thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৮ ০০:২২:০৩
ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার

মনোয়ার জাহান চৌধুরী, সিলেট : ‘লোকে বলে বলেরে ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার’ মরমি কবি হাছন রাজা রচিত এ গানের প্রতিধ্বনি শোনা যায় তার স্মৃতিবিজড়িত সিলেটের বিশ্বনাথের রামপাশার বাড়িটির দিকে তাকালে।
চরম অযত্ন ও অবহেলায় এক সময় পরিপূর্ণ বাড়িটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পথে! ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী এই বাড়ির দিকে এখন চোখ ফিরিয়েও তাকান না কোনো পথিক।

পর্যটকরা এক সময় ভিড় করতেন এ বাড়িতে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তারাও বিমুখ হয়েছেন। এখন বাড়িটি ঘিরে শুধু সুনসান নিরবতা, ঝিঁ ঝিঁ পোকার কর্কষ শব্দ অবিরত। বনলতায় ঘেরা বাড়িতে মরমি কবি হাছন রাজার স্মৃতিও চোখে পড়ে না। সব হারিয়ে গেছে, কিংবা হারাবার পথে! প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ অবস্থা।
শীতের উষ্ণ দুপুরের মিষ্টি রোদ উপচে পড়ছে বাড়িটিতে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সবুজ গাছে চেনা-অচেনা পাখির কলতানও শোনা যায়। কিন্তু বাড়ির বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণজুড়ে গরু-ছাগলের বিচরণ! বাড়ির দিকে মানুষের পদচারণা পড়ে না!

যেটুকু টিকে আছে, সেটি ‘পরিত্যক্ত ভবন’ বলা যায়। ভবনটির দেয়ালে দেয়ালে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। খসে পড়েছে ভবনের ইট-কংক্রিটও। দ্বিতীয় তলার রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে। শ্যাওলা, আগাছা আর লতা-পতা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে বাড়িটি। এ ছাড়া ভবনের দরজা-জানালাও ‘হাওয়া’ হয়ে গেছে! দেয়ালের রং পরিবর্তিত হয়ে কালো হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হাছন রাজার বাড়িটি এখন ধ্বংসস্তুপের আরেক নাম!

এক সময় বাড়িটি দেখতে ভিড় করতেন অসংখ্য পর্যটক। কিন্তু বিবর্তনে হাছন রাজার বিশ্বনাথের রামপাশার বাড়ির রূপ-লাবণ্য হারিয়ে ফেলেছে। হঠাৎ যদিও দু-একজন পর্যটক বাড়িটি দেখতে আসেন; এর ভগ্নদশা দেখে তারা হতাশ হন। ফিরে যান ব্যথিত মনে।

বাড়িটির সংস্কার না হওয়া এবং এর সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করায় স্থানীয়দের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। রামপাশার কবির হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কত অভাগা আমরা! আমাদের ইতিহাসের অমূল্য এ সম্পদ বিলিন হতে দেখছি। চোখের সামনেই এটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ কবির হোসেনের ঝলমলে চোখে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনামণি চাকমা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বাড়িটির ভগ্নদশার ব্যাপারে আমরা অবগত। অচিরেই বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর আসল রূপ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।’
সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান সাঈদ ও স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী শিপন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সত্যিই দুর্ভাগ্য যে এত দিনেও হাছন রাজার বাড়িটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখিনি। হয়ত দেখবও না। কালের স্রোতে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটি।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৫০ বছর আগে হাছন রাজা বিশ্বনাথের রামপাশার জমিদারি ছেড়ে সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী গ্রামের জমিদারি গ্রহণ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমজেসি/এমএআরিএএল/ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ফিচার এর সর্বশেষ খবর

ফিচার - এর সব খবর