thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছে না বিশ্বব্যাংক

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১৯:৪৭:২৬
সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছে না বিশ্বব্যাংক

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে রাজি হচ্ছে না বিশ্বব্যাংক। পাশাপাশি সাড়া দিচ্ছে না এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাধ্য হয়েই বেশি সুদে বাণিজ্যিক ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। এতে প্রকল্পটির কাজ বাধাগ্রস্ত হবে না বলে মনে করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক হঠাৎ করেই কেন অর্থায়ন করছে না সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। তবে এডিবি ও জাইকাসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে অর্থায়ন করার অনুরোধ জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কেউ সাড়া দেয়নি। সাধারণত প্রকল্পের মাঝপথে কোনো সংস্থাই যুক্ত হতে চায় না। ফলে এখন কমার্শিয়াল লোন নিতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা যে সব কম্পোনেটের জন্য ইতোমধ্যেই চুক্তি করেছি, সেগুলো ভালোভাবেই এগিয়ে চলছে। তবে অতিরিক্ত অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে কীভাবে অর্থ চাওয়া হয়েছে, না হয়েছে, সে বিষয়টি আমার পুরোপুরি জানা নেই।’

প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২ হাজার ৭৭ কোটি ৪০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৪৯৪ কোটি ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের (ইজিসিবি লিমিটেড)-এর ৮০ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ ১ হাজার ৫০২ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার টাকা।

বর্তমান বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৩৯ কোটি ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ১৬২ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার অর্থায়ন বাদ দিয়ে বৈদেশিক সহায়তা অংশে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে ১ হাজার ৮২২ কোটি ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকার ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ ২ এক্স ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট নামের প্রকল্পটি ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৭৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছিল ১ হাজার ৫০২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাস্তবায়নের জন্য ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তী সময়ে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ার জটিলতায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হয়নি।

এ জন্য ২০১০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ধরন পিকিং হতে কম্বাইন্ড সাইকেলে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। কম্বাইন্ড সাইকেলের জন্য তৈরি করা টেন্ডার ডকুমেন্টে বিশ্বব্যাংক সম্মতি প্রদান করেছিল।

ওই সময় প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে সিদ্ধিরগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প রাখা হয়। এটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবের ওপর পরিকল্পনা কমিশনে ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিভাগ ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। তবে অতিরিক্ত ক্ষমতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রকল্পটির অঙ্গভিত্তিক ব্যয় নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট ভিত্তি সংস্থা বা বিভাগের দ্বারা সংশোধিত ডিপিপিতে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

এ ছাড়া বর্ধিত ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে অতিরিক্ত অর্থায়নের বিষয়ে ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জানানো হয়, চলমান দরপত্র মূল্যায়ন সমাপ্তির পরই কেবল অতিরিক্ত অর্থায়নের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব বলে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বোর্ডের অনুমোদন ক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। এ অবস্থায় ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি দরপত্র মূল্যায়নের পর অতিরিক্ত অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সম্মতি গ্রহণ করে সংশোধিত ডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংশোধিত ডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে উপস্থিত বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি জানিয়েছিলেন, অতিরিক্ত ব্যয় বহনে বিশ্বব্যাংক রাজি থাকলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক সম্মতি পাওয়া যায়নি। তাই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন দ্রুত করতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন করা প্রয়োজন। সভায় উপস্থিত অধিকাংশই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের বিষয়ে কোনো মতামত দেয়নি। ফলে বিকল্প উৎস থেকেই ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- গ্যাস টারবাইন জেনারেটর, গ্যাস বুস্টার কম্প্রেসারসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, হিট রিকভারি সিস্টেম জেনারেটর, স্টিম টারবাইন জেনারেটর, কুলিং টাওয়ার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ইমাজেন্সি ডিজেল জেনারেটর, স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার, কন্ট্রোল ইক্যুপমেন্ট, ম্যান্ডেটরি স্পেয়ার পার্টস সংগ্রহ করা। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ নির্মাণ, যন্ত্রপাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিভিল ওয়ার্কস, যন্ত্রপাতি স্থাপন, টেস্টিং ও কমিশনিং, গ্যাস সংযোগের জন্য আরএমএস নির্মাণ, ৬ হাজার ৫৪১ বর্গমিটার আবাসিক ভবন নির্মাণ।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এনডিএস/সা/ফেব্রুয়ারি ১৮,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর