thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বের বিভিন্ন পর্যায়

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৭:৩১:০১
ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বের বিভিন্ন পর্যায়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভাষা আন্দোলনের কালপর্বকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এই দুটি পর্বের বিশ্লেষণে পূর্ব বাংলার রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ চিত্র উঠে আসে। যেমন- বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বের স্বরূপ, পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক উন্মেষ, আন্দোলনকারীদের সামাজিক অবস্থান, ছাত্র-জনতার মেলবন্ধন ও বাংলাদেশ গঠনে নতুন চিন্তার জাগরণ প্রভৃতি।

ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বের স্বরূপ সম্পর্কে ড. রংগলাল সেন বলেন, ‘সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, ভাষা-আন্দোলনের দুই পর্যায়ের নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। এরা সবাই ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং এরা ছিলেন অধিকাংশই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, এদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান ছিল। এদের একটি অংশ বিশেষ করে গণতান্ত্রিক যুবলীগ ছিল একটি কমিউনিস্ট সমর্থক সংগঠন। কিন্তু তমুদ্দুন মজলিস ছিল একটি ইসলামপন্থী সংগঠন।’

তবে চরিত্রগতভাবে বিচার করলে দেখা যায় ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্ব ছিল একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের পরিবর্তনের কারণে বায়ান্নতে এসে এ আন্দোলন রাজেনৈতিক আন্দোলনে উন্নীত হয়। সেটি নেতৃত্বের চিত্র থেকে স্পষ্ট হয়। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দান করে অপেক্ষাকৃত ধর্মঘেষা ‘তমুদ্দুন মজলিস’। এটি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন ছিল না। দ্বিতীয় পর্বে নেতৃত্ব দেয় প্রগতিশীল যুবশক্তি। তবে উভয়স্তরেই আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন ছাত্র, যুবক ও বুদ্ধিজীবীরা। আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব শুধু গণপরিষদের ভেতরেই তাদের নেতৃত্বকে সীমাবদ্ধ রাখেন। তবে তাদের একটি অংশ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে এসে সরাসরি যুক্ত হন।

১৯৫০-এর দশকে যখন পূর্ব পাকিস্তান মূলনীতি কমিটির (বিপিসি) আন্দোলন দানা বাঁধে, সে সময়ই ভাষা আন্দোলনও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রথম থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের অভিজাতরা ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যা পরবর্তীতে এসে সমাজের অন্যান্য শ্রেণির সঙ্গে যুক্ত হয়।

এই আন্দোলন পর্যালোচনা করলে গুরুত্বপূর্ণ যে অর্জনটি চোখে পড়ে তা হল- এই আন্দোলন পূর্ব বাংলায় ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে। ফলে প্রথম দিকের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পটভূমি থেকে বিবর্তিত হয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক চেতনা পরিগঠনে ভূমিকা রাখে, ভাষা আন্দোলন বাংলাভাষী এলিটদের প্রথমবারের মতো সুসংহত করে। এর ফলে সমগ্র জাতি শুধু একটি সাধারণ দাবিতে ঐক্যবদ্ধই হয়নি বরং, বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুসংসহত হয়ে ওঠে। বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা থেকে একটি নতুন সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং ইতিহাস রচিত হয়। পূর্ব বাংলার জনগণের আত্মপরিচয়ের ইতিহাসে এটি সত্যিকার অর্থে যুগসন্ধিস্থল।

এই আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্রসমাজ একটি সুসংগঠিত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ পায়। একইসঙ্গে সমাজের অপরাপর পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়। যা পরবর্তীকালের সফল আন্দোলনগুলোতে বিজয়ী হওয়ার চাবিকাঠি হিসেবে ভূমিকা রাখে।

আন্দোলনের প্রথম পর্বে গণজাগরণ ছিল না বললেই চলে। তখন জনগণের সঙ্গে নেতৃত্বের তেমন কোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি। জনগণের সম্পৃক্ততা ঘটে আন্দোলনের দ্বিতীয় স্তরে। এটি সম্ভব হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা গ্রামীণ ছাত্রসমাজের কারণে। এ সময় শহরের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া গ্রাম থেকে আসা ছাত্রসংখ্যা ছিল তিনগুণ। তারা খুব সহজেই ভাষার দাবিকে প্রদেশব্যাপী জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেন। ফলে কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নানান পেশার মানুষ সচেতন হয় এবং এতে জড়িয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের সামাজিক অবস্থানও সেটা অনেকটা দেখিয়ে দেয়। আরেকটি দিক হল- গ্রাম থেকে পড়তে আসা নিজেদের সন্তানদের উপর সরকারি নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি পূর্ব বাংলার মানুষ। একই ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রেও।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অমর একুশে গ্রন্থমেলা এর সর্বশেষ খবর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা - এর সব খবর