thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

চেয়ারম্যানবিহীন অচলাবস্থায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচার কাজ

২০১৪ জানুয়ারি ১৯ ২১:১৭:৪৮
চেয়ারম্যানবিহীন অচলাবস্থায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচার কাজ

এস এম সাকিল আহমেদ, দ্য রিপোর্ট : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ৩১ ডিসেম্বর বয়সোত্তীর্ণ হওয়ায় চাকরি থেকে অবসরে গেছেন।

এরপর ২০ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি এ ট্রাইব্যুনালে। যার কারণে আদালতের অপর দুই সদস্য চেয়ারম্যানবিহীন কোনো মামলার শুনানি করতে পারছেন না। শুনানির জন্য কোনো মামলার দিন ধার্য থাকলেও তা চেম্বারে বসে অর্ডার পাস করে শুনানির দিন পরিবর্তন করে দিচ্ছেন।

বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল-১ এ চারটি মামলা বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। চেয়ারম্যান মামলা পরিচালনায় মূল দায়িত্ব পালন করেন। তাই চেয়ারম্যান না থাকায় জামায়াত নেতা আজহার ও বিএনপি নেতা পলাতক খোকনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য থাকলেও সদস্য বিচারপতিরা চেম্বারে বসেই তারিখ পিছিয়ে নতুন দিন ধার্য করেছেন। আর আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখও কয়েক দফা পিছানো হয়েছে।

অনেকটাই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ট্র্রাইব্যুনালের বিচার কাজ পরিচালনায়। মুখ থুবড়ে পড়ছে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি।

ট্রাইব্যুনাল-১ গঠনের প্রায় চার বছর অতিক্রান্ত সময়ে রায় প্রদান করেছে তিনটি। অপরদিকে, প্রায় এক বছর পরে গঠিত হয়েও নয়টি রায় প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল-২।

এদিকে, জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলাটি ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। অবসরে যাওয়ার আগেই সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির নিজামীর রায় দিয়ে যাবেন বলে মনে করেছিলেন প্রসিকিউটরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু তিনি রায় প্রদানের পূর্বেই অবসর গ্রহণ করেছেন। ফলে, দুই মাস পার হয়ে গেলেও ঝুঁলে আছে নিজামীর মামলাটি।

একইসঙ্গে নতুন কোনো বিচারপতি যদি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সে ক্ষেত্রে নিজামীর মামলায় আবার নতুন করে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) হতে পারে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নিজামীর রায়ের জন্য অপেক্ষা করা লাগতে পারে আরও কয়েক মাস। বিচারপতি পরিবর্তন হলে নতুন করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের বিধান আছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, নতুন চেয়ারম্যান আসলে নিজামীর মামলায় নতুন করে আর্গুমেন্ট হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন ও আসামি উভয়পক্ষের আর্গুমেন্ট শেষ হওয়ার পর নতুন করে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হবে এ মামলাটি। এরপর রায় ঘোষণা করা হবে।

বিচারপতি পরিবর্তন হলে আর্গুমেন্ট নতুন করে শুনানি করা হয়, তা মাওলানা সাঈদীর মামলায় দেখা গেছে।

১১ জানুয়ারি বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি কথোপকথন প্রকাশ হওয়ায় চেয়ারমানের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীরকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান করে পুনর্গঠন করা হয়। এরপর সাঈদীর মামলায় নতুন করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছিল বিচারপতি ফজলে কবির সম্বলিত ট্রাইব্যুনাল-১ এ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিচারপতি নিয়োগ না দেওয়ায় বিচার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন অবহেলা করা হচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছি না। দ্রুত এ বিষয়ের সমাধান করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তুরিন বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সব ক্ষেত্রে উপরে দেখা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে না।

বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের গাফলতি আছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের উদাসীনতা ও অবহেলা রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে গুরুত্ব না দেওয়াটা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন এ প্রসিকিউটর।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, এ সবকিছু সরকারের ব্যাপার। বিচারপতি না থাকায় বিচারকাজ বিঘ্নিত হবে এটা তো স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারের পুরোটাই সরকারের ইচ্ছাধীন। তারা যখন প্রয়োজন মনে করছেন, তখন দ্রুত বিচার করছেন। আবার যখন মনে করছেন, তখন ধীরগতিতে কাজ চালাচ্ছেন।

নতুন বিচারপতিকে নিয়োগ দিতে বিলম্ব করাটা সরকারের পরিকল্পনার একটি অংশ বলেও মন্তব্য করেন এ আইনজীবী।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এসবি/সা/জানুয়ারি ১৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর