thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘প্রান্তিক পাঠকের কাছে বই পৌঁছানোর আগে দরকার প্রান্তিকতা ঘোঁচানো’

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০১ ১৬:৫৫:৫৫
‘প্রান্তিক পাঠকের কাছে বই পৌঁছানোর আগে দরকার প্রান্তিকতা ঘোঁচানো’

রায়হান রাইন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক। গল্প, উপন্যাস ও কবিতার মত সৃজনশীল লেখালেখির পাশাপাশি গবেষণা ও অনুবাদে তার খ্যাতি রয়েছে। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়াহিদ সুজন

এবার কী কী বই আসছে? কোন প্রকাশনী বের করছে?

এবার মেলায় আসছে দুটি বই। একটি ছোটগল্পের বই আরেকটি উপন্যাস। গল্পগ্রন্থটি করছে ভাষাচিত্র আর উপন্যাস প্রথমা প্রকাশন।

বই দুটি সম্পর্কে বলুন?

গল্পগ্রন্থটির নাম ‍'স্বপ্নের আমি ও অন্যরা'। এই গল্পগ্রন্থের গল্পগুলো স্বপ্নের আঙ্গিকে লেখা। কেউ যখন স্বপ্ন বর্ণনা করে তখন কিন্তু গল্পটা সে বানাতে থাকে। এই নির্মাণে ভূমিকা রাখে কিছু ইমেজ। সবগুলো গল্পই স্বপ্ন দেখতে থাকা ‘আমি’কে ঘিরে। সঙ্গে আছে অন্যরা যারা ‘আমি’কে প্রক্ষেপ করে। ব্যক্তির সত্তার গভীরে থাকা তার অনিবার্য অনুষঙ্গগুলো এই সব গল্পে এসেছে স্বপ্নপ্রতীকের মুখোশ পরে।

উপন্যাসের নাম 'আগুন ও ছায়া'। এর কাহিনীটি বর্ণনা করে জাভেদ কায়সার নামে একটি চরিত্র। উপন্যাসজুড়ে আছে নানা আখ্যান-উপাখ্যান। বিষয় হিসেবে আছে যৌন-রাজনীতি, চরিত্রগুলোর নানামুখী লড়াই, তাদের সঙ্কট ও দহন; আছে জরুরি অবস্থা, ক্রমাগতভাবে বদলে যেতে থাকা মানুষের ছায়াশরীর, সাইবার যৌনতার কিছু দিক।

বইকে কীভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করেন?

প্রথমত, পাঠকের কাছে বই প্রকাশের খবরটি পৌঁছাতে হবে। এমনভাবে যেন তারা বইটির গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন। মানে, বইটি পড়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে আগ্রহের জন্ম হয়। এই কাজে শুধু প্রকাশক নয়, সরকারও ব্যবস্থা নিতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং একই সঙ্গে বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র এই সব প্রতিষ্ঠানও এতে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রকাশকদের কেবল বুক রিভিউয়ের ওপর ভরসা না করে বিজ্ঞাপন প্রকাশের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে।

দ্বিতীয়ত, অনলাইন বুক শপিংয়ের কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে গ্রামে বসেই অনলাইনে বইয়ের বায়না করে যে কেউ কুরিয়ারে বই-পুস্তক কিনতে পারে।

তৃতীয়ত, প্রান্তিক পর্যায়ের প্রান্তিক পাঠকদের জন্য বইয়ের সুলভ সংস্করণ দরকার। অন্যথায় সরকার তাদের প্রান্তিকতা তথা দরিদ্রতা ঘুচাবার ব্যবস্থা নিতে পারে।

মূলকথা হলো যতদিন না গরিবদের গরিবী না দূর হচ্ছে ততদিন তাদের জন্য সুলভে বই পাবার ব্যবস্থা থাকতে পারে। কারণ যে শ্রমিক সারা মাসের বেতন পান সাড়ে পাঁচটি ইলিশের দামের সমান তিনি নিজের বা সন্তানের জন্য বই কিভাবে কিনবেন? দরিদ্র মানুষের কাছে বই পৌঁছানোর প্রধান উপায়টি আসলে তার গরিবী ঘোঁচানো।

চতুর্থত, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রান্তিক পর্যায়ে লাইব্রেরি স্থাপন করে বইপুস্তক পৌঁছানো যেতে পারে।

মেলায় বই কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বলুন?

পরিকল্পনা এখনো করিনি। তবে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘যার যা ধর্ম’-এর নতুন সংস্করণটা কিনতে হবে। কিনব মোহাম্মদ রফিক, মাসুদ খান, মুজিব মেহদী, মজনু শাহ, তানিম কবির, জুয়েল মাজহার, জিনাত জাহান খান, নওশাদ জামিলসহ আরও অনেকের কবিতার বই। শাহবাগ গণজাগরণ নিয়ে লেখা শাহাদুজ্জামানের বইটাও কিনতে চাই। আসলে অনেক বইয়ের খবর তো জানিই না এখনো। কিনতে হবে আরও কিছু জরুরি বই।

বই মেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন

সম্প্রসারণটা জরুরি ছিল। কারণ প্রকাশকদের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে ক্রেতা-সাধারণ। অন্যদিকে মেলার জায়গা গেছে কমে। লেকের পশ্চিম পাশে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের জায়গাটা তো গায়েব হয়ে গেছে। মেলার মূল কেন্দ্রটা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রেখে মেলার সম্প্রসারণে তো অসুবিধা নাই। আর একুশের চেতনা তো কোনো স্থানিক ব্যাপার না, যে একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে মেলার বিস্তার লাভে তা কমে যাবে!

লেখালেখির ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী।

পরিকল্পনা বলতে, আগামীতে কী লিখতে যাচ্ছি তাই তো? কবিতা তো পরিকল্পনা করে লেখা হয় না। এটা লেখা হতে থাকে। আর উপন্যাসের একটা থিম আছে। তার স্টোরি লাইন নিয়ে ভাবছি, কখনো লেখা হয়ে উঠবে। পছন্দের লেখা অনুবাদ করি কখনো কখনো। অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান ও শান্তরক্ষিতের রচনাবলী বাংলায় অনুবাদের কাজ করছিলাম। এরা বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও বাংলায় লেখেননি। লিখছেন সংস্কৃতে। সে সব রচনা ইংরেজিতে হলেও বাংলায় অনূদিত হয়নি।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অমর একুশে গ্রন্থমেলা এর সর্বশেষ খবর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা - এর সব খবর