thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

ওষুধ ও রসায়ন খাতের রাজত্ব পুঁজিবাজারে

২০২২ সেপ্টেম্বর ০৯ ০১:০১:২৪
ওষুধ ও রসায়ন খাতের রাজত্ব পুঁজিবাজারে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে দিন ওষুধ ও রসায়ন খাতের রাজত্ব অব্যাহত রয়েছে। এই খাতের মধ্যে আবার ওরিয়ন গ্রুপের তিন কোম্পানির শেয়ারদর ছুটছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের দুই কোম্পানি, যে দুটি গত নয় মাসে ৪০ শতাংশের বেশি দর হারিয়ে ফেলেছিল।

এই দুই গ্রুপের ওপর ভর করে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সূচকের ঊর্ধগতি অব্যাহত থাকল, যদিও এদিন যত সংখ্যক কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় তিন গুণ।

বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে সূচকের উঠানামা ছিল অনেক। শুরুতে ৪০ পয়েন্ট বাড়লেও কিছুক্ষণ পর ১২ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হতে থাকে। এরপর আবার ৪০ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

এর কিছুক্ষণ পর আবার সেখান থেকে ৪৩ পয়েন্ট কমে সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় আগের দিনের চেয়ে তিন পয়েন্ট কমে।

১৩ মিনিটের মধ্যে সূচকে আবার দেখা দেয় ঊর্ধ্বগতি। এই সময়ে যোগ হয় ১৭ পয়েন্ট। এর আধা ঘণ্টা পর আবার সূচক কমে ২৭ পয়েন্ট।

বেলা ১২টা ২১ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট কমে লেনদেন হচ্ছিল এবং সূচক ছিল ক্রমেই নিম্নমুখি। এরপর শুরু হয় বেক্সিমকো লিমিটেডের দর বৃদ্ধি। গত কয়েক দিন ধরে অল্প অল্প করে বাড়তে থাকা শেয়ারদর চট করে বেড়ে যায় ৮ শতাংশের বেশি। আর বড় মূলধনি কোম্পানি হওয়ায় এই দর বৃদ্ধি সূচকে রাখে ইতিবাচক প্রবণতা।

শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১২ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।

এ নিয়ে চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে ৭৭ পয়েন্ট সূচক পতনের পর তিন দিনে যোগ হলো ১২৮ পয়েন্ট।

সূচক সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে দুটি বেক্সিমকো গ্রুপের এবং তিনটি ছিল ওরিয়ন গ্রুপের।

বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মা, ওরিয়ন গ্রুপের ওরিয়ন ফার্মা, বিকন ফার্মা এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।

এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, কোহিনূর কেমিক্যাল, ডেল্টা লাইফ, স্কয়ার টেক্সটাইল এবং পদ্মা অয়েলও সূচকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পয়েন্ট যোগ করেছে।

আগের দিনের মতোই লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে ওষুধ ও রসায়ন খাত, যদিও আগের দিনের তুলনায় এই খাতে লেনদেন কমেছে দুই শ কোটি টাকার মতো।

খাতটিতে লেনদেন হয়েছে প্রায় চার শ কোটি টাকা, যা আগের দিন ছিল পৌনে ছয় শ কোটি টাকা।

লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে বিবিধ খাত উঠে আসতে পেরেছে মূলত বেক্সিমকো লিমিডেটের কারণে। খাতটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডেই হাতবদল হয়েছে ২৬৪ কোটি টাকার শেয়ার।

সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে দুটি আছে ওরিয়ন গ্রুপের ওরিয়ন ইনফিউশন এবং ওরিয়ন ফার্মা। ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড।

মাত্র ১৭ কর্মদিবসে ওরিয়ন ইনফিউশনের দর ১২৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪১৯ টাকা। এর মধ্যে আজ বেড়েছে ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা বা ৮.৭১ শতাংশ।

গত তিন মাসে দর বেড়েছে পাঁচ গুণ। ১২ জুন দর ছিল তুলনায় শেয়ারটির দর ছিল ৭৯ টাকা ৬০পয়সা।

অন্যদিকে এক মাসেরও কম সময়ে ওরিয়ন ফার্মার দর বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। গত ১১ আগস্ট দর ছিল ৮৩ টাকা। বর্তমান দর ১২৫ টাকা ৯০ পয়সা। আজ বেড়েছে ৮ টাকা ৮০ পয়সা বা ৭.৫১ শতাংশ।

একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি বিকন ফার্মার শেয়ার দর বেড়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সা বা ২.৪৬ শতাংশ।

এই কোম্পানিটির শেয়ার দর এক সপ্তাহেরও কম সময়ে বেড়েছে প্রায় ৮৩ টাকা। গত ১১ আগস্ট শেয়ারদর ছিল ২৪৫ টাকা, যা আজ দাঁড়িয়েছে ৩২৭ টাকা ৯০ পয়সা।

অন্যদিকে বেক্সিমকো লিমিটেড দীর্ঘ সংশোধন কাটিয়ে গত এক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। এই সময়ে বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা।

গত ১১ আগস্ট শেয়ারদর ছিল ১১৭ টাকা ১০ পয়সা, যা এখন দাঁড়িয়েছে ১৩২ টাকা ১০ পয়সা। এর মধ্যে ৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ৬.২৮ শতাংশ বেড়েছে আজই।

একই অবস্থা বেক্সিমকো ফার্মার। এই কোম্পানিটিও দীর্ঘ সংশোধক কাটিয়ে হারিয়ে ফেলা দরের কিছুটা উদ্ধার করেছে গত এক মাসে। গত ১১ আগস্ট শেয়ারদর ছিল ১৫০ টাকা ২০ পয়সা, যা এখন দাঁড়িয়েছে ১৮৫ টাকা ২০ পয়সা। এর মধ্যে আজ বেড়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ১.৫৪ শতাংশ।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে দুই দিনের সংশোধনের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল, তাতে লেনদেন অনেকটাই কমে গেলেও গত দুই দিনে তা আবার গতি পেয়েছে। তবে বুধবাররে তুলনায় আজ কিছুটা কম টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

আগের দিন হাতবদল হয় ২ হাজার ২০১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকার শেয়ার, আজ হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ৮৭৭ কোটি ৭৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার।

এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের দুটি আর ওরিয়ন গ্রুপের তিন কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৫২৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

এদিন বেড়েছে মোট ৭২ কোম্পানির দর, বিপরীতে কমেছে ১৮৮টির দর। ১১৯টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।

চলতি সপ্তাহে পুঁজিবাজারের আচরণ নিয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ বলেন, বাজার সার্বিকভাবে ভালো ছিল। বাজারে যে উত্থান-পতন সেটা বিনিয়োগকারীদের পরিপক্ক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। দিন জুড়ে ক্রয়চাপ, বিক্রয় চাপ- দুটোই ছিল। একটা আইটেমে কিছু প্রফিট করে অন্যটাতে বিনিয়োগ করেছেন, এমনটা নজরে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, 'শুধু এই আজকের দিন নয়, বলতে গেলে সপ্তাহজুড়েই বিনিয়োগকারী এবং বাজার পরিপক্ক আচরণ করেছে। বাজার বেড়েছে, যখন সংশোধনের কথা বা প্রফিট টেকিংয়ের সময় তখন তা হয়েছে ‌।

‘আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো- অতীতে দেখা গেছে যখনই বড় টানওভার হয়েছে তারপরই মার্কেট পড়েছে। ‌ যেটা কিন্তু এবার হয়নি। এটা একটা স্থিতিশীল এবং পরিপক্ক বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের দক্ষতা প্রকাশ করে।’

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর