thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

তিন প্রজাতির ফড়িং শনাক্ত

২০১৪ জানুয়ারি ২৬ ১৯:৪১:৫০
তিন প্রজাতির ফড়িং শনাক্ত

আব্দুল্লাহ শুভ, দ্য রিপোর্ট : ফড়িং অতিক্ষুদ্র জীব। সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যে তার তুলনা নেই। ১৪টি গোত্রের প্রায় ৫৬৮০ প্রজাতির ফড়িং শনাক্তকরণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হল আরও তিনটি প্রজাতি।

সেই তিন প্রজাতি শনাক্ত করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। এর আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফড়িং নিয়ে পাঁচ বছর গবেষণা করে ৪০ প্রজাতির ফড়িং শনাক্ত করেন তিনি।

নতুন তিন প্রজাতির একটি হল লেস্টিডি (Lestidae) গোত্রের ইমারাল্ড স্প্রেড উইং (Emerald Spread wing)- যার বৈজ্ঞানিত নাম লেস্টেস ইলাটাস (Lestes elatus)। এদের মৌলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনা জেলায় দেখা যায়। এ প্রজাতিকে পানির ট্যাঙ্কে, পুকুর এবং অন্য জলাশয়ে প্রচুর দেখা যায়। এরা সাধারণত গাছে ডানা মেলে বসে। কম উড়তে পারলেও ধরা কঠিন। অতি সতর্ক এই ফড়িংকে সারাবছর দেখা যায়। তবে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঘাসে এদের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।

আরেকটি প্রজাতি হল প্লাটিকনেমিডিডি (Platycnemididae) গোত্রের ব্রাউন বুশ ডার্ট (Brown Bush Dart)। এর বৈজ্ঞানিক নাম কোপেরা কান্টাবুরি (Copera chantaburii)। সাধারণত মৌলভীবাজার, বান্দরবানের পাহাড়ী জলাশয়ে সারাবছরই এদের দেখা মেলে। বৃষ্টির জমে থাকা পানি কিংবা স্রোতহীন অগভীর জলাশয়ে এদের জন্ম।

সর্বশেষটি কমন বুশ ডার্ট (Common Bush Dart) গ্রোত্রের। যার বৈজ্ঞানিক নাম কোপেরা সিলিয়াটা (Copera ciliate)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও মৌলভীবাজার জেলার পুকুর, ড্রেন, নর্দমায় প্রায়শ এদের দেখা মেলে। বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি কিংবা স্রোতহীন অগভীর জলাশয়ে এদের জন্ম। সারাবছরই দেখা গেলেও জুন-অক্টোবর মাসে বেশি দেখা যায়।

ফড়িংয়ের জন্ম পানিতে। পূর্ণাঙ্গ ফড়িং পানিতে ডিম পাড়ে এবং সেখানেই এর বাচ্চা (নিম্ফ) বড় হয়। পূর্ণাঙ্গ হয়ে ফড়িং পানি থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ ফড়িংদের সাধারণত পানির কাছাকাছি থাকতে দেখা যায়। প্রজাতি ভেদে এরা ২৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে।

ফড়িংয়ের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। পূর্ণাঙ্গ ফড়িং এবং বাচ্চা উভয়ই মানুষের জন্য উপকারী। এরা উড়তে উড়তেই শিকার করে। নানা ধরনের ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বাচ্চা ফড়িং পানির বিভিন্ন ধরনের পোকা বিশেষ করে মশার লার্ভা খেয়ে মশা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘থাইল্যান্ডে ডেঙ্গু মশা দমনে ফড়িং সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফসলের ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পোকা দমনে ফড়িং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’

ইদানীং এই উপকারী পতঙ্গ হুমকির মুখে পড়েছে। এর মূল কারণ কলকারখানা, বাসা বাড়ির বর্জ্য, ফসলের ক্ষেতে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক। একটি অঞ্চলের পরিবেশ কতটুকু ভালো তা এই পতঙ্গের সংখ্যা দিয়ে ধারণা করা যায়। যে অঞ্চলে এই পতঙ্গ বেশি সেই অঞ্চলের পরিবেশ তত ভালো। এ ছাড়া সৌন্দর্যের কারণে প্রজাপতি ও পাখির মতো ফড়িংও বিভিন্ন দেশে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। সৌন্দর্যের কারণে ফড়িং জাপানি শিল্পকলার একটি জনপ্রিয় বিষয়। তা ছাড়া ফড়িং বৈজ্ঞানিক গবেষণারও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

এ প্রসঙ্গে ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে ফড়িং দেখা যেত এবং ১০০ এর অধিক প্রজাতির ফড়িং ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর সংখ্যা ও প্রজাতি অনেক কমে গেছে।’ তাই তিনি প্রকৃতির এই গুরুত্বপূর্ণ পতঙ্গকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/ডব্লিউএস/এনডিএন/সা/জানুয়ারি ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ফিচার এর সর্বশেষ খবর

ফিচার - এর সব খবর