thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ৫ মে 24, ২১ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৬ শাওয়াল 1445

হাম-রুবেলার টিকা

দক্ষিণের ১০ জেলায় ১৭১ শিশু অসুস্থ, মৃত্যু এক

২০১৪ জানুয়ারি ৩১ ১৫:৪৩:১১
দক্ষিণের ১০ জেলায় ১৭১ শিশু অসুস্থ, মৃত্যু এক

খুলনা সংবাদদাতা : হাম-রুবেলার টিকা দেওয়ার পর দক্ষিণের ১০ জেলায় এ পর্যন্ত ১৭১ শিশু অসুস্থ হয়েছে। টিকা গ্রহণকারী এ সব শিশু জ্বর, মাথা ঘোরা ও বমি করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ খবরের পর ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় শিশুর অভিভাবকরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদরের হাসপাতালে অসুস্থ শিশুদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণের জেলাগুলো হচ্ছে সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫-২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণের এ সব জেলায় টিকা দেওয়ার পর উল্লিখিত পরিমাণ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়েছে খুলনা জেলায়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২৯৭ শিশুকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ২৪০ জনকে টিকা প্রদান করে। স্বাস্থ্যকর্মীরা শিশু ও অভিভাবকদের টিকাদান সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মো. গোলাম মোর্তুজা শিকদার জানান, টিকা দেওয়ার পর স্বল্পসংখ্যক শিশু জ্বর ও মাথা ঘোরায় সাময়িকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই বাড়ি ফিরেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, এ টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। টিকা দেওয়ার পর ওই স্থানটি সামান্য ফুলে যেতে বা হালকা জ্বর আসতে পারে। ভয়ের কোনো কারণ নেই।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. নাসরিন সুলতানা জানান, বুধবার সদর উপজেলায় টিকাদানের সময় ৫০ শিশু আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের পরামর্শ দিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে অসুস্থ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ঝিনাইদহে গত বুধবার হাম-রুবেলা টিকা নেওয়ার পর আরও শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ৫২ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা গোয়ালপাড়া মোশাররফ হোসেন-সালেহা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

বুধবার ওই বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন শ’ শিক্ষার্থকে হাম-রুবেলা টিকা নেওয়ার পর পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলাম ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জুলকার নয়ন।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মামুন পারভেজ জানান, অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। বিভাগের ১০ জেলায় ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫৫৬ শিশুকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ : ২৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শিশু আরিফুল ইসলামকে টিকা দেওয়ার পর তার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে ভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছে। স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু হেনা মো. মাহবুবুল মাওলা চৌধুরীকে আহ্বায়ক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও একই মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. এবিএম সাইফুল ইসলামকে সদস্য এবং ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়।

অপরদিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জামিনুর রশিদকে সভাপতি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাদী বেগম ও মেডিকেল অফিসার ডা. ইমামুল হক ও ডা. মো. আশরাফুল ইসলামকে সদস্য করে উপজেলা পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. নাসরিক সুলতানা এ প্রতিবেদককে জানান, তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। উভয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী টিকা দেওয়ার পর এই শিক্ষার্থী স্কুল আঙিনায় খেলাধুলা করে। অসুস্থ হয়ে পড়লে মোটরসাইকেলযোগে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেলে তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মামুন পারভেজ এ প্রতিবেদককে জানান, ওই শিক্ষার্থীর ক্রনিক ব্রনকেল অ্যাজমা ছিল। তার অভিভাবক ও শিক্ষকরা এ তথ্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জানায়নি। যদিও এ ক্ষেত্রে এই টিকা দেওয়ার নিষেধ রয়েছে। শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার পর যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এবি/এএস/এএল/জানুয়ারি ৩১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর