thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি 25, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১,  ২০ শাবান 1446

হাসিনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ, জানালেন প্রেস সচিব

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১০:৩২:৫৭
হাসিনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ, জানালেন প্রেস সচিব

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাতিসংঘ সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের ওপর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছে। এর ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনার ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে গেছে। সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি শনিবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘গত আগস্টের শেষ দিকে যখন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সিদ্ধান্ত নেন যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাকে নিরপেক্ষভাবে জুলাই ও আগস্টের নৃশংসতার তদন্তের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে, তখন অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কেউ কেউ পুরনো বাংলা প্রবাদ মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: ‘খাল কেটে কুমির আনার যোগাড় হচ্ছে।’ কেউ কেউ মনে করতেন, জাতিসংঘের এই তদন্ত অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের শামিল হবে এবং হয়তো একটি সমঝোতাপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে—যেমনটা কখনো কখনো আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে দেখা যায়।’

‘তবে অধ্যাপক ইউনূস তার সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছিলেন এবং জানতেন যে, শুধুমাত্র জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাই এই ধরনের সত্য অনুসন্ধান মিশন পরিচালনা করতে পারে। আসলে, বাংলাদেশে সবাই জানত যে, জুলাই-আগস্টে কী ঘটেছে। কে হত্যার আদেশ দিয়েছিল, পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এবং কর্মীদের ভূমিকা কী ছিল—সবই জনসমক্ষে স্পষ্ট ছিল। কিন্তু কেবল দেশীয় বর্ণনার উপর নির্ভর করলে চলত না। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও বিশ্বস্ত একটি সংস্থার তদন্তের প্রয়োজন ছিল। আর যদি সত্য কষ্টদায়কও হয়, তবে সেটাই বাস্তবতা!’

জাতিসংঘকে এই প্রতিবেদনের জন্য ডেকে এনে ড. ইউনূস তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন বলে জানান শফিকুল। তাতে হাসিনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের দূরদর্শিতা এবার বাস্তবে রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের এই তদন্ত প্রতিবেদন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর শেষ পেরেক মেরে দিয়েছে। তার রাজনীতিতে ফিরে আসার যে ক্ষীণ সম্ভাবনা ছিল, সেটাও এখন শেষ।’

আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে হলে তাই এখন হাসিনাকে বাদ দিয়েই ভবিষ্যৎ ভাবতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে জাতির কাছেও, মনে করেন শফিকুল। তিনি বলেন, ‘যদি আওয়ামী লীগ ও তাদের সেই বিশাল সংখ্যক কর্মী, যারা জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না, দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে চান, তাহলে একমাত্র পথ হলো শেখ হাসিনার পরিবারকে প্রত্যাখ্যান করা এবং জাতির কাছে স্পষ্ট ক্ষমা চাওয়া। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে, এই ঘটনায় অন্য কোনো ব্যাখ্যার সুযোগ নেই।’

স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগেও স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। তবে সে স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে হাসিনার পার্থক্য বিস্তর। সেটা দেখিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন। শফিকুল বলেন, ‘১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানো সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ মাত্র ৫৯ বছর বয়সে ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি যে দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক ছিলেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এরশাদ পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছিল এবং একাধিক দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছিল। পরবর্তী খালেদা জিয়া সরকারও একই নীতি অনুসরণ করে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়েই তার দল জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিজেদের দলে টেনে নেয়। ফলে, এরশাদ কিছু তরুণ ও অনুগত মুখের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তবু, ৯০-এর দশকের শুরুতেই বোঝা গিয়েছিল, এক সময় তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসবেন। কারণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে তার বিশাল ভোটব্যাংক তখনও অটুট ছিল।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এরশাদ শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে ফিরে আসতে সক্ষম হন, যদিও তিনি আর কখনো প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। তবে দুই দশক ধরে তিনি ছিলেন দেশের রাজনীতির অন্যতম “কিংমেকার”। তার রাজনৈতিক প্রভাব তার জীবদ্দশা পর্যন্ত বজায় ছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল যে, তার শাসনামলে আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ কোনো আগ্রহ বা নিন্দা ছিল না। তিনি ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের সম্মুখীন হননি। তার শাসনামলে মাত্র কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, কিন্তু কোনো চূড়ান্ত তদন্ত প্রমাণ করতে পারেনি যে, সেগুলোর পেছনে সরাসরি তার আদেশ ছিল। যদিও তিনি ভোগবিলাসী জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন, তার বিরুদ্ধে এমন মাত্রার নৈতিক অভিযোগ ছিল না, যা একজন জনপ্রিয় নেতার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’

হাসিনার সঙ্গে এরশাদের পার্থক্য তুলে ধরে শফিকুল আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সে দিক থেকে এতটা সৌভাগ্যবান নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার শাসনামলে ঘটে যাওয়া অধিকাংশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যথাযথভাবে নথিভুক্ত করেছে। তার ভোট কারচুপির ঘটনা ছিল নির্লজ্জ ও স্পষ্ট। গুম, হত্যা, গণহারে গ্রেপ্তার—এসব ঘটনার কারণে বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তবুও, সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কারণে এবং একটি শক্তিশালী দেশের প্রত্যক্ষ সমর্থনের ফলে তিনি বহুদিন ধরে আন্তর্জাতিক মহলে সুবিধা পেয়ে আসছিলেন।’

‘প্রতিবার যখন তার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে, পশ্চিমা বিশ্ব তাঁকে কিছুটা হলেও সমর্থন দিয়েছে, কারণ সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে তিনি ‘সঠিক দলে’ ছিলেন। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও, আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা মেশিন এবং ভারতীয় গণমাধ্যম এই প্রচারণা চালিয়েছে যে, জুলাই মাসের গণজাগরণ আসলে ইসলামী উত্থান—একটি নতুন ‘ওয়ার অন টেরর’ চালানোর ষড়যন্ত্র! কিন্তু জাতিসংঘের সত্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিয়েছে।’

‘দুঃখিত, আপা! সব শেষ!!’” — এই বলে তিনি তার স্ট্যাটাস শেষ করেন।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর