thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

এবার আসল ‘টেস্ট’ পরীক্ষা!

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৭ ২১:১৭:৪৮
এবার আসল ‘টেস্ট’ পরীক্ষা!

আরিফ সোহেল, স্পোর্টস এডিটর, চট্টগ্রাম থেকে : শেষ বিকেল। সূয্যি ডুবি ডুবি। সাগরিকায় মিডিয়া বক্সের নিচেই হই-হুল্লোর। এখানে ক্রিকেটের মহোৎসব চলছে। আউট আর রানের ফাঁকে ফাঁকে বেজায় উন্মাদনা। অনেক অচেনা মুখের ভিড়ে পেয়ে গেলাম মাছরাঙা টিভি স্পোটর্স এডিটর রাকিবকেও। বোলার রাকিব তুলোধুনো হচ্ছেন, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরাও বেজায় উদ্বেলিত। সতীর্থরা আনন্দে মাতোয়ারা, মাতোয়ারা ক্রিকেট-উৎসবে। নির্ভার রাকিবও মার খেয়ে হাসছেন। ম্যাচের ফল অমীমাংসিত। এমন যদি চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিন ঘটে, যা ঘটানোর যথেষ্টই উপাদান এখানে হাজির। সে ক্ষেত্রে রাবণের ধৈর্য নিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামতে হবে ব্যাটসম্যানদের। পরীক্ষা দিতে হবে ৪৫৬ রানের বিপরীতে, কমবেশি ৯০ ওভারে। হাতে ১০ উইকেট। এবার আসল ‘টেস্ট’ পরীক্ষা।

চট্টগ্রামে হার এড়াতে ধৈর্যশীলতার কাছে নতজানু হওয়ার সময় এসেছে সাগরিকায়। ঠিক ওই সময়ে টেস্ট ম্যাচের বাইরে রাকিবকে টেনে আনার প্রধানতম কারণ, চলতি সিরিজের টিভি স্বত্বাধিকারী মাছরাঙা টিভি, তাই। ছোট্ট আঙিনার ক্রিকেটীয় বিনোদনের মতো একই দৃশ্যপট যদি হাজির হয় শনিবার। একবার ভাবুন, শামসুর-তামিম-ইমরুলরা দিনভর ব্যাটিং করছেন, অথচ রান তুলছেন শম্বুক গতিতে। আর তাতেই বেসামাল হচ্ছেন-লাকমাল-মেন্ডিস-পেরেরারা। এমন রূপালি বাস্তবতার স্বপ্ন ভেবে আপনিও আনন্দে আত্মহারা হতে থাকুন! মনের গহীনে- বাইরের ছোট ক্রিকেট উৎসব দেখে- সাগরিকার ভেতরে স্বপ্ন জাগানিয়া একটি টেস্ট নিদেনপক্ষে ড্র করার নির্যাস অবগাহন করুন। আনন্দ পাবেন। বিরল জয়ের কথা না ভেবে ড্রর কথাই ভাবতে থাকুন, ভাবতে থাকুন। আর ওই ভাবনায় বুদ থাকুন, ম্যাচ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

মাঠ নয়, সাগরিকার বাউন্ডারি সীমানার ভেতরে শুক্রবারই ক্রিকেটের ওই জম্পেশ আসর বসেছে, তা কিন্তু নয়। আমরা যারা চলতি সিরিজ কাভার করতে এসেছি তাদের চোখ প্রথম দিন থেকেই ধরা পড়েছে ওই মিনি ক্রিকেট আসরের। এখানে তারাই খেলছেন এই কয়দিন, যারা এই ইভেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত, আর আগেভাগে কাজও শেষ করে যায় তারা। যেমনটা হয়েছিল হয়ত রাকিবের।

চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনের অপেক্ষায় সবাই। শনিবার পর্দা নামছে টেস্ট সিরিজের। শেষ দিন ৯০ বা সময়ের সঙ্গে পারলে যুক্ত হবে বেশি কিছু ওভারও। বাংলাদেশ পাচ্ছে সলিড শুরুর মোক্ষম সুযোগ। এটাই আশার আলো হয়ে সামনে আসছে। প্রথম ইনিংসে ১১৯.৫ ওভার খেলে এবার ৯০ ওভার টিকে থাকাটাই হচ্ছে আসল পরীক্ষা। তবে চতুর্থ ইনিংস বলে কথা। ওই শেষ ইনিংসে এর আগে ৪১৮ রানের জয়ই সবচেয়ে বড়। ২০০৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অ্যান্টিগায় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। প্রথম ইনিংসে দুদলই ২৪০ রানে অলআউট হয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৪১৭ রান টপকে টার্গেট স্পর্শ করেছে ৭ উইকেট হারিয়ে। সেখানে বাংলাদেশকে জিততে হলে শেষ দিন ওভারপ্রতি ৫ রানের বেশি তুলতে হবে, এখনও ৪৫৬ রান, যা টেস্টে রীতিমতো অভাবনীয় ঘটনা। ধরুন প্রথম ইনিংসের কথাই। বাংলাদেশ ১১৯.৫ ওভার ব্যাটিং করে তুলেছে ৪২৬ রান। ওভারপ্রতি ৩.৫৬-এর মতো। সুতরাং টেস্ট ড্র করার জন্যই বাংলাদেশকে খেলতে হবে। উইকেট আগলে রেখে ব্যাটিংয়ে থিতু হয়ে পড়ে থাকার মহামহড়া দিতে হবে। বাংলাদেশকে ৯০ ওভার মানে সময়ক্ষেপণেই বেশি মনোযোগী হতে হবে।

বাংলাদেশ এর আগে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪১৩ রান তুলেছে। ২০০৮-৯ মৌসুমে, শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। শ্রীলঙ্কাকে ২৯৩ রানে আউট করার পর বাংলাদেশ ১৭৮ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০৫ রান তুলে ৫২০ রানের টার্গেট ছুড়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ আশরাফুলে সেঞ্চুরিতে তুলেছিল ৪১৩ রান। ওই ম্যাচে সাকিব ৯৬ ও মুশফিক ৬১ রান তুলেছে। তারপরও বাংলাদেশ ১০৭ রানে হেরেছে। একটি পরিসংখ্যান আবারও স্মরণ করতে পারি সাগরিকায় চলমান টেস্টসহ বাংলাদেশ ৮৩টি ম্যাচে মাত্র ১১ বার ৪০০ প্লাস রান তুলেছে। এর মধ্যে দেশের মাটিতে ৮টি আর বিদেশে ৩টি।

যদিও শুক্রবার ১৭৮ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ ৪০৯ রান নিয়ে উকেটে নেমেছে। সেখানে মাত্র ২১ মিনিট উইকেট পাহারা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে শর্ট কাভারে ক্যাচ দিয়ে মাহমুদউল্লা ফিরে না গেলে সময়টা আরো বেশি বাড়তেও পারত। শেষ জুটিতে রাজ্জাক-আমিনের ১৭ রান নিছক কম কিছু নয়। হেরাথ রাঙ্গানার বদলি দিতে এসে ক্যারম বোলার মেন্ডিস নিয়েছেন ৬ উইকেট, হয়েছেন সফল।

আর দ্বিতীয় ইনিংসে পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাটিং করেছে শ্রীলঙ্কা। এখানেও সাঙ্গাকারা ইতিহাস। ক্যারিয়ারের পালকে আরেকটি সেঞ্চুরি যুক্ত হয়েছে তার। তাও ছক্কা মেরে। ট্রিপলের পর সেঞ্চুরি করা রেকর্ডের পাতার দ্বিতীয় নাম এখন সাঙ্গাকারা। এক টেস্টে সর্বোচ্চ রানের খুব কাছাকাছি ছুটছিলেন। যেখানে এখনও অবিনশ্বর হয়ে রয়েছেন গ্রাহাম গুচ। তিনি ৩৩৩ + ১২৩ =৪৫৬ রান তুলেছেন ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে। তার পরই রয়েছেন মার্ক টেলর। ১৯৯৮ সালে টেলর ৩৩৪+ ৯২ = ৪২৬ রান তুলেছেন পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আর সাঙ্গাকারার হয়েছে ৩১৯+১০৫ = ৪২৪ রান। এটা তার ক্যারিয়ারের ৩৫তম সেঞ্চুরিও। সাঙ্গাকারার এমন বর্ণময় রেকর্ডের দিনে দিনেশ চান্দিমালও ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি করেছেন। তার সেঞ্চুরির পর পরই উইকেটে ৪৩ রান করা শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক ম্যাথুস ৩০৫/৪-তে ইনিংস ঘোষণা করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে মাহমুদউল্লা পর পর ২টি উইকেট নিয়ে ক্ষণিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন। সাকিব প্রথম ইনিংসের সঙ্গে আরও একটি উইকেট যোগ করেছেন মাহেলাকে ফিরিয়ে দিয়ে।

ইনিংস ঘোষণার পর দিনের ৮ ওভার নির্বিঘ্নেই খেলেছে বাংলাদেশ। ২৭ মিনিট ব্যাটিং; ১২ রানও শুভ ইঙ্গিত। কারণ এমন পরিস্থিতি জয় অসম্ভব। শুক্রবার মিডিয়াকে তেমন কথাই বলেছেন ইমরুল কায়েস। বলেছেন, ‘জয়ের টার্গেটে খেললে আমাদের জন্য পজেটিভ হবে না। শেষ দিন ৪৬৭ রান চেজ করা এই উইকেটে খুব কঠিন। কেননা উইকেটে বল লো হচ্ছে। তাই আমাদের উচিত হবে ড্রয়ের জন্য খেলা।’

অন্যদিকে কৌশিক সিলভা বলেছেন, ‘সকালের সেশনটাই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভালো বোলিং করলে আউট করা সম্ভব। এখনও ৯০ ওভারের খেলা বাকি। আমরা জয়ের বিকল্প কিছুই ভাবছি না।’

শ্রীলঙ্কার রানের চাপে ফলোঅনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল প্রথম ইনিংস শেষে। সেই শঙ্কা দুমরে-মুচরে দিয়েছেন শামসুর-ইমরুল জোড়া সেঞ্চুরি করে। আর ৪২৬ রানের ইনিংস দাঁড় করিয়ে উল্টো কাঁপন ধরিয়েছে শ্রীলঙ্কান শিবিরে। তাই তারা কোনো ঝুঁকি নেয়নি। বিপদমুক্ত টার্গেট দিয়েই ইনিংস ঘোষণা করেছে।

এখন বাংলাদেশের পালা। ৪৫৫ রান তোলার বিস্ময়কর ব্যাটিংয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে শুধুই ৯০ ওভার সামলানোর কথা ভাবতে হবে। সেই ভাবনায় তামিম-শামসুর-ইমরুল-সাকিব-মুশফিক-নাসিরা তাড়িত হবেন; আসবে আরেকটি আনন্দময় রঙিন দিন। সেই প্রত্যাশা এমন উইকেটে বেশি কিছু নয়! সেখানেই ছোট আঙিনার রাকিবদের জমাট ম্যাচের সুখানুভূতি ছড়িয়ে পড়তে পারে সবুজাভ সাগরিকায়। বাংলাদেশের টেস্ট রেকর্ডবুকে লেখা হতে পারে ১২তম ড্র করার আরেকটি স্বর্ণখচিত অধ্যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা : প্রথম ইনিংস ৫৮৭ ও দ্বিতীয় ইনিংস ৩০৫, ৭৫.৫ ওভার ডিক্লিয়ার (সাঙ্গাকারা ১০৫, দিনেশ চান্দিমাল ১০০*; ম্যাথুস ৪৩*; মাহমুদউল্লা ২/৪৬)।

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস ৪২৬ ও দ্বিতীয় ইনিংস ১২, ৮ ওভার (তামিম ৭*, শামসুর ৪*)।

চতুর্থ দিন শেষে|

(দ্য রিপোর্ট/এএস/ওআইসি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

খেলা এর সর্বশেষ খবর

খেলা - এর সব খবর