thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

পিলখানা হত্যা মামলার আপিল

৩ বছরের আগে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হচ্ছে না

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৫ ০০:২৫:১৮
৩ বছরের আগে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হচ্ছে না

এসএম সাকিল আহমেদ, দ্য রিপোর্ট : বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় দায়ের করা ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি হাইকোর্টে আগামী তিন বছরেও শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। মামলার প্রয়োজনীয় প্রায় ৪০ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র প্রস্তুত করতে সময়ের প্রয়োজন হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই এ সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

পিলখানা হত্যা মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে হাইকোর্টে কোনো ডেথ রেফারেন্সের শুনানি সাধারণত তিন বছরের আগে শুরু হয় না। কারণ রাষ্ট্রের নিজস্ব খরচে মামলার প্রয়োজনীয় পেপার বুক প্রস্তুত করে। আর পিলখানা হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের প্রয়োজনীয় প্রায় ৪০ হাজার পৃষ্ঠার পেপার বুক তৈরি করা হবে। এ কারণে স্বাভাবিক নিয়মেই এখানে একটু বেশি সময় লাগতে পারে।’

তিনি আরও জানান, পেপার বুক প্রস্তুত হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি মামলার শুনানির জন্য হাইকোর্টের কোনো একটি বেঞ্চকে নির্দিষ্ট করে দেবেন। এরপর মূল শুনানি শুরু হবে। একই মামলায় ডেথ রেফারেন্স, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এবং বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামির আপিল শুনানি একই সময়ে শুরু হবে।

আমিনুল ইসলাম জানান, তার মাধ্যমে ৩৮৯ জনের পক্ষে ৩৯৫টি ক্রিমিনাল আপিল হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দু’টি এবং গত মাসে বাকি ৩৯৩টি আপিল দায়ের করা হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে আপিল করার নিয়ম থাকলেও বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বিলম্ব মওকুফ আবেদনের মাধ্যমে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে দেরি করে এ মামলার আপিল দায়ের করা হয়।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সূত্র মতে, পিলখানা হত্যা মামলায় মোট সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৫৭৫। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ১৩৮ জনের পক্ষে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল রাষ্ট্রপক্ষ থেকেই দায়ের করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১২৮ জন এবং বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ১৭৫ জনের পক্ষে ক্রিমিনাল আপিল দায়ের করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট শামীমের মাধ্যমে ২৩ জনের পক্ষে ক্রিমিনাল আপিল দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া পলাতক এবং মৃত আসামি বাদে বাকি ৮৪ জনের পক্ষে বিভিন্ন আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পৃথিবীর বিচারিক ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিলের শুনানির প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম জানান, এ মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিলের পর পেপার বুক তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। পেপার বুকের কাজ শেষ হলেই শুনানি শুরু হবে।

মাহবুবে আলম আরও জানান, মামলার আপিল শুনানিতে হাইকোর্টে বিশেষ কোনো বেঞ্চ দরকার হবে না। সাধারণ বেঞ্চেই এর কার্যক্রম চলবে এবং দুই সদস্য বিশিষ্ট বিচারপতির বেঞ্চেই এ শুনানি হবে। মামলাটি তিনটি বিষয়ে (ডেথ রেফারেন্স, যাবজ্জীবন এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড) সম্পৃক্ত। তাই সব বিষয়গুলো এক সঙ্গেই আপিলে সম্পন্ন হবে। আসামিদের মধ্য থেকে চাইলে যে কেউ আদালত থেকে জামিন আবেদন করতে পারেন এবং আদালত অবশ্যই তা বিবেচনা করে দেখবেন।

জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিচারিক আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ। আশা করছি হাইকোর্টে শুনানির পর আমরা ন্যায়বিচার পাব।’

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মোট সাজাপ্রাপ্ত ৫৭৫ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জন। এর মধ্যে ১৪ জন পলাতক রয়েছেন। বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কারাগারে আটক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন। এ ছাড়া সব মিলিয়ে পলাতক রয়েছেন ২৩ আসামি।

স্বাধীনতার পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৫২ আসামিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ইতিহাসে একটি মামলায় সবচেয়ে বেশি আসামির ফাঁসির আদেশের রেকর্ড গড়েছে এ রায়টি। অপরদিকে কোনো মামলায় এক সাথে ৫৭৫ জনকে শাস্তি প্রদান করাও ইতিহাসে প্রথম। একই সঙ্গে একটি ঘটনায় সর্বমোট ৫৯টি মামলার ঘটনাও ইতিহাসে বিরল। যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাজিত শক্তির সেনাবাহিনীর অনেককে মৃত্যুদণ্ডের আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো এক মামলায় এত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান ইতিহাসের পাতায় প্রথম হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি পিলখানা মামলায় ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন, ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭১ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান গত ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

এ ছাড়াও বিডিয়ার বিদ্রোহের অভিযোগে সারা দেশে ১১টি বিশেষ আদালতে ৫৭ মামলায় ৬ হাজার ৪৫ জনকে আসামি করা হয়। এতে ৫ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডও দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বর্তমানে বিজিবি’র সদর দপ্তরে অপারেশন ডাল ভাতের দাবিতে বিদ্রোহ করে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী তৎকালীন বিডিয়ার। এতে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/ এমডি/এএল/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর