thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে 24, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১ জিলকদ  1445

ভাঙল প্রাণের মেলা

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২৯ ২২:৩৩:৩০
ভাঙল প্রাণের মেলা

মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : বইপ্রেমী মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর বিপুল আগ্রহের মধ্য দিয়েই শেষ হল অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রতিদিন পাঠক, ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সহযোগিতা, সমর্থন ও আশানুরূপ উপস্থিতি মেলার পরিবেশকে নান্দনিক করে তুললেও গত দেড় দশক ধরে মেলায় অবস্থান করছে ভিন্ন চিত্র। প্রকাশনা-শিল্পে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে কখনো বই নিষিদ্ধ হয়েছে, কখনো সন্ত্রাসের হাতে নিহত হয়েছে লেখক-প্রকাশক আবার কখনো কারাগারের নিষ্প্রাণ কক্ষে দিনের পর দিন পার করতে হয়েছে প্রকাশনা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। অনুবাদের সংকলন ‘ইসলামের বিতর্ক’ সম্পাদনা ও প্রকাশের অভিযোগে ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘ব-দ্বীপ’ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ এবং প্রকাশক ও লেখক শামসুজ্জোহা মানিককে গ্রেফতার করা হয়। সিলগালা করা হয় কাঁটাবনের কনকর্ড টাওয়ারের ‘ব-দ্বীপ’র অফিস।

গেল বছর ‘নবী মুহাম্মদের (স.) ২৩ বছর’ শিরোনামের অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশের অভিযোগে মেলার ষোলতম দিনে ‘রোদেলা প্রকাশনী’র স্টল বন্ধ করা হয়। অভিযোগ ছিল— এই বইটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে মহানবী ও ইসলামের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। সে কারণে শুধু স্টল বন্ধ নয়, বাংলা বাজারের রোদেলার অফিসও ভাঙচুর করা হয়। এ নিয়ে দেশের এবং দেশের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় মেলার আয়োজক সংগঠন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানকেও।

‘অবিশ্বাসের দর্শন’ গ্রন্থটি রচনার জন্য গেল বছর মেলার ২৬ তম দিন বাসায় ফেরার পথে টিএসসি প্রাঙ্গণে হত্যা করা হয় অভিজিৎ রায়কে। তার বই প্রকাশের জন্য জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিনে গুরুতর আহত করা হয় অভিজিৎ রায়ের আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বর’র প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুলসহ তিনজনকে।

আরেকটু পিছন ফিরে ২০০৪ সালে দিকে দৃষ্টি দিলে দেখবো, ‘পাকসার জমিন সাদবাদ’ গ্রন্থ রচনার জন্য মেলা থেকে ফেরার পথে বইমেলা অদূরে টিএসসি প্রাঙ্গণে ভাষা বিজ্ঞানী, প্রাবন্ধিক, গবেষক, কবি ও কথাশিল্পী হুমায়ুন আজাদকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। এ আঘাতেই জার্মানিতে নিহত হন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে প্রায় দুই যুগ আগে প্রথাবিরোধী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা এসব অপকর্মের কোন প্রকার সুরাহা না করে লেখককে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করায় প্রতিনিয়ত এ অপরাধের মাত্রা বেড়ে চলেছে বলে মনে করছেন কয়েকজন লেখক, প্রকাশক ও বইপ্রেমী মানুষ। তাদের ভাষ্য—বইয়ের বিরুদ্ধে বই হতে পারে, প্রশাসনিক চাপ কিংবা সন্ত্রাসীদের উন্মাদনা কখনও উপযুক্ত পন্থা হতে পারে না।

এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, ‘কোন বইয়ের বিষয় নিয়ে আপত্তি থাকলে আরেকটি বই রচনা করে এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া যায়। আমি মনে করি এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা। কিন্তু আমাদের এখানে এটা হচ্ছে না। লেখার দায়ে লেখক-প্রকাশককে হত্যা করা করা হচ্ছে। প্রশাসন প্রকাশনা সংস্থা বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রশাসনের এমন আচরণ মৌলবাদীদের দীর্ঘদিনের কার্যক্রমকে বেগবান করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, ‘বই প্রকাশের অভিযোগে কোন প্রকাশনা সংস্থাকে বন্ধ করে দেওয়া সমীচীন নয়। আমি মনে করি যদি সত্যিকার অর্থে বই অভিযুক্ত হয়, তবে বই নিষিদ্ধ হতে পারে কিন্তু প্রকাশককে আইনের আওতায় এনে তাকে শাস্তি প্রদান করা মুক্তচিন্তা বিকাশের পরিপন্থী।’

রোদেলা ও ব-দ্বীপ প্রকাশনী বন্ধের পর এর প্রতিবাদে মাঠে থেকেছেন শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান। তিনি বলেন, ‘দেশের এখনও গ্রন্থনীতিমালা করা হয়নি। এটা হলে, এ বিতর্ক শেষ হয়ে যেত বইমেলায় আসার আগেই। তবে, আমি মনে করি বইয়ের বিরুদ্ধে বই হতে পারে, সন্ত্রাসবাদ কিংবা প্রশাসনের অযাচিত হস্তক্ষেপ প্রত্যাশিত নয়।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এপি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর