thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ৪ মে 24, ২১ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৫ শাওয়াল 1445

আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ

বীমা দাবির টাকা দিচ্ছে না বায়রা লাইফ

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ১৩ ২০:৩৪:৪৬
বীমা দাবির টাকা দিচ্ছে না বায়রা লাইফ

গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা পরিশোধে নানা টালবাহানা করছে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটিতে দিনের পর দিন ধরনা দিয়ে বীমা দাবির টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়ে ইতোমধ্যেই ৭৫ জন গ্র্রাহক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এদিকে আইডিআরএ’র কাছে গ্রাহকরা অভিযোগ করলেও কোম্পানির কাছে গ্রাহকের কোনো অভিযোগ নেই বলে দাবি করেছেন বায়রা লাইফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম। একই সঙ্গে অভিযোগ সঠিক নয় এবং তারা নিয়মিত গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অধিক মুনাফা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বায়রা লাইফের প্রতিনিধিরা (বীমা এজেন্ট) বীমা পলিসি বিক্রি করেন। কিন্তু মেয়াদ শেষে মুনাফা তো দূরের কথা কোম্পানিতে যে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে সে টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

আইডিআরএ’র কাছে লিখিত অভিযোগকারীদের একজন হচ্ছেন রংপুর বিভাগের লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার বাসিন্দা মো. মোসলেউদ্দীন। তিনি তার লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘আমি বায়রা লাইফের রংপুর সার্ভিসিং সেলের মাধ্যমে হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চ থেকে বীমা পলিসি (নম্বর- ৪৪-০০০৯০১) করেছি। কিন্তু বীমা পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও আমাকে দাবির টাকা দেওয়া হয়নি।’

একই ব্রাঞ্চ থেকে আরও ‘শতাধিক গ্রাহক বীমা পলিসি কিনেছেন’ উল্লেখ করে মো. মোসলেউদ্দীন অভিযোগে আরও লিখেছেন, ‘বায়রা লাইফ থেকে বীমা পলিসি ক্রয় করা শতাধিক গ্রাহকের পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এদের অনেকে নির্বাহী রশিদ পেয়েছেন। কিন্তু কোনো গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করা হয়নি।’

এমতাবস্থায় বীমা দাবির টাকা আদায়ে বায়রা লাইফের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইডিআরএ’র কাছে আবেদন জানিয়েছেন মোসলেউদ্দীন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে মোসলেউদ্দীন বলেন, ‘বীমা করার সময় বায়রা লাইফের প্রতিনিধি বলেছিলেন যে, মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ দ্বিগুণ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোম্পানি থেকে কোনো টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে আইডিআরএ-র কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আমাদের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করা হয়নি।’

বীমা দাবির টাকা না পাওয়া আরেক গ্রাহক মো. কলিম উদ্দিন জানিয়েছেন, তার বীমা পলিসির নম্বর ৪৪-০০০৯২১। তার পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২ বছর আগে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বায়লা লাইফ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেড় বছর ধরে নানাভাবে হয়রানি করছে তারা। এ জন্য বাধ্য হয়ে আইডিআরএ’র কাছে দুই দফা লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এরপরও তার কোনো সুফল মিলেনি।

মো. কলিম উদ্দিন আইডিআরএ’র কাছে লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আমি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মঙ্গা ও নদী ভাঙন এলাকার গরিব মানুষ। কষ্টের টাকা দিয়ে সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে বায়রা লাইফ থেকে ছোট পলিসি গ্রহণ করি। কিন্তু পলিসির মেয়াদ দুই বছর আগে পূর্ণ হলেও বায়লা লাইফ থেকে দাবির টাকা দেওয়া হচ্ছে না।’

গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বায়রা লাইফের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা দিচ্ছি না— এমন অভিযোগ ঠিক না। নিয়মিত গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। আমাদের কাছে দাবির টাকা না পেয়ে কোনো গ্রাহক অভিযোগ করেনি।’

এ সময় দ্য রিপোর্টের কাছে বীমা দাবির টাকা না পাওয়া ৭৫ জন গ্রাহকের লিখিত অভিযোগ আছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে থাকলে থাকতে পারে। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই। তারপরও কোনো গ্রাহক কোম্পানিতে অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

এদিকে ‘নিয়মিত গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে’ বলে বায়রা লাইফের সিইও শফিকুল ইসলাম দাবি করলেও প্রতিষ্ঠানটির নভেম্বর মাসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ মাসে উত্থাপিত বীমা দাবির সংখ্যা ছিল ৬১৩টি। এরমধ্যে ৫৮৭ জনেরই বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করেনি বায়রা লাইফ। অর্থাৎ এ হিসাব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি উত্থাপিত বীমা দাবির মধ্যে ৯৬ শতাংশ গ্রাহকের দাবির টাকা পরিশোধ করেনি।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে গ্রাহক হয়রানি করার কারণে বায়রা লাইফের প্রিমিয়াম আয়ও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রথমবর্ষ প্রিমিয়াম আয় হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যা ২০১৪ সালে ছিল মাত্র ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর ২০১৩ সালে ছিল ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০১২ সালে ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অথচ ২০১১ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় বেশ ইতিবাচক ছিল। ২০১১ সালে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ছিল ৫০ কোটি ৮৬ লাখ এবং ২০১০ সালে ছিল ৮৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১১ সালের পর থেকেই বায়রা লাইফের প্রিমিয়াম আয় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।

(দ্য রিপোর্ট/এসএস/আইজেকে/এসআর/সা/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর