thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-আট

সন্ধ্যা নামায় রাখি

২০১৯ আগস্ট ১১ ০২:৩৬:৪৩
সন্ধ্যা নামায় রাখি

রোকেয়া আশা

(পূর্ব প্রকাশের পর) আকবর হোসেন খুব বিষণ্ণ। তিনি যখন তার প্রিয় ফনিক্স সাইকেলটা চালিয়ে ফার্মেসী থেকে নিজের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেছেন তখন সবে সন্ধ্যা ঘনাচ্ছে। সাধারণত এমনিতেই সন্ধ্যার মুহূর্তটায় একটা বিষণ্ণতার ভাব ছড়ায়। এজন্যই, ভরসন্ধ্যায় কখনো একা থাকতে নেই। মানুষের ক্ষেত্রে অবশ্য অনুচিত ঘটনাগুলো প্রায়ই ঘটে। যেকারণে আকবর হোসেনকে বিষণ্ণ সন্ধ্যা এবং নিঃসঙ্গ গাঢ় রাতগুলো সত্যি সত্যিই নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাটাতে হয়৷
আফসানাকে দেখার পর থেকেই মানুষটার মধ্যে একটা ছটফটানি শুরু হয়েছে। পারভিনের মেয়ে আফসানা। তার আশৈশব বন্ধু, সখী ; কৈশোর পেরিয়ে প্রেয়সী পারভিন।

পারভিন মরে গেছে। আফসানা সদ্যই মা হারিয়েছে।
নিজের মায়ের মুখ মনে করার চেষ্টা করে আকবর। একবার, দুবার, বারবার।
মনে পড়ে না। প্রতিবারই ব্যর্থ হতে হয়।মায়ের মৃত্যুর সময় আকবর হোসেনের বয়স কত ছিলো? এগারো, কিংবা বারো। অজস্র স্মৃতি তৈরি হয়ে যায় ততদিনে। অথচ, তখনকার প্রিয়মুখটা সময়ের ব্যবধানে কেমন অস্পষ্ট এখন। আকবর হোসেনের মনে পড়ে, ভারী একটা পেট নিয়েও মা রাঁধতো। উঠোনের কোণে মাচায় প্যাঁচানো লাউয়ের লতা থেকে লাউ, কখনো পাতা এনে লাউশাক। বাড়ি থেকে খানিক দূরের গজারি বন থেকে পাতা কুড়িয়ে আনতো চটের বস্তায় করে। সেই পাতায় মাটির চুলোয় আগুন জ্বলতো। মায়ের মুখের একপাশ পুড়ে গিয়েছিলো। আব্বা যেদিনকে ভাত নরম হয়ে গেছে বলে মাকে লাথি মেরেছিলো, রান্নাঘরের একটা পাশ পুরো ভেসে গিয়েছিলো রক্তে। মায়ের ভারী পেট হাল্কা হয়ে এসেছিলো, শুধু চুলার একপাশে মুখটা পড়ায় মুখের ওই পাশটাও পুড়ে গিয়েছিলো মায়ের।
মায়ের জন্য কষ্ট হয় আকবরের। আফসানারও নিশ্চয়ই হয়, না?
এই মেয়েটার তো ক্ষত আরও তাজা এখন, সদ্যই হারিয়েছে সে।
আর আকবর হোসেন নিজে কিছু হারায় নি? এখনকার এই নিঃসঙ্গ জীবন কেন তার?
একটা শ্বাস বেরিয়ে আসে তার বুক চিড়ে। উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায়, লালচে ভাবটা ধীরে ধীরে গাঢ় বেগুনি হতে শুরু করেছে। খুব দ্রুতই আঁধার নামবে। এইসব মৃদু আলোর সন্ধ্যা এত দ্রুত মিলিয়ে আঁধার কেন নামে?
.
সুমা খুব বিপাকে পড়ে গেছে। গরীব ঘরের মেয়ে, ঘরদোরের কাজকর্ম সে জানে। কিন্তু তাই বলে এই বড় বড় ডেকচিতে রান্নার মত অভিজ্ঞও হয়ে ওঠেনি। আগেরদিন প্রায় সারাটা সকাল খেটে উঠোনে বিশাল দুইখানা চুলা বানিয়েছে সুমা। নাজিম অবশ্য পুরো সময় আশপাশে ঘুরঘুর করেছে। কিন্তু সে তো ছেলেমানুষ। গেরস্থালির আর কি বোঝে!
সুমার ঘাম হচ্ছে ভীষণ। একটু অস্থির লাগলেও শরীর দরদর করে ঘামতে থাকে মেয়েটার।
নাজিমের আব্বা নির্দেশ দিয়ে গেছে ; জন পনেরো ব্যাটালোকের পেট ভরে খাওয়ার মত ভাত, লাবড়া আর ডাল রাঁধতে। এইটুকু পদ রাঁধতে গিয়েও যদি ভুল হয়, তাহলেই বিপদ। এত মানুষের জন্য লাবড়া রাঁধতে যে কম আনাজ কাটতে হয়না সেটা ওই লোককে কে বোঝাবে!
বিপদ আরও আছে। চুলা বানানোই হয়েছে আগের দিন। এখনো ভেতরের দিকে ভেজা। এই চুলায় জ্বাল ধরানোই মুশকিল হবে। ধোঁয়াও হবে প্রচুর।
সুমা যখন এসব নিয়ে আতঙ্ক বোধ করছে, তখনই বারবাড়িতে শোরগোল শোনা যায়। ভ্রু কুঁচকে আসে সুমার। এই সময়ে এত হৈচৈ কিসের? (চলবে)

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ১১,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর