thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

আরেকটি আফসোসের ‘পরাজয়’

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৬:৪১:৩৯
আরেকটি আফসোসের ‘পরাজয়’

আরিফ সোহেল, দ্য রিপোর্ট : দৃশ্যপট সবটাই অভিন্ন; জয় ও শেষ ওভার। সঙ্গে জয়ী দলের নামও পুরানো। জিতেছে সফরকারী শ্রীলঙ্কা। পরপর ২ জয়; সিরিজও সফরকারীদের। তারপরও তৃপ্তির হাসি খাঁটি ক্রিকেটপ্রেমীদের। দারুণ এক ম্যাচ; চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো।

বাংলাদেশ মাত্র ১২০ রান তুলেও টোয়েন্টি২০ এর শীর্ষদলটি এভাবে নাকানি-চুবানিতে ঘোল খায়াবে; ভাবা যায়নি। শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২ রানে। সেখানে শ্রীলঙ্কা জয় স্পর্শ করেছে ৩ উইকেট হাতে রেখে। সেখানেই বড় আফসোস; যদিও আরো কিছু রান হতো!

ঠিক প্রথম ম্যাচের মতো স্নায়ু-উত্তেজক এক ম্যাচ উপভোগ করেছে সাগরিকার দর্শকরা। শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ম্যাচে পয়সা পুরোটাই উসুল হয়েছে। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে গেছে ম্যাচের গতিপথ। কখনো মনে হয়েছে, এগিয়ে বাংলাদেশ। ম্যাচ ঝুকে পড়ছে বাংলাদেশের দিকে; আবার পরক্ষণেই তা হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার। তবে শেষ বলের আগে হলফ করে কেউ বলতে পারেনি; ‘অমুক’ দল জিতছেই।

এ ম্যাচেও সাগরিকায় জয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। টস জয়। জিতেই ব্যাটিং। এবং যথারীতি উইকেটে খাবি খেয়েছে টপ অর্ডার। শ্রীলঙ্কান বোলার বল হাতে মাস্তি করেছেন। নিয়েছেন একের পর এক উইকেট। প্রথম ওভারেই শামসুর উইকেট চান্দিমালের হাতে। বোলার ছিলেন ‘অকেশনাল’ দিলশান। পরের ওভারে তামিমকে তুলে নিয়েছেন কুলসেকারা। ২ ওভারে ৩ রান; পাশে ২ উইকেট। প্রথম টোয়েন্টি২০ ম্যাচের দুর্দান্ত ব্যাটার এনামুল-সাকিবেও খুব ভাল জুটি হয়নি; তারপরও ওটাই বড়। মাত্র ২ ওভারে ৩২ রানের জুটি। দলীয় ৩৫ রানের মাথায় ব্যাটসম্যান সাকিবও পটল তুলেছেন। তবে তার আগে সাইক্লোন তুলেছেন সাকিব। ৬ বলে ১২ রান করে দারুণ সম্ভাবনার ইঙ্গিতেই দিয়েছেন।

আউটের মিছিলের অভিযাত্রায় সাগরিকায় তখন নাভিশ্বাস ওঠছে। কেউ যেন দাঁড়াতেই পারছেন না। সমুদ্রপাড়ের অনেক কিছু অবারিত হাতে দেয়া সাগরিকায় তখন অভিমান দুমরে পড়ছে। শব মিছিলের মর্মস্পর্শী সুর আছড়ে পড়েছে; বিহ্বল করে তুলছে স্টেডিয়ামের এপাশ-ওপাশ। আসা-যাওয়ার মাঝেও আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান এনামুল যখন ২ ছক্কায় শ্রীলঙ্কার বোলারদের কাঁপিয়েছেন; তখন আবারও আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে ভক্তরা। সেখানেও ছন্দপতন। ৪২ রানের মাথায় ২৪ রান করা এনামুল সেনানায়েকের খুইয়েছেন উইকেট। ৪৭/৫; বাংলাদেশের ছন্দহীন ব্যাটিংয়ের মধ্যে তারপরও ভাস্বর ছিলেন অভিসিক্ত সাব্বির। শেষ ওভারে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন সাব্বির। নেমেছেন ৭.৩ ওভারে। নেমেই দেখেছেন মাহমুদউল্লা, ফরহাদ, মাশরাফি, সানির আসা যাওয়া। বাংলাদেশ ১৯.৫ ওভার পর্যন্ত খেলতে পেরেছে সাব্বিরের ব্যাটেই। ৩৬ বল; মানে একাই ৬ ওভার খেলেছেন সাব্বির। ব্যাটে রান ২৬। টোয়েন্টি২০ ক্রিকেটে এমন স্কোর দেখলে গা যাতনা করবে। কিন্তু স্কোরশিট দেখলে বাহবাই দিত সাব্বিরকে। এর মধ্যে মাশরাফিময় একটি ইনিংস উপভোগ করেছেন ভক্তরা। ১০ বলে ৪ ছক্কায় সাজিয়েছেন ১৭ রানের এক ঝরো ইনিংস। শ্রীলঙ্কান টোয়েন্টি২০ বিশেষজ্ঞ নিয়েছেন ৩ উইকেট। তার পাশে ছিল কুলসেকারা ও সেনানায়েকে। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তারা।

জয়ের জন্য ১২০ বলে টার্গেট ১২১ রান। ওভারপ্রতি ৬.০৫ রানের নামতা পড়তে পড়তে নির্ভার ব্যাটিংয়ে নেমেছে শ্রীলঙ্কা। বাধা-বিঘ্ন নিয়ে একটুও ভাবতে হয়নি তাদের। ২৩ রানে মারমুখী হয়ে ওঠা পেরেরা যখন সাকিবের এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েছেন; তখনও বুঝা যায়নি ম্যাচটির ভাজে ভাজে এত নাটকীয়তা লুফিয়ে থাকবে। থাকছে এতো রাজ্যের উন্মাদনা-উত্তেজনা।

কঠিন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা; যখন ৫০ রানে ৬ উইকেট; তখন তিনিই নতুন করে শুরু করেছেন আবারো সেই সাঙ্গাকারা। আসলে শ্রীলঙ্কার জয়ের সঙ্গে সাঙ্গাকার নামই জড়িয়ে থাকছে। আর তিনি পাশে পেয়েছেন তিসারা পেরেরাকে। সবাই চলে যাচ্ছেন ড্রেসিংরুমে; এমনকি সাঙ্গাও। তারপরও থেকেছেন শুধু তিনিই।

আগেই ৩ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা ৩২ রানে। নবম ওভারে ম্যাচেরেআরো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন মাশরাফি। ওভারের প্রথম এবং শেষ বলে একে পেরেরা ও ম্যাথুসকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছেন। ৪৬/৫; তখন মনে হয়েছে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। আরেকটি ধাক্কা ৫০ রানে। রান আউট হয়েছেন কুলসেকারা। সেখানে থেকেই লড়াই শুরু করেছেন সাঙ্গা। ৩৮ বলে ৩৭ করা সাঙ্গাকারা মাত্র একটি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন। পাক্কা ৪৬ রানের জুটি গড়ার পর সাঙ্গাকারার বিদায় করেছেন রুবেল হোসেন। যদিও এই ওভারের প্রথম বল থেকেই নো-র কল্যাণে ৫ রান তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সাঙ্গা দলকে ৯৬ রানে রেখে ফিরেছেন। সেখান থেকে পেরেরা-সেনানায়েকে নিয়ে ২৭ রান তুলেছেন সর্তকতার সঙ্গে। একটিও ভুল শট খেলেননি তারা।

১৯তম ওভারে রুবেল ৯ রান দেয়ার পর; জয়ের জন্য শেষ ওভারে ৯ রান প্রয়োজন ছিল শ্রীলঙ্কার। পেরেরা প্রথম বলে তুলে নিয়েছেন এক। উইকেটে সেনানায়েকে। সেখানে অনেকেই আশার বাতিঘর দেখেছেন। কিন্তু নবীস সেনানায়েকে একটু ঢিলেঢালা ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে পরের ২ বলে ৪ রান তুলে নিয়েছেন। আর শেষ বলে যখন সেনানায়েক বাউন্ডারি মেরেছেন; তখন অযথাই স্বপ্ন দেখা মনে হয়েছে অনেকেরই। ফরহাদ রেজাকেই শেষের বলি হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। বোলার মাশরাফিই সেরা পারফরমার; ২/২৯-এ। তবে সাকিবকে কোনো আরো বল করানো হয়নি; এই আক্ষেপ কিছুটা থাকবেই। হয়তো মাশরাফি চাইলে শেষ বাজি ধরতে পারতেন সাকিবকে বল তুলে দিয়ে। কারণ মাত্র ৮ রানে ১ উইকেট নেয়া সাকিবের তখনও ২ ওভার বল করার সুযোগ ছিল।

টোয়েন্টি২০ ম্যাচে ১২০ রানের পর এভাবে লড়াইয়ের কথা ভাবাটা ছিল অবান্তর। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা তাই করে দেখিয়েছেন। এমন লড়াইয়ের পর হারার মধ্যে জয়ের আনন্দ বরাবরই লুকিয়ে থাকে। প্রথম ম্যাচে শেষ বলে ৩ রানের চ্যালেঞ্জ ইনফর্ম ব্যাটসম্যান এনামুল না পারলেও; শ্রীলঙ্কান বোলার সদ্য উইকেটে নামা সেনানায়েকে তা করে দেখিয়েছেন অবলীলায়। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এখানেই বাংলাদেশের পার্থক্য।

চট্টগ্রামপর্ব শেষ। এবার ওয়ানডে সিরিজ। ঢাকায় শুরু হচ্ছে ২ দিন পর। ৩ ম্যাচের ওই সিরিজে সাগরিকার অনেক প্রাপ্তি অনুপ্রেরণা হিসেবেই কাজ করবে।

উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কা প্রথম টোয়েন্টি২০ ম্যাচটি ২ রানে জিতেছিল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ১২০/১০, ১৯.৫ ওভার (সাব্বির ২৬, এনামুল ২৪, মাশরাফি ১৭, সাকিব ১২; মালিঙ্গা ৩/২০, কুলসেকারা ২/৩২ ও সেনানায়েকে ২/১১)।

শ্রীলঙ্কা : ১২৩/৭, ২০ ওভার (সাঙ্গাকারা ৩৭, তিসারা পেরেরা ৩৫*, কৌশিক পেররা ২১; মাশরাফি ২/২৯)।

ফল : শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে জয়ী।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/ওআইসি/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

খেলা এর সর্বশেষ খবর

খেলা - এর সব খবর