thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব - ছয়

সন্ধ্যা নামায় রাখি

২০১৯ জুলাই ২৮ ০৯:০৭:৫০
সন্ধ্যা নামায় রাখি

রোকেয়া আশা

(পূর্ব প্রকাশের পর) " নাজিমরে খাওয়ায় দিয়া আসছি। ঘুমায় এহন। " সুমা খুব ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়। নাজিমের আব্বা কি যেন ভাবেন কিছুক্ষণ। তারপর সুমাকে বলে,
" ঝাপ দিয়া আসো। কাম আছে। "
সুমা কথাটা বুঝে উঠতে পারে না। দরজা কেন লাগাতে বলছে লোকটা? এখন দরজা বন্ধ করে ওকে মারবে? যাতে করে কেউ ওকে মার খাওয়া থেকে বাঁঁচাতে না পারে? সুমার পাণ্ডুর হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে নাজিমের আব্বা আরো বিরক্ত হয়।

" কথা কানে যায় না? দরজায় ঝাপ দিয়া এইখানে আসো। "
সুমা যন্ত্রের মত নির্দেশ পালন করে। মার খাবে? খাক।
সুমা দরজাটা লাগিয়ে নাজিমের আব্বার কাছাকাছি এসে দাঁড়াতেই লোকটা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ওর শাড়ির আঁচল হ্যাচকা টানে বুক থেকে সরিয়ে দেয়। কিশোরী মেয়েটা অনভিজ্ঞতায় বুঝতে পারে না কি হচ্ছে, শুধু কিছুক্ষণের মধ্যে বিছানায় প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরানোর সময় নাজিমের আব্বা যখন হিসিয়ে উঠে বলে, " ওই চুপ! চুপ! " - তখন কিশোরী দাঁঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে থাকে। এটা কেমন শাস্তি - সে জানে না।
নীরবে কি মেয়েটির গাল বেয়ে এক ফোঁঁটা অশ্রুও গড়ায়?
.
ইসরাত আফসানার গলা জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আপুর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সময় ইসরাতই তো সাথে ছিলো। আকবর মামা চলে গেছে, আজকে যাওয়ার সময় সিভিট দিয়ে যায় নি ইসরাতকে। ইসরাত মনে মনে ঠিক করে ফেলে, সে আর জীবনেও আকবর মামার সাথে কথা বলবে না। সে কি জানে না, ইসরাতের সিভিট খেতে কত ভালো লাগে? গোল ছোট্ট ট্যাবলেটগুলো মুখে দিলেই কেমন কমলা কমলা লাগে। কি ভালোই না লাগে৷
আফসানা আস্তে করে ছোটবোনের মাথায় হাত রাখে।
" ইসুমনি, তোমার মন খারাপ? "
ইসরাত ছিলো আফসানার চুলে মুখ ডুবিয়ে। প্রশ্ন শুনে সে মুখ তুলে তাকায়। নীরবে মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝায় তার মন খারাপ।
আফসানা বোনের চুলে আঙুল ডুবিয়ে কোমল গলায় প্রশ্ন করে,
" ইসুমনির মন খারাপ ক্যান? "
ইসরাত প্রশ্ন শুনে ভাবে। সত্যিটাই বলবে? আপু যদি ওকে লোভী ভাবে? পরেই মনে হলো, নাহ্। আফসানা আপু অমন না। সে বুঝবে। ইসরাত গলাটা খুব নিচু করে বলে,
" আকবর মামা আমারে সিভিট দিয়া যায় নাই। "
আফসানা ভাবে, আকবর মামাটা কে? জ্ঞান ফেরার সময়ে ওর মুখের কাছে আরেকটা মুখ ঝুঁকে ছিলো। খুব উদ্বিগ্ন একজোড়া চোখ। সেই মানুষটা?
আফসানা এবার একহাতে ইসরাতকে জড়িয়ে ধরে।
" মন খারাপ কইরো না বনু। আমি তোমারে সিভিট আইনা দিমু নে। "
ফাতেমা বেগম দরজার কাছ থেকে নীরবে দুই বালিকার কথা শোনে। ভেতরে ভেতরে একটা দীর্ঘশ্বাসও ফেলে। তার মনের ভেতরে একটা সাপ ঢুকেছে। ঈর্ষার। অনিশ্চয়তার। আফসানাকে সহজভাবে নিতে পারছে না সে। এই মেয়েটার পরবর্তী জীবনের জন্য কি ফাতেমা বেগম দায়ী থাকবে না?
.
সুমা ভয় পেয়ে গেছে খুব। নাজিমের আব্বা রক্তমাখা বিছানার চাদরটা তুলে নিচে ফেলে দিয়ে তোশকের ওপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। সুমাকে কঠিন নির্দেশ দিয়ে রেখেছে, দ্রুত বিছানার চাদরটা ধুয়ে গোসল করে ফেলতে। লোকটার মন বেশ ফুরফুরে। সুমাকে তার মনে ধরেছে।
সুমা ধীরে ধীরে শাড়িটা পরে নেয়। তারপর খোড়াতে খোড়াতে মেঝেতে পড়ে থাকা চাদরটা নিয়ে কলতলায় চলে যায়। ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে তলপেট থেকে শুরু করে উরু পর্যন্ত। সুমার কুমারী জীবনের ইতি এখানেই।
নাজিমের ঘুম ভেঙে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। সে এসে উঁকি দিয়ে গেছে দুয়েকবার। যন্ত্রণাক্লিষ্টশরীরটা নিয়ে সুমা যখন চাদরটার সব রক্ত তুলে ফেলে ধোয়া চাদরটা উঠানে মেলে দিতে গেছে, নাজিম তখন ওর পেছনে এসে আঁচল ধরে দাঁড়ায়।
সুমা তাকায় ছেলেটার দিকে। চোখে প্রশ্ন।
" সুমা আপু, আব্বা কি তোমারেও মারসে? তুমি ল্যাংরাইতাছো ক্যান? "
সুমা বুঝে উঠতে পারে না কি বলবে শিশুটিকে। সে ভেতরের শ্বাসটা গোপন করে নাজিমের মাথায় হাত রাখে।
" আমারে আপু ডাকিস না। তোর আব্বায় শুনতে পারলে আবার মারবো। "
" তাইলে কি ডাকুম? "
সুমা কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর আস্তে করে বলে,
" মাইনষের তো মা একজনই থাকে। আমি তো তোর মা না। তুই আমারে নমা ডাকিস। "
" নমা মানে কি? "
" আমি বাংলা ব্যকরণ পড়ছি ইস্কুলে। ন মানে হইলো না। নমা মানে মা না।
কিন্তু এইটা শুধু আমি আর তুই জানমু। আর কেউ জিগাইলে কইবি নমা মানে নয়া মা। ঠিক আছে? "
নাজিমের মুখে হাসি ফোটে তারপর।
সে নিজের মনে মাথা নেড়ে বার কয়েক বলে,
" নমা! নমা! নমা! " (ক্রমশ)

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ২৮,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর