thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তারা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৬:০৯:১৭
স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তারা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতীকী রূপ হলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এটি গণতন্ত্র, অন্যায় এবং স্বৈরাচারী চিন্তা ও শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক। বাংলাদেশের যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ মিনার চেতনার প্রতীক হয়ে এসেছে। সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে শহীদ মিনারের অসংখ্য অবয়ব। তবে বর্তমান শহীদ মিনারটি একুশে ফেব্রুয়ারির পরে নির্মিত হয়। এর জন্য দরকার হয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম।

প্রথম শহীদ মিনারটিকে বলা হয়েছিল স্মৃতিস্তম্ভ। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের গোলাম মাওলাসহ আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজন ছাত্র পুলিশের গুলি ও শহীদদের নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হোস্টেল প্রাঙ্গণে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির সিদ্ধান্তে আসেন। তারা ওইদিন বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাতের মধ্যে তা সম্পন্ন করেন।

মিনারটি তৈরি হয় মেডিক্যালের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বারো নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা ঘেঁষে। উদ্দেশ্য বাইরের রাস্তা থেকে যেন সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেকে বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া। তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত) এবং ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সঙ্গে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিক্যাল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরনো ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়।

ভোর হবার পর কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি। ছোট ছোট খুটি পুঁতে দড়ি বেঁধে ঘিরে দেওয়ার পর দড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় লাল অক্ষরে লেখা পোস্টার। তাতে লেখা ছিল- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’, ‘সর্বস্তরে বাংলা চালু কর’, ‘রাষ্ট্রভাষা তহবিলে মুক্তহস্তে দান করুন’ ইত্যাদি। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ২১ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের বাবা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদে প্রকাশিত খবরে লেখা হয়- ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের যেসব শহীদ বীর গত ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের নিষ্ঠুর গুলিতে বুকের রক্তে ঢাকার মাটি রাঙাইয়া দিয়াছেন তাহাদিগকে স্মরণীয় করিয়া রাখিবার উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রগণ হোস্টেল প্রাঙ্গণে নিজ হস্তে এক রাত্রির মধ্যে একটি স্মৃতিস্মম্ভ নির্মাণ করিয়াছেন।’

দ্বিতীয়বার ২৬ ফেব্রুয়ারি স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। রাজনৈতিক মহলের মতে, এ সময় মুসলিম লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের হিসেবে মাওলানা আকরাম খাঁর নির্দেশে জনাব শামসুদ্দীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের প্রেক্ষাপটে ছাত্ররা আবুল কালাম শামসুদ্দীনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে দ্বিতীয়বার শহীদ মিনার উদ্বোধনের আয়োজন করেছিল। কিন্তু নুরুল আমিনের সরকার এটা সহ্য করতে পারেনি। তাই ব্যবস্থাও নেয় দ্রুত। ওইদিন শেষ বিকেলে পুলিশ মেডিক্যাল হোস্টেল ঘিরে ফেলে। অন্যরা ট্রাক ভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে ভেতরে ঢুকে। অস্ত্রের মুখে উপিস্থিত ছাত্ররা কোনো ধরনের বাধা তৈরিতে ব্যর্থ হয়। পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।

পরদিন দৈনিক আজাদ খবরে ছাপে- ‘গতকল্য মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে শহীদানের যে স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়েছিল পুলিশ সন্ধ্যায় তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে।’ পরে ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়।

শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক এবং আওয়ামী লীগের যুক্তফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এর ফলেই শহীদ মিনারের নতুন স্থাপনা নির্মাণ সহজ হয়। ওই বছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান স্থান নির্বাচন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। তৎকালীন পূর্ত সচিব (মন্ত্রী) আবদুস সালাম খান মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে 'শহীদ মিনারের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য চূড়ান্তভাবে একটি স্থান নির্বাচন করেন। ওই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি জনৈক মন্ত্রীর হাতে 'শহীদ মিনারের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা থাকলেও তাতে উপস্থিত জনতা প্রবল আপত্তি জানায়। পরে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ রিক্সাচালক আওয়ালের ৬ বছরের মেয়ে বসিরনকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমানের পরিকল্পনা অনুসারে নভেম্বর মাসে তিনি ও নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়। এ নকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনের বিস্তৃত এলাকা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ১৯৬৩ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অমর একুশে গ্রন্থমেলা এর সর্বশেষ খবর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা - এর সব খবর