thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

বিশ্বজুড়ে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

২০১৬ নভেম্বর ১৩ ২৩:১১:৩৭
বিশ্বজুড়ে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর ডায়াবেটিস বিষয়ে জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরই বিশেষ কর্মকাণ্ডকে মাথায় রেখে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন করা হয় এবং বছরব্যাপী বিশ্বজুড়ে এ মূলনীতিকে সামনে রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দিবসটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো ডায়াবেটিসের বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন, জনগণকে যতবেশি করে সম্ভব এর সাথে যুক্ত করা, রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারকদের বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে উৎসাহিত করা, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করা এবং সর্বোপরি যাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি, যাদের ডায়াবেটিস হয়ে গেছে বা যারা ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পাচ্ছেন, তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিদ্যমান কর্মকাণ্ডে গতি আনা দিবসটির বিশেষ লক্ষ্য থাকে।

এবছর আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- ডায়াবেটিসের উপর নজর রাখুন। এতে যে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলো- (১) ডায়াবেটিসের লক্ষণ নেই এমন প্রাপ্তবয়স্ক লোককেও ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া। যাতে ডায়াবেটিসের জটিলতা দেখা দেবার আগে তাকে সঠিক চিকিৎসার আওতায় আনা যায়। একই সাথে ডায়াবেটিসের লক্ষণবিহীন সকল মানুষকে সচেতন করা। (২) যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদেরকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা, তাদের ইতোমধ্যেই ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে কিনা তা দেখা, চিকিৎসা সংক্রান্ত পদক্ষেপ সঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কিনা, তা নজরে রাখা। আসলে এ দিবসটির কর্মকাণ্ড ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসার মূল লক্ষ্যকে গভীরভাবে আঁকড়ে ধরেছে।

আইডিএফ এর হিসেব মতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে মোট ৭১ লক্ষ শনাক্তকৃত ডায়াবেটিসের রোগী ছিল এবং আরও প্রায় ৭১ লক্ষ (মোট প্রায় ১ কোটি ৪২ লক্ষ) মানুষ ডায়াবেটিস নিয়ে বসবাস করছিল, যারা এখনও পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি। ঐ সময় সারা পৃথিবীতে মোট ৪১ কোটি ৫০ লক্ষ শনাক্তকৃত ডায়াবেটিসের রোগী ছিল। তারা আরও আশঙ্কা করছে যে, ২০৪০ সালে পৃথিবীতে মোট ১ কোটি ৬৪ লক্ষ ডায়াবেটিসের রোগী থাকবে। ২০১৫ সালে ডায়াবেটিসের রোগীর মোট সংখ্যা অনুসারে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ দশম অবস্থানে ছিল। কিন্তু ২০৪০ সালে গিয়ে মোট রোগীর সংখ্যা অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান হবে নবম। এখানে একটা জিনিস খুবই লক্ষ্যণীয় যে, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট উদ্যোগী এবং বিভিন্ন মাত্রায় সফল। কিন্তু বাংলাদেশ উল্টো অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীরা আরও বেশি খারাপ অবস্থায় জীবনযাপন করছে। এযাবৎ প্রকাশিত দু’টি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে দেখা গেছে, বাংলাদেশের বিশ শতাংশের কম ডায়াবেটিসের রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফল হয়। এটিই বর্তমান বিশ্বের যে কোন দেশের ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রার তুলনায় খারাপ অবস্থা। ডায়াবেটিসের দীর্ঘকালীন জটিলতাগুলোতেও বাংলাদেশী ডায়াবেটিসের রোগীরা বেশি ভুগছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি হলো, এখানে অতি অল্প বয়সে মানুষ (ছেলে-মেয়েরা) টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী বালক-বালিকা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। আমরা এর থেকে জাতিকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সমর্থ হচ্ছি না। বাংলাদেশের আরও একটি বড় ঝুঁকি হলো- বিপুল সংখ্যক গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগী, পৃথিবীতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বাংলাদেশে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশের মানুষের জীনগত ত্রুটি আছে যা ডায়াবেটিসের জন্য সহায়ক। এখানকার মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি ও পরিবেশ ডায়াবেটিসের চাষাবাদ করে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি আমাদের কাঠামোগত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চেয়ে লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে। দ্রুত নগরায়ন, অপরিকল্পিত নগরায়ন বা অস্বাস্থ্যকর নগরায়ন একটি বড় সমস্যা এখানে। গ্রামেও নগরায়নের কু-প্রভাব প্রকট। যান্ত্রিক সুবিধাপ্রাপ্তি বা যন্ত্রনির্ভর জীবনযাপন আমাদের শারীরিক শ্রমবিমুখ বা অলস জাতিতে পরিণত করছে। কম বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই আমরা দৈহিক স্থূলতায় ভুগছি। শ্রমবিমুখ জীবনযাপন ডায়াবেটিসসহ সকল বিপাকজনিত রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা শর্করা ও চর্বি নির্ভর খাদ্যের বলয় থেকে বেরুবার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি না। এক্ষেত্রেও কমবয়সীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খেলা-ধুলার মাঠ নেই বললেই চলে। আর যেখানে মাঠ আছে সেখানেও খেলা-ধুলার কোন ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। সড়কগুলোতে ফুটপাত নেই বললেই চলে, থাকলেও হয় বেদখলে নতুবা হাঁটা-চলার অনুপযোগী। উদ্যান বা পার্ক শহরগুলোতে প্রায়ই অনুপস্থিত। সব মিলিয়ে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, দৈহিক স্থূলতাসহ বিপুল পরিমাণ সুগভীর প্রভাবশালী রোগের আঁধার হয়েছে দাঁড়িছে আমাদের পরিবেশ।

এ সব ঝুঁকি কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণের সময় অনেক যুগ আগে পার হয়ে গেছে। এখন আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ার আগে কিছু একটা করার সময় এখনই। আর এর জন্য রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে সর্বাগ্রে। রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করবে, যাতে সব বয়সের মানুষ, সকল পেশার মানুষ, সব ধরনের মানুষ দৈহিক শ্রমময় জীবনযাপন করতে উদ্বুদ্ধ বা আগ্রহী হয় । রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব উদ্যান-পার্ক, পায়ে হাঁটার উপযোগী সড়ক, খেলা-ধুলার পরিবেশ উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রীড়াকে পাঠ্যক্রমে গুরুত্বসহকারে সংযোজন এবং পরীক্ষাগুলোতে পাসের জন্য ক্রীড়াভিত্তিক নাম্বার বাধ্যতামূলক করা জরুরী। সকল কর্মকান্ডে জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য পরিত্যাগ করতে হবে, আনুষ্ঠানিকতায় অথবা আনন্দে উৎসবেও স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। সকলকেই ডায়াবেটিস সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ধারণা দিতে হবে। গণমাধ্যমের সকল অংশকে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবদান রাখতে উৎসাহ দিতে হবে। যেহেতু ডায়াবেটিস হয়ে গেলে আজীবনই ডায়াবেটিস নিয়েই জীবনযাপন করতে হবে, তাই ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পাবার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি (সারা বিশ্ব তায়ই করছে) তা হলে সেটি বেশি ফলদায়ী হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন স্তরে ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাটাই জরুরি। একই সাথে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে ডায়াবেটিসের সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রীয়ভাবে করা উচিত।

(দ্য রিপোর্ট/এফএস/এপি/এনআই/নভেম্বর ১৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর