thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

কোন পথে সরকার

২০১৩ নভেম্বর ১৩ ২২:৩১:৩৬

বাহরাম খান ও আমানউল্লাহ আমান, দিরিপোর্ট : রাজনীতিতে এখন দুই ধরনের হাওয়া বইছে। একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে নির্বাচনের হাওয়া। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতৃত্বে থাকা জোটের পরস্পর বিরোধী এই অবস্থান নতুন নয়। বলাবাহুল্য দুই পক্ষেরই মূল লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন।

চলমান সংসদে সংবিধান সংশোধনের পর থেকেই মত বিরোধের সৃষ্টি। প্রায় আড়াই বছর আগে সংশোধিত সংবিধানের ভিত্তিতেই নির্বাচনের কথা বলে আসছে সরকার। বিরোধী দল বলছে নির্দলীয় সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না।

প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতৃত্বে থাকা জোটের বিপরীতমুখী এই অবস্থানের চিত্র এর আগেও অনেকবার দেখেছে দেশবাসী। সর্বশেষ বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতার কথা মনে করে সবার মধ্যে একটি প্রত্যাশা ছিল এবার হয়তো যে কোনোভাবে একটি সমাধান হবে। সেই আশায় এখন গুড়েবালি।

নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। মন্ত্রিসভার পদত্যাগে এই পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়েছে। রাজনীতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা নানানভাবে এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করছেন। কোনো ব্যাখ্যাই নির্বাচন ও সামনের দিনে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মনে সৃষ্ট শঙ্কা দূর করতে পারছে না। সবার মনে একই প্রশ্ন কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক দিরিপোর্টকে বলেন, ‘মন্ত্রীরা তো আর রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেননি। তারা সর্বদলীয় সরকার গঠনের উদ্দেশে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের মতামত লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এটা নিয়ে তো রাজনীতি করার সুযোগ নেই।’

জাতীয় পার্টির মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ দিরিপোর্ট কে বলেন, ‘মন্ত্রীদের পদত্যাগের প্রক্রিয়া যে অস্বচ্ছ ও বিভ্রান্তিকর এটা এখন পরিষ্কার। আমি জানি না, তারা কেন এমন নাটক করলেন। আপনি বরং যারা একাজ করেছে তাদেরকে প্রশ্ন করলেই ভালো হতো। সরকার যা করছে তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান দিরিপোর্টকে বলেন, মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়টি ছোট-খাটো ত্রুটি। যদি এমনও হয় মন্ত্রীদের পদত্যাগ হয়েছে গেছে তবুও প্রধানমন্ত্রী চাইলে শপথ পড়িয়ে আবার তাদের সেই জায়গায় দিতে পারবেন। এতে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে সরকার যা বলছে আর যা করছে এর মধ্যে কোন মিল দেখা যাচ্ছে না। এটাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী দিরিপোর্টকে বলেন, এটাকে সাংবিধানিকভাবে বিচার না করে যে অবস্থা দেখা দিয়েছে তাতে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। বিষয়টিকে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখা উচিত। এই পরিস্থিতি ক্ষমতাসীনদের আরো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়বে। এর মাধ্যমে তারা কী করতে চাচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়। সর্বদলীয় সরকার না এক দলীয় সরকার তাতেও কে থাকবেন নির্বাচন হবে কী না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সরকার আরো বিপদে পড়বে মন্ত্রীদের পদত্যাগ দেখিয়ে বিশেষ কোন লাভ হবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম দিরিপোর্টকে বলেন, সংবিধানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ কার্যকর হয়ে যায়। অর্থমন্ত্রী আবার বলেছেন আমরা পদত্যাগপত্র দেইনি পদত্যাগের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছি। সংবিধানের ৫৮-১ ধারায় বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতি কাছে যাক বা না যাক প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিলেই পদত্যাগ হয়ে যায়। মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন আবার অফিস করছেন, পতাকাবাহী গাড়িতে চড়ছেন। এই প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে।

সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত দিরিপোর্টকে বলেন, ‘সংবিধান মেনেই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। যেটা হয়েছে সেটা শতভাগ সাংবিধানিক, লিগ্যাল, লেজিটিমেট। ‘সংবিধানের ৫৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চাইলে মন্ত্রীদের পদত্যাগের অনুরোধ করতে পারেন। মন্ত্রীরা এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ রক্ষা করেছেন।’ এই পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার পর তার গ্রহণের মাধ্যমে গেজেট জারির পরই কার্যকর হবে। রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করলে পদত্যাগ সম্পূর্ণ হবে।

তিনি আরো বলেন ‘সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদের বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাঁহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাঁহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’

মন্ত্রিসভার পদত্যাগ নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে দপ্তরবিহীন এই মন্ত্রী বলেন, ‘তারাতো পার্টি অব ব্যারিস্টারস। মানে মানে করেন। তারপরেও পড়ে পড়ে দেখবেন না। ওই যে লেখা থাকে, এখানে থুথু ফেলিবেন না, ফেলিলে দ-নীয়। আমি যদি পড়ি এখানে থুথু ফেলিবেন, না ফেলিলে দ-নীয়।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উস্কানি, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অসৌজন্যমূলক।’

(দিরিপোর্ট/বিআর/এইচএসএম/নভেম্বর ১৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর