thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

ঢালাও প্রচারণার দায় কৃষকের!

২০১৪ জানুয়ারি ১৫ ১৬:২৯:০২
ঢালাও প্রচারণার দায় কৃষকের!

মতিনুজ্জামান মিটু, দ্য রিপোর্ট : ক্ষতিকর মাত্রায় বিষ আছে। কল্পিত এমন ধারণার আলোকে শরিয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার এক ভ্রাম্যমান আদালত কৃষকদের ১২ শ’ কেজি টমেটো পুড়িয়ে নষ্ট করেছে। কোনো রকমের প্রাক পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াই ঢালাও এই অভিযানের ব্যাপারে এলাকার কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক, হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

বিরূপ এই পরিস্থিতির মুখে পড়ে সেখানকার অনেক কৃষক সবজি চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই গ্রামবাসী জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহলেও।

২৩ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার জয়রামপুরের মোল্যাকান্দিতে ওই অভিযান পরিচালিত হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ মাহামুদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের একটি পুলিশ দল খড়কুটো জ্বালিয়ে টমেটো পুড়িয়ে নষ্ট করে।

এতে এলাকার কৃষক সালাম হাওলাদার, ম. শওকত আলী ও ম. খোকনের ৩০ মণ টমেটো বিনষ্ট হয়। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে জাজিরার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ম. হাবিবুর রহমান বলেন, ভেজালবিরোধী নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসাবে প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত টমেটো পুড়িয়ে নষ্ট করেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নাম ও ঠিকানা জানাতে না পারলেও তিনি বলেছেন, এতে কৃষকদের ৮/১০ মণ টমেটো নষ্ট হয়েছে।

কৃষিবিদ হাবিব আরও জানান, আনারস, আখ ও তুলায় ব্যবহৃত হয় এমন রাইপেন হরমোন স্প্রে করার অভিযোগে টমেটো পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়।

নষ্ট করার আগে বা পরে ক্ষতিগ্রস্ত ওই টমেটোর কোন নমুনা পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। তবে ওই অভিযানের পরে ৮ জানুয়ারি কৌতুহলবশত এলাকার অন্য এক কৃষকের জমির গাছ থেকে সংগ্রহ করে টমেটোর নমুনা পরীক্ষার জন্য জয়দেবপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের ল্যাবরেটরীতে পাঠিয়েছিলাম।

ক্ষতিগ্রস্ত টমেটোতে যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ছিলো তার প্রমাণ কি? এ প্রশ্নের জবাবে ম. হাবিবুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত টমেটোর পাশে রাইপেন হরমোনের যে প্যাকেট পড়ে ছিলো তা আনারস, আখ ও তুলায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এদিকে ৯ জানুয়ারি বারী’র কীটতত্ত্ব বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. সৈয়দ নুরুল আলম স্বাক্ষরিত বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে জানা যায়, জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ম. হাবিবের পাঠানো টমেটোর নমুনায় রাইপেন হরমোন ইথিফোনের মাত্রা ছিলো দশমিক ৯৮৮ পিপিএম। যা সর্বোচ্চ মাত্রা (এমআরএল-ম্যাক্সিমাম রিডিউস লিমিট) ২ পিপিএম থেকে কম।

কীটতত্ত্ব বিভাগের পেস্টিসাইড এনালাইটিক্যাল ল্যাবরেটরী ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ম. আরিফুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, আজকাল হরহামেশা যারা যে ব্যাপারে অভিজ্ঞ নয় তারা সে ব্যাপারে মন্তব্য করে বসেন। ইতিহাসের ছাত্র প্রযুক্তির বিশেষজ্ঞ হয়ে বসেছেন। আজকাল তাদেরই জয়জয়কার। একজনতো কৃষির সবচেয়ে বড় বিশেষজ্ঞ হয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ বিদেশ মাতিয়ে তুলছেন। না জেনে না বুঝে ঢালাও প্রচারণা ও মন্তব্যের কারণে কৃষি উন্নয়ণ কাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। যার অপরিনামদর্শী ফল হয়তো জাতিকে একদিন ভোগ করতে হবে।

তিনি বলেন, ১১ জানুয়ারি রাতে একটি টিভি চ্যানেলে জাজিরা প্রশাসনের ওই টমেটো নষ্ট করার ওপর ভিত্তি করে প্রচারিত ফলো আপ প্রতিবেদনটি আমি দেখেছি। ড. আরিফ বলেন, সরকারি পক্ষ থেকে অ্যাকশনে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

জাজিরার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজার থেকে রাসায়নিক কিনে এনে কৃষকরা সবজি ও ফসলে স্প্রে করেন। তারা ওই রাসায়নিক চুরি করে এনে ব্যবহার করেন না। পাকানোর জন্য আমাদের দেশের কৃষকরা যে রাইপেন হরমোন ব্যবহার করছেন তা বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। এই হরমোন আমাদের দেশে তৈরী হয়না, বৈধভাবে আমদারি করেই দেশে বাজারজাত করা হয়। সেই বাজার থেকে কিনে এনেই কৃষক এটি ব্যবহার করেন। কিন্তু তাদেরকে কেনো অযথা হয়রানী ও ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়।

এ ব্যাপারে ওই অভিযানের নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ মাহমুদ সেল ফোনে দ্য রিপোর্টকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমাদের টিমে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাও ছিলেন।

বুধবারে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শরিয়তপুর জেলার উপ পরিচালক কৃষিবিদ ম. মনসুর রহমান মিটিং এর কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। একই দিন পরে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও তার আর সাড়া মেলেনি।

(দ্য রিপোর্ট/এম/এসবি/আরকে/জানুয়ারি ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ফিচার এর সর্বশেষ খবর

ফিচার - এর সব খবর