thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১ জুন ২০২৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ২৪ জিলকদ  ১৪৪৫

সংগঠিত পূর্ব বাংলা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৮:৪৬:৪৫
সংগঠিত পূর্ব বাংলা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা মুসলিম লীগের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয়কে চূড়ান্ত করে। কিন্তু তারা যথারীতি কড়াকড়ি বজায় রাখার চেষ্টা করে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা ছিলেন অনড়।

২৩ ফেব্রুয়ারি স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল ও মিছিলে-শ্লোগানে সরব ঢাকা শক্তিশালী আন্দোলনের অস্তিত্ব জানান দেয়। জনগণের ক্ষোভ উড়িয়ে নিয়ে যায় ১৪৪ ধারা। তা সত্ত্বেও পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাতের কারফিউ অব্যাহত থাকে। টহল দেয় সেনা জওয়ানরা। এ সব জুলুমকে উপেক্ষা করে সচিবালয়সহ অফিস-আদালতে ধর্মঘট বহাল থাকে। গাড়ি ও রেল চলাচল থাকে বন্ধ। বাঙালি রেল কর্মচারীদের ওপর গুলি চলে এবং গুলি চালাতে অস্বীকার করায় পুলিশের একাংশের অস্ত্র ‘সিজ’ করা হয়। গ্রেফতার হন এক হাবিলদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।

সেনাবাহিনী মেডিকেল ব্যারাকের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বেয়নেটের মুখে মাইক কেড়ে নেয়। এর পর সুরক্ষিত সলিমুল্লাহ হলের মাইকই আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এর সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিলেন ওই হলের ইকরামুল আমিন। ফজলুল হক হলেও তখন আন্দোলনের কর্মসূচি ও অন্যান্য প্রচারের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঘটেছে আমূল পরিবর্তন। শুধু নিরক্ষবলয়ই নয়, ডানপন্থী অনেক সংগঠনই রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় সোচ্চার হয়ে ওঠে। আলিয়া মাদ্রাসা ও তিব্বিয়া হাবীবিয়া কলেজও প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে। এমনকি ব্যাংক কর্মচারী সমিতিও পিছিয়ে থাকে না।

রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল পরিষদ সদস্য আবুল কালাম শামসুদ্দিনের পর মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের পদত্যাগ। সরকারবিরোধী মনোভাবের ব্যাপক বিস্তার ঘটলে মুসলিম লীগে ভাঙ্গন ধরে। তর্কবাগীশের পথ ধরে আরও একাধিক সদস্য মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন। আইন পরিষদে শামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে নতুন বিরোধী দল গঠিত হয়। গঠিত হয় ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা কমিটি’। এই কমিটিতে থাকা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন- শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, আবুল হাশিম, কামরুদ্দীন আহমদ, আনোয়ারা খাতুন প্রমুখ।

শেরেবাংলা ছাত্রদের দাবি জয়যুক্ত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলে জানান। মওলানা বলেন- ‘আমি দাবি করি অবিলম্বে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হোক, পুলিশি গুলির তদন্তের জন্য হাইকোর্টের জজ ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে কমিশন গঠন করা হোক। আমি অপরাধীদের প্রকাশ্যে বিচার দাবি করিতেছি।’ তার মতে, নুরুল আমিন ইতিহাসের দাবি অস্বীকার করেছেন। অত্যাচার মানুষের বিক্ষোভ বাড়ায়। কোনোভাবেই চাপা দিতে পারে না।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি মোহন মিঞার বিবৃতি। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের সংবাদ শুনিয়া স্তম্ভিত হই। …অবিলম্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি কর্তৃক পুলিশি জুলুমের তদন্তের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাইতেছি।’

মুসলিম লীগের ভোটের রাজনীতিতে এ সব প্রতিক্রিয়ার প্রভাব গুরুতরভাবে পড়ে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা এই দলটি দুই বছরের মধ্যেই নির্বাচনে চরম পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। কারও কারও ধারণা এর প্রভাব পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিতেও পড়ে। মিয়া ইফতেখার উদ্দিন, জি এম সৈয়দ, আবদুল মজিদ সিন্ধির মত গণতন্ত্রী ও বামপন্থী ঘরানার নেতারা একাট্টা হয়ে নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করতে ফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে, ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রছাত্রীরা বরকত শহীদ হওয়ার স্থানে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে একটি অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান শুরু করে।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/সা/ফেব্রয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অমর একুশে গ্রন্থমেলা এর সর্বশেষ খবর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা - এর সব খবর