thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

বহলা ট্রাজেডি

২০১৩ ডিসেম্বর ১৩ ০৬:৪১:৪৪
বহলা ট্রাজেডি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর; হানাদারমুক্ত হয় বগুড়া শহর। এছাড়া, এই দিনে মুক্ত হয় মানিকগঞ্জ ও উল্লাপাড়া। তবে দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে দিনাজপুরের বহলা ট্রাজেডির কারণে।

৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় বিরলগামী একটি ট্রেনে বহলা গ্রাম থেকে মুক্তিসেনারা রকেট সেল নিক্ষেপ করে। ওই ট্রেনে থাকা পাক হানাদার বাহিনী ক্ষুব্ধ হয়। এর পরই পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বহলা গ্রামে প্রবেশ করে ৪২ জন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মারাত্মক আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান ৭ জন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলে মানুষ গ্রামে ফিরে এসে একটি বড় গর্তের মধ্যে ৪২ জন শহীদের লাশ মাটি চাপা দেয়।

বগুড়া মুক্ত দিবস : ১৩ ডিসেম্বরের আগে ১০ ডিসেম্বর থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর টানা লড়াই চলে। আকাশে মিত্র বাহিনীর বোমারু বিমান, মাটিতে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর অভিযান। দিশেহারা পাকহানাদার বাহিনী একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

২৮ নভেম্বর শনিবার সারিয়াকান্দী থানা প্রথম হানাদার বাহিনী মুক্ত হওয়ার পর একে একে বগুড়ার সোনাতলা, গাবতলী, শিবগঞ্জ, ধুনট, শেরপুর মুক্ত হয়। এরপর ১৩ ডিসেম্বর এক সঙ্গে বগুড়া সদর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া থানা মুক্ত হয়। আদমদীঘি ১৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় (তথ্যঃ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ)।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার অ্যাড. রেজাউল করিম মন্টু ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আমিনুল ইসলাম পিন্টু জানান, ১০ ডিসেম্বর ভোর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বগুড়াকে শত্রু মুক্ত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এজন্য তারা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নওদাপাড়া, চাঁদপুর ও ঠেঙ্গামারা এলাকায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেন। পরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ৬৪ মাউন্টেন্ট রেজিমেন্টের বিগ্রেড কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংহের নেতৃত্বে ট্যাংক নিয়ে তারা শহরের দিকে এগুতে থাকে। ওইসব এলাকার অসংখ্য যুবকও সেদিন তাদের সঙ্গে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এদিকে ২৮ নভেম্বর বগুড়ার সারিয়াকান্দী থানা প্রথম হানাদার বাহিনী মুক্ত হওয়ার পর একে একে সোনাতলা, গাবতলী, শিবগঞ্জ, ধুনট ও শেরপুরকে হানাদার মুক্ত করে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা অগ্রসর হতে থাকে শহর অভিমুখে।

১৩ ডিসেম্বর সকালে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু হয় পাক বাহিনীর ওপরে। শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাক বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। তীব্র আক্রমণের মুখে পাক বাহিনী পিছু হটে। পরে ওইদিন দুপুরে ফুলবাড়ী সংলগ্ন শহরের বৃন্দাবন পাড়া এলাকায় পাক বাহিনীর প্রায় ৭০০ সৈন্য আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।

তাদেরকে বন্দী করে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ে মিত্র বাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়। একইদিন অন্যান্য অংশের পাকবাহিনী বগুড়া পৌর পার্কে আশ্রয় নিলে সেখানেও আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনী। পরে পৌর পার্ক থেকে পাক বাহিনীর ১৩৭ জনকে আহত অবস্থায় আটক করেন মুক্তিবাহিনী। সেখানে ৩৭ জন পাক সেনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরে ওই রাতেই সম্মিলিত ভাবে বগুড়া পুলিশ লাইনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয় পাক বাহিনীকে। একই দিন বগুড়া শহর ছাড়াও কাহালু, নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া থানা হানাদার মুক্ত হয়।

১৩ ডিসেম্বর রাতের পর থেকে বুক ভরা শ্বাস ফেলে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ। হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আল বদর, আল সামস ও মুসলিম লীগের পাণ্ডারা বগুড়ার বিভিন্ন গ্রামে আত্মগোপন করে। ১৬ ডিসেম্বরের পর টানা ২ বছর আত্মগোপনে থাকার পর ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে তারা।

মানিকগঞ্জ মুক্ত দিবস : আজ মানিকগঞ্জ মুক্ত দিবস। ঘিওরের তেরশ্রী গ্রামে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী হামলা চালিয়ে হত্যা করে ৪৩ জন গ্রামবাসীকে। এদিকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে পাক সেনারা মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পিছিয়ে আসতে শুরু করে। ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় পাক বাহিনী মানিকগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

উল্লাপাড়া মুক্ত দিবস : আজ উল্লাপাড়া মুক্ত দিবস। এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা উল্লাপাড়া শহরের ৩ দিক ঘিরে ফেলে পাকবাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ করে। পাকিস্তানি বাহিনী দুপুরে হামিদা বালিকা বিদ্যালয়ে অবস্থিত তাদের অস্ত্র গুদামে আগুন দিয়ে নগরবাড়ির দিকে পালিয়ে যায়।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচ/রা/এমএআর/ডিসেম্বর ১৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিজয়ের মাস এর সর্বশেষ খবর

বিজয়ের মাস - এর সব খবর