thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

স্কুলে শিশুর ও বাড়িতে মায়ের আর্তনাদ

২০১৯ এপ্রিল ০৭ ০৯:০৬:০২
স্কুলে শিশুর ও বাড়িতে মায়ের আর্তনাদ

হাসান কবীর

শনিবার, দুপুর ১টা। বরগুনার তালতলীতে ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রেড বিম ভেঙ্গে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মানসুরা বেগম (৮) নিহত, আহত ১০ শিক্ষার্থী। ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর ।

পিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক জাকির হোসেন চুন্নুর অভিযোগ , তিন কক্ষের একতলা বিদ্যালয় ভবনটি ২০০২ সালে নির্মাণ করা হয়। ভবনটি নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই গ্রেড বিমে ফাটল ধরেছিলো। ক্লাস চলাকালে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে গ্রেড বিম ভেঙ্গে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী মানসুরা বেগমকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায়। ঘটনা চরম মর্মান্তিক।

এমন মর্মান্তিক ঘটনা যে এবারই প্রথম তা নয়। এর আগে ৯ জুলাই,২০১৮তে রংপুরে মুন্সীপাড়ার অবস্থিত মরিয়মননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একইভাবে দুর্ঘটনা ঘটে।

ওইদিন চার কক্ষের ওই ভবনটিতে নবম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক শারীরিক শিক্ষা পরীক্ষা চলছিল। হঠাৎ একটি কক্ষের ছাদ ধসে পড়ে। গুরুতর আহত হয় দুই শিক্ষার্থী। তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে যাত্রায় দুজনেই প্রাণে বেঁচে যায়।
এমন ঘটনা বারবার ঘটে চলেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ী কে ? ভেঙে পড়া ছাদ, অসচেতন শিক্ষক, নাকি ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ?

বলা হচ্ছে, নির্মাণের এক বছরের মধ্যে ফাটল শুরু হয়। ফাটল দেখার পরও গত প্রায় ১৬ বছর এই ফাটল যুক্ত ক্লাস রুমে শিক্ষকরা পাঠদান করে আসছেন। যারা ফাটল সম্পর্কে জ্ঞাত, তাঁদের কি একবারের জন্যও মনে হয় নি, যে কোন সময় এটা একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আচ্ছা শিক্ষকদের কথা না হয় বাদই রাখলাম। সহকারি থানা শিক্ষা অফিসার বা থানা শিক্ষা অফিসার যারা সপ্তাহে দু’একবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন তাঁরা কি কখনও ফাটল সম্পর্কে জ্ঞাত নয় ? নাকি তাঁদের ক্লাস রুমে আসার সুযোগ হয়ে ওঠে না ?

এ দায় শুধু ভবনটি নির্মাণকারী সেতু এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুনের। তার অর্থের লোভ তো আছেই। তবে মামুন সাহেবের একার দোষ কেমন করে দিই, ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বিভিন্ন ফাটল চুয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে যতটুকু অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে রডের ব্যবস্থা হলেও বালু সিমেন্টের আদর্শ মিশ্রণের ঘাটতি রয়ে যায়। বরাদ্দ অর্থে ভবন ওঠে ঠিকই তবে তার দাঁড়িয়ে থাকা দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। বছর পেরুতে না পেরুতে ভবনের গায়ে দেখা দেয় বড় ফাটল, খসে পড়তে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গ। মাশুল গুনতে হয় নিরীহ শিশুদের।

একজন মা তার নাড়ি ছেঁড়া ধনকে ব্যাগ গুছিয়ে, সুন্দর করে জামা জুতা পরিয়ে, থুতনি ধরে পরিপাটি করে চুল আঁচড়িয়ে স্কুলে পাঠান। আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন তার বুকের মানিক কখন স্কুল থেকে ফিরে আসে। সেই মানিক যখন লাশ হয়ে ঘরে ফেরে তখন এর চেয়ে হৃদয় ছেঁড়া দুঃখ আর কী হতে পারে!

আজ স্কুল ছাত্ররাই সবচেয়ে অরক্ষিত। সবচেয়ে বিপদের মধ্যে। স্কুলে যাওয়ার পথে রোড এক্সিডেন্ট, এটা থেকে পরিত্রাণ পেলেও স্কুলে গিয়ে ছাদ ধসে প্রাণহানি। এখান থেকে রক্ষা হলেও ফেরার পথে অপহরণ, জিম্মি করে হাজার লক্ষ কোটি টাকা মুক্তিপণ। টাকা দিতে সুবহেসাদেক পার হলেই ব্রিজের নীচে অথবা রাস্তার ধারে বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন লাশ মেলে। আমরা পরদিন পত্রিকার পাতা খুলে গল্পটা পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নাক ডেকে ঘুমিয়ে সকালে সব ঘটনা বেমালুম ভুলে যায়। অথবা মনে একটু রেখাপাত করলে শেষ বিকেলের মিষ্টি রোদের মধ্যে একটা মানব বন্ধন।

এরপর আবার নতুন ঘটনার জন্য অপেক্ষা। কর্তৃপক্ষ যেমন উদাসীন সাথে আমাদেরও চামড়ার পুরত্ব মামুলি কম নয়। সব কিছু সয়ে গেছে।

তবে যাই হোক, এভাবে শিশু প্রাণ ঝরে যাওয়া কোন ক্রমেই কাম্য নয়। ভবন নির্মাতা থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরের ছোট ছোট অপরাধীর পাপ অনুযায়ী শাস্তি হওয়া চায়। নইলে এমন উদাসীনতায় আরও নিষ্পাপ শিশুর চিরতরে ঝরে পড়ার অপেক্ষা করতে হবে আামদের।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও ব্যাংকার

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এপ্রিল ০৭,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর