thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন আফ্রিকানরা

২০১৪ জানুয়ারি ২২ ২২:১৭:৩৭
অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন আফ্রিকানরা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন আফ্রিকানরা। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে এবং পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছেন তারা।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাল ডলার তৈরি, মাদক ও আদম পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়ছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের এই প্রবণতা বাড়ছে বলে জানান গোয়েন্দারা।

সর্বশেষ মঙ্গলবার মধ্য রাতে গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুল আলমের নেতৃত্বে অবৈধ মাদক উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিম উত্তরা এলাকা থেকে জাল ডলার তৈরির সরঞ্জামসহ তিন আফ্রিকানকে আটক করে।

তারা হলেন, পেরেজ ওয়াই পেরেজ এফরেইন (৩৭), সেন কারাইন নাট্টি (৩৬) ও মেকো সেনডিও নাথাইল লরেল (২১)। তাদের মধ্যে এফরেইন গুয়েতেমালার নাগরিক এবং নাট্টি ও লরেল ক্যামেরুনের নাগরিক।

তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় US DEPARTMENT OF TRESARY 100 NOTES S 50,000.00 লেখা জাল ডলার তৈরির ৩০ বান্ডিল কালো পেপার, ডলার তৈরির নির্দেশিকা এবং সাদা বোতলে ১০০ এমএল সাদা তরল পদার্থ।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে ইন্টারপোল বাংলাদেশে জাল ডলার তৈরির একটি নির্দেশিকা পাঠায়। সেই সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীতে কাজ শুরু করে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় তারা। অভিযানে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ৪৪ নম্বর বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সূত্র জানায়, গত এক বছরে শতাধিক আফ্রিকানকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। অপরাধ করে সহজে পার পেয়ে যায় এই ধারণা থেকেই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে চক্রগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে টুরিস্ট ভিসায়। এরপর তারা পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলে অথবা গায়েব করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলার কারণ হিসেবে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, পাসপোর্ট না থাকলে তারা কোন দেশের নাগরিক তার বৈধ কোন কাগজপত্র থাকে না। এ কারণেই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় না।

মূলত অপরাধী চক্রগুলো ‘অনারেবল’ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। কারণ এ ভিসায় আসতে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসকে অবহিত করতে হয় না। ‘অনারেবল’ ভিসার এই সুবিধার কারণে যাচাই-বাছাই করে ভিসা দেওয়ার তেমন সুযোগ থাকে না। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ সুবিধা থাকার কারণে সহজেই টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসতে পারে তারা। আর এই সুযোগটাই গ্রহণ করে তারা বাংলাদেশে এসে অপরাধ করে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ডলার ছাড়াও মাদক চোরাচালানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দেশিয় চক্রের সহায়তায় এ সব অপরাধ সংঘটিত করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারী সেজেও বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা করে বাংলাদেশে আসছে অনেক অপরাধী। এ ছাড়া ল্যান্ড লর্ড পরিচয়ে তারা এ দেশের ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অর্থ লেনদেন করছে। এরপর এক পর্যায়ে অর্থ নিয়ে পালিয়ে যাচ্চে তারা। এদিকে আদম পাচারে সক্রিয় আছে আফ্রিকান বেশ কয়েকটি চক্র। তারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এ দেশিয় অপরাধীদের সহায়তায় সাধারণ মানুষকে আফ্রিকায় পাচার করছে বলেও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

আফ্রিকানদের পাশাপাশি পাকিস্তান থেকে আসা টুরিস্টরাও জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ১৯ জানুয়ারি মেহমুদ, ওসমান ও ফকরুল হাসান নামে তেহরিক-ই-তালিবান অব পাকিস্তানের তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সব অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকে দেশিয় অনেক এজেন্ট। তবে অনেক ক্ষেত্রে এজেন্ট ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে বেশ কিছু চক্র।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে টুরিস্টদের স্বাগত জানানো হয়। কোনও টুরিস্ট অপরাধী কিনা তা যাচাই-বাছাই করার ক্ষেত্রেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। সঠিক তথ্যের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে নজরদারি করাও সম্ভব হয় না। অন্যদিকে পাসপোর্ট জটিলতার কারণে অপরাধীদের ফেরত পাঠানো যায় না। এতে অপরাধীরা এ দেশেই থেকে যাচ্ছে এবং পুনরায় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময় বিদেশি অপরাধীদের আটক করা হলেও তারা জামিনে মুক্ত হয়ে একই অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশ এ ক্ষেত্রে নজরদারি করছে।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচএ/এমএআর/জানুয়ারি ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর