thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে 24, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১১ জিলকদ  1445

বিশ্বজিৎ হত্যার এক বছর, ঢাকায় ঘুরছে পলাতকরা

২০১৩ ডিসেম্বর ০৯ ২২:৫৬:৪০
বিশ্বজিৎ হত্যার এক বছর, ঢাকায় ঘুরছে পলাতকরা

এমন হরতাল-অবরোধের শহরে, ক্ষমতার হালুয়া-রুটির লড়াইয়ের বিপরীতে জীবিকার সন্ধানে বাইরে বেরিয়েছিল বিশ্বজিৎ দাস। কিন্তু পিকেটারদের ককটেল আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের হরতালবিরোধী মহড়ায় কর্মস্থলে যাওয়া হয়নি বিশ্বজিতের। প্রতিকারহীন অপ্রতিরোধ্য উন্মাদনায় এ তরুণের যাত্রা হয় শ্মশানঘাটে। দেশীয় অস্ত্রের পাশবিক মহড়ায় বিশ্বজিৎ বন্দি হন সেলুলয়েডের কালো ফিতায়। ককটেলের আঘাত থেকে বাঁচতে দৌড়াতে গিয়ে কলকাতার যীশুর মতই সমস্ত মানবিক বিবেককে থামিয়ে দিয়েছেন তিনি। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরুলেও হঠাৎ আক্রমণে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারেননি।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে শেষ পর্যন্ত বহুমাত্রিক চাপে মামলা করে রাষ্ট্রপক্ষ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২১ জনকে অভিযুক্ত করে চলতি বছরের ৫ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত ২ জুন তা গৃহীতও হয়। ১৮ ডিসেম্বর মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪।

অভিযুক্ত ২১ জনের মধ্যে বিভিন্ন সময় আটজনকে আটক করতে সমর্থ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রফিকুল ইসলাম শাকিল, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন ও এমদাদুল হক এমদাদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আটক অন্যরা হলেন সাইফুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, কাইউম মিয়া টিপু ও এইচ এম কিবরিয়া। তবে গণমাধ্যমে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হলেও ২১ আসামির ১৩ জনই আত্মগোপন করেন।

পলাতকরা হলেন- রাজন তালুকদার, খন্দকার মো. ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন ইমরান, আজিজুর রহমান আজিজ, মীর মো. নূরে আলম লিমন, আল-আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন।

পলাতকদের ঘনিষ্ঠজন ও বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বজিতের পলাতক খুনিরা ঢাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয়। এদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও ইমরান হোসেন ইমরান যাত্রাবাড়ীর একটি ভাড়া বাসায় একত্রে থাকেন। এর মধ্যে ইমরানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় সময়ই ঘুরতে দেখা যায়। কামরুল হাসান (ধান্ধা কামরুল) ও মনিরুল হক পাভেল ঢাকায় অবস্থান করছেন। শাহবাগ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় প্রায়ই একত্রে দুইজনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে কামরুল হাসান জবি শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক প্রভাবশালী নেতার পুরান ঢাকার বাসায় অবস্থান করছেন মোশারফ হোসেন। এদিকে রাজন তালুকদারের অবস্থান নিশ্চিত করা না গেলেও প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি সক্রিয় থাকেন। তবে রাজন ভারতে অবস্থান করছেন বলে শোনা গেছে। এছাড়াও খন্দকার মো. ইউনুস আলী, ওবায়দুল কাদের তাহসিন, মীর মো. নূরে আলম লিমন ও আলাউদ্দীন ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাদের ঘুরতে দেখা গেছে বলেও জানিয়েছেন তাদের পরিচিতরা। এদিকে তারেক বিন জোহর তমাল, আজিজুর রহমান আজিজ ও আল-আমীন শেখের অবস্থান জানা যায়নি। তবে তারেক বিন জোহর তমাল কুমিল্লা অঞ্চলে থাকতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে চার্জশিট দাখিলের শুরুতেই মামলাটি নিয়ে বিতর্ক ছিল। ভিডিও ফুটেজে বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে বেশ কয়েকজন কে দেখা গেলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পরপরই এরা আত্মগোপনে চলে গেলেও চার্জশিট দাখিলের পর সক্রিয় হয়ে ওঠে। এদের মধ্যে মামুনুর রশিদ মামুনকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বিএম মেহেদী হাসান বেপারীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়াও বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তৎপরতাও যথার্থ ছিল না। ২১ জনের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযোগ দায়ের করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩ দফায় মাত্র ১১ জনকে বহিষ্কার করে। এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার সাহা দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে যাদেরকে দোষী মনে করেছে তাদের বহিষ্কার করেছে।

এদিকে সোমবার বিশ্বজিতের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার মাশুরায় স্মরণসভা করেছে শোকাহতরা। ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়েই পলাতক আসামিরা রয়েছেন বলে তারা দাবি করেন। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন বিশ্বজিতের বড় ভাই উত্তম কুমার দাস।

এদিকে গত এক বছরেও বিশ্বজিৎ হত্যার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি জবি ছাত্রলীগ। হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা ছাত্রলীগের কর্মী নয় বলে দাবি করা হলেও মূলত এরাই ছিল ছাত্রলীগের হর্তাকর্তা। তারা আত্মগোপনে চলে গেলে কর্মীশূন্যতায় ক্রমাগত নিঃস্ব হয়ে গেছে সংগঠনটি। প্রথমদিকে কর্মী সঙ্কট তীব্র হওয়ায় দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনের সাড়ে ৮ মাস পর ১৮ জুলাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে সংগঠনটি। বহিষ্কৃত ও বিতর্কিতদের দিয়ে গঠিত কমিটি দূর করতে পারেনি সাংগঠনিক দুর্বলতা। বরং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শতাধিক কর্মী ছাত্রদলে যোগ দেয়। ১৯৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকলেও বর্তমানে দলীয় কর্মসূচিতে অর্ধশত নেতাকর্মী দেখা যায় না। বর্তমানে কর্মীসঙ্কট দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মৌখিকভাবে পদ দিয়ে কর্মীদের কাছে টানছেন বলে একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন। বর্তমানে অর্ধ-শতাধিক মৌখিক পদপ্রাপ্ত নেতা আছেন বলেও জানা গেছে।

(দ্য রিপোর্ট/এলআরএস/নূরু/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর