thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

চকরিয়ায় ৮৬ উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৯ ২৩:১৪:০৪
চকরিয়ায় ৮৬ উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের চকরিয়ায় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে মাদ্রাসা শিক্ষকদের পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়ায় বহিরাগত একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা পরীক্ষা পরিদর্শকদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ৮৬টি উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেছে। তারা ওই বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। রবিবার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি পুরো হলের পরীক্ষা পুনরায় নেওয়ার দাবি জানান। ঘটনার খবর পেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এসএম আলাউদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশসহ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন জানান, একটি মহল গুজব ছড়িয়ে উসকে দিয়ে বহিরাগতদের দিয়ে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তিনি পরিদর্শক, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জেনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক এডিসি (শিক্ষা) এসএম আলাউদ্দিনকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব নুরুল কবির ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী বশিরুল আলম জানান, রবিবার এসএসসি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার দিন চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় মাদ্রাসা শিক্ষকদের। ওই কেন্দ্রে তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষা দিচ্ছে। এ দিন বাংলা পথমপত্রের রচনামূলক পরীক্ষা শেষে ১২টা ২০ মিনিটে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই কেন্দ্রের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কোনো কক্ষে ১২টা ৩৫ মিনিটে, কোনো কোনো কক্ষে ১২টা ৩০ মিনিটে দেওয়া হয়। এমনকি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৫ মিনিট ও ১০ মিনিট আগে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও নিয়ম বহির্ভূতভাবে পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের মাঝে একই নৈর্ব্যক্তিক একই সেট বিতরণ, পরে ভুল বুঝতে পেরে আবার উঠিয়ে নিয়ে পুনরায় যথাযথ সেট বিতরণ করতে গিয়ে সময় নষ্ট করে দেওয়া হয়। তারা জানান, এভাবে পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আনাড়িপনা মাদ্রাসা শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের প্রায় ২০ মিনিট সময় নষ্ট করে দিয়েছে। কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মাস্টার নুরুল কবির জানান; চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের হল সুপার উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের ৫-১০ মিনিট আগে নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র উঠিয়ে নেওয়ার জন্য পরিদর্শকদের নির্দেশ দেন। তারা আরও বলেন, ঘটনার পর জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থলে গেলে হল সুপার তাদের সামনে উপস্থিত হননি। এ ব্যাপারে হল সুপার মাহমুদুল হক জানান; তিনি এ সময় উপস্থিত ছিলেন না। তবে যতটুকু জেনেছি বহিরাগতরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে তাদের কোনো গাফিলতি ছিল না।

এ কেন্দ্রের সচিব ও চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান; পরীক্ষা শেষ পর্যায়ে এ নিয়ে ভেন্যুর বাইরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময় শেষে উত্তরপত্র নিয়ে পরিদর্শকরা অফিসে ফেরার সময় মুহূর্তের মধ্যে বাহিরাগত কিছু লোক ভেন্যুর ভেতরে ঢুকে অফিস কক্ষে হামলা চালায়। এ সময় তারা পরিদর্শকদের কাছ থেকে ৮৬টি উত্তরপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। এ ঘটনায় তিনি চকরিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জানান, রচনামূলক উত্তরপত্র ১২.২০ মিনিটের মধ্যে কেন্দ্রের অফিসে জমা হওয়ার কথা। তারা প্রশ্ন করেন; নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের উত্তর শেষ হওয়া অবধি কেন পরিদর্শকের হাতে ৫০ মিনিট পর্যন্ত রচনামূলক পরীক্ষার উত্তরপত্র রেখে দেওয়া হলো?

কোরক বিদ্যাপীঠের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী বশিরুল আলম জানান, পুরো হলের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা পুনরায় নিতে হবে। তাছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষকদের পরিদর্শকদের পদ থেকে প্রত্যাহার ও হল সুপারকে অব্যাহতি দিতে হবে। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু সমাধান না পেলে তারা মামলা করবেন বলে জানান।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলার কারণে এ সব পরীক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে প্রশাসনও উদ্বিগ্ন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক মহোদয় শিক্ষা সচিব ও বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী আসমাউল হোসনা পিংকি, জিতু বৈদ্য, তন্নী প্রভা সুশীল, শ্রাবণী, বর্ষা, আয়েশা ছিদ্দিকা, খাদিজাতুল কোবরা ও তাসনিয়া হোসাইন শৈলী বলেন, পরীক্ষার শুরু হওয়ার প্রায় ২০ মিনিট পর তাদের নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নপত্র দিয়েছেন পরীক্ষা পরিদর্শকরা। এমনকি পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে উত্তরপত্র উঠিয়ে নেওয়ায় তারা ঠিকমতো উত্তর লিখতে পারেনি। এ সব শিক্ষার্থী গতকাল অনুষ্ঠিত বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার জন্য ফের প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেছেন, আমি এ ঘটনা শুনেছি; এ ব্যাপারে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের আবার নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পীযূষ দত্ত জানান, প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানতে পেরেছি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্টের সমস্যার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যাই হোক পরীক্ষার্থীদের পুনরায় কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখা হবে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া থানায় একটি অভিযোগ করার কথা স্বীকার করে বলেন, জিডিতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে।

(দ্য রিপোর্ট/এসএম/এএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর