুর পটভূমি' নামে একটি গল্প অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে লিটল ম্যাগাজিন 'আসন্ন'-তে 'চিলেকোঠায়' নামে তার একটি গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালে 'চিলেকোঠায়' নামে তাঁর প্রথম উপন্যাস 'দৈনিক সংবাদ'-এর সাহিত্য পাতায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়। কিন্তু ওই সময় সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সংবাদ কর্তৃপক্ষ উপন্যাসটি প্রকাশ বন্ধ করে দেয়।

১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় ইলিয়াসের প্রথম গল্পগ্রন্থ 'অন্য ঘরে অন্য স্বর'। ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে সাপ্তাহিক 'রোববার' পত্রিকায় 'চিলেকোঠার সেপাই' ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়। ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে 'ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড' হতে বই আকারে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস 'চিলেকোঠার সেপাই'। গল্পগ্রন্থ 'দোজখের ওম’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৪ সালে 'দৈনিক জনকন্ঠ' সাহিত্যপাতায় 'খোয়াবনামা' উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা হতে শুরু হয়। যদিও পুরো উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার আগে 'জনকন্ঠ' কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক কারণে ছাপা বন্ধ করে দেয়।

আটষট্টি-ঊনসত্তরের গণআন্দোলন একনিষ্ঠভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন ইলিয়াস। প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক মিটিংয়ে তিনি ছিলেন মনোযোগী শ্রোতা। বিশেষত মওলানা ভাসানীর প্রায় প্রতিটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ইলিয়াস পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তার লেখায় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতা।

প্রকাশিত বই-

উপন্যাস: চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৭) ও খোয়াবনামা (১৯৯৬)।

ছোট গল্প সঙ্কলন: অন্য ঘরে অন্য স্বর (১৯৭৬), খোঁয়ারি (১৯৮২), দুধভাতে উৎপাত (১৯৮৫), দোজখের ওম (১৯৮৯) ও জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল (১৯৯৭)।

প্রবন্ধ সংকলন: সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু।

তিনি বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য হলো- হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৭), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৩), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৬), সাদাত আলী আখন্দ পুরস্কার (১৯৯৬), কাজী মাহবুবুল্লাহ স্বর্ণপদক (১৯৯৬) ও একুশে পদক (মরণোত্তর) (১৯৯৯)।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে। তার স্ত্রীর নাম সুরাইয়া। ডাকনাম তুতুল। স্ত্রী তুতুলও ছিলেন পেশায় একজন শিক্ষিকা। ১৯৭৪ সালে জন্ম নেয় তাদের একমাত্র সন্তান আন্দালিব।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ০৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর