thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল 24, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ২১ শাওয়াল 1445

লিটন হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত : সংসদে এমপি-মন্ত্রীরা

২০১৭ জানুয়ারি ২২ ১৮:৪০:২৯
লিটন হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত : সংসদে এমপি-মন্ত্রীরা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : গাইবান্ধা-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জাতীয় সংসদের আলোচনায় এমপি ও মন্ত্রীরা অভিযোগ তুলেছেন। একইভাবে শিশু সৌরভকে গুলি করার ঘটনায় গণমাধ্যমের উপর ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা। এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এক নম্বর আসামি হিসেবে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।

রবিবার বিকেলে ১০ম জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের শুরুতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মনজুরুল ইসলাম লিটনসহ সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপিসহ সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুবরণকারী দেশি-বিদেশি বিশিষ্টজনদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনা জয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনের শুরুতেই শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য, হুইপ, চিফ হুইপ ও কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নেন।

ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, লিটনের হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিত। একটি শিশুকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় (গুলি) লিটনকে নিয়ে যেভাবে মিডিয়া লিখেছে.। আমরা মিডিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিলাম।আমি লিটনের স্ত্রীর কাছে শুনেছি। তিনি গিয়েছিলেন বাজারে মাছ কেনার জন্য। ওই এলাকাটি জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। তার উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ঘটনা ঘটেছিল। এরপর তার আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত নেওয়া হলো। আবেদন করেও তাকে আর সেটা দেওয়া হলো না। অস্ত্রটি পেলে হয়তো তার এ অকালমৃত্যু হতো না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, শিশু সৌরভকে গুলির অভিযোগে লিটনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ওই ঘটনা নিয়ে ইয়েলো জার্নালিজম হয়েছিল।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, আমরা সংসদ সদস্যরা একটা তামাসার বস্তুতে পরিণত হয়েছি। আমাদের (এমপি) সবসময় মানুষের মধ্যে থাকতে হয়। আমাদের সঙ্গে দেহরক্ষী থাকে না। আবার অস্ত্রের লাইসেন্সও দেওয়া হয় না। ৩০০ ভিআইপি আছেন। মন্ত্রী কয়জন আছেন। এমপিরা নেই তাতে। বাকিরা তাহলে কারা। আমাদের সঙ্গে পুলিশ নাই, লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নেই। অতীতে অনেকে এমপিদের মেরে পুরস্কৃত হয়েছে। এই লিটনকে যারা মেরেছে, ভবিষ্যতে যেন তারা পুরস্কৃত না হয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, লিটনের নির্বাচনের এলাকার কাঠামোর সাথে আমার এলাকার মিল আছে। লিটন জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকার। আমি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পড়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছি। সকলে মিলে জীবিত অবস্থায় লিটনকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়েছে। বিশেষ করে মিডিয়ায়। মাননীয় স্পিকার আপনি আগামীতে উদ্যোগী হবেন, একজন জনপ্রতিনিধিকে যেন নিরস্ত্র করা না হয়। যেনতেনভাবে যেন মামলা দেওয়া না হয়। গোলাম আযমের কর্মসূচি লিটন প্রতিরোধ করেছিলেন। এসবের সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, শিশু সৌরভকে গুলির ইস্যুতে লিটনের সুনাম ক্ষুণ্ন করেসারাদেশের মানুষের কাছে ভুল ম্যাসেজ দিয়ে তাকে হত্যার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গে আমরা বারবার মৌলবাদী চক্রের হামলার শিকার হয়েছি। সেই মৌলবাদী শক্তির বড় বাঁধা লিটনকে সরিয়ে দিয়েছে। আর যেন কাউকে হত্যার শিকার না হতে হয় সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমি শোক জানানোর জন্য এই পার্লামেন্টে দাঁড়াইনি। আমি তাকে (লিটন) চিনতাম না। সে আমাদের আদর্শের লড়াইয়ের কর্মী ছিল, তাই দাঁড়িয়েছি।

তিনি বলেন, এই হত্যার মূল নায়ক হচ্ছে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি। ১ নং আসামি বেগম খালেদা জিয়া। আপনাকে জবাব দিতে হবে, কেন তাকে হত্যা করা হলো। আপনার যখন ইচ্ছা গাড়ি পোড়ান, মানুষ হত্যা করেন। সুতরাং এখানে সাক্ষী প্রমাণের বিষয় নয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে গাইবান্ধায় চিরুনি অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, ওই হত্যার মূল কাঠামো হচ্ছে জামায়াত-শিবির। সুতরাং কোনো প্রমাণ লাগে না।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত লিটনের হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিত উল্লেখ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন,দুঃখ লাগে, অবাক লাগে-লিটন অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থায় রাজনীতি করেছেন। ওই এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। ২০১২-১৩ সালে জামায়াত-বিএনপি ওই এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।

লিটনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সে আমাকে বলেছে নিজেকে রক্ষার জন্যই আমি গুলি ছুড়েছিলাম। কিন্তু সেটা যে সৌরভের পায়ে লাগবে বুঝিনি। গণমাধ্যম সঠিক তথ্য তুলে ধরেনি সেদিন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, লিটন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। গোলাম আযমকে ওই এলাকায় মিটিং করতে দেননি। তার অকালমৃত্যুর জন্য আমরা মর্মাহত। গোয়েন্দা বাহিনী, পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। এ হত্যাকাণ্ডের মূলে কারা আছে, অবশ্যই আমরা বের করবো।

শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ মাহবুব আরা গিনি, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, মীর শওকত আলী বাদশাহ অংশ নেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/জানুয়ারি ২২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর