thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযত আচরণ করতে হবে : ইইউ

২০১৩ নভেম্বর ২৩ ০১:১৬:৪০
রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযত আচরণ করতে হবে : ইইউ

দিরিপোর্ট কূটনৈতিক প্রতিবেদক : সকল রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আস্থাশীল ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে এবং নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের পরে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযত আচরণ করতে হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্সের স্টার্সবার্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গত মঙ্গলবারের প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক শেষে তা অনুমোদন করা হয়। রাত আটটা থেকে শুনানি শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা চলে। পরে তা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টে তিনটি আলাদা প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এর একটি বাংলাদেশ নিয়ে। ওই প্রস্তাবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা (এমইপি) সব ব্যক্তি ও দলকে আগামী নির্বাচনের আগে, পরে ও নির্বাচনের সময় সংযত ও সহনশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট জানিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল কর্মসূচি প্রতিদিনের জীবনে প্যারালাইসিসের মতো অচলাবস্থা সৃষ্টি করছে।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের আগামী সাধারণ নির্বাচন পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে আয়োজন ও তদারকি করা উচিত। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন বয়কট না করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এটা করলে নাগরিকদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি এবং সামাজিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অবনতি হবে। উন্নয়ন অগ্রগতিকেও বাধাগ্রস্ত করবে বলে জানিয়েছে তারা। এছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের সহিংসতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরত থাকা উচিত বলেও এমইপিরা মনে করেন।

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানেও নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে নানা প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেখানে। সকল রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আস্থাশীল ও নিরপেক্ষ অন্তবর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয় এ প্রস্তাবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ব্যত্যয় ইস্যুতে বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রথম ইস্যুই ছিল বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যু। এছাড়া কাতারে অভিবাসীকর্মী পরিস্থিতি এবং বলিভিয়ায় ন্যায়বিচার ইস্যুতে বিতর্ক হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে প্রস্তাবে সংযুক্তির জন্য ৬০ জন এমইপি ছয়টি আবেদন জমা দেন। ওই প্রস্তাবগুলোতে বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আস্থাশীল ও নিরপেক্ষ অর্ন্তর্বতী সরকার গঠনের আহ্বানও ছিল। তবে তাদের যৌথ প্রস্তাবে ওই বিষয় বাদ পড়েছে। ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্পর্ক, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে ও শক্তিশালী করতে অবাধ, সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয় আমলে নেওয়া হয়।

এছাড়াও আরও আমলে নেওয়া হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের হরতালে প্রায় ৩০ জন নিহত, গত ৮ নভেম্বর থেকে প্রায় এক হাজার কর্মী আটক করা হয়েছে বলে বিএনপির দাবি, ক্ষমতাসীন মহাজোটের অনেক মন্ত্রীর পদত্যাগ, প্রধানমন্ত্রীর দসর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব এবং বিএনপির সাড়া না দেয়ার বিষয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির আগের ভিন্ন অবস্থান, ২০০৭-০৮ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের কথাও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করার সময় রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে আরো দুইবার ওই সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করা যাবে বলে রায় দিয়েছিলেন। এরপর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলেও বিএনপি সহযোগিতা করেনি।

প্রস্তাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার দল সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হন। ওই নির্বাচনগুলো নিয়ে কোনো অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি।

প্রস্তাবে বিডিআর বিদ্রোহের বিচারে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিষয়টিও আমলে আনা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা তাদের যৌথ প্রস্তাবে মোট ১৫টি সুপারিশ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন ঘিরে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটে বিরোধ এবং জামায়াত ও বিএনপির সাধারণ ধর্মঘটে বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্থবির করে ফেলার তীব্র নিন্দা জানাতে হবে। অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচন করে- এ বিষয়টি মাথায় রেখে জাতীয় সংসদ সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।

বাংলাদেশের জনগণকে গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে বাংলাদেশের স্বার্থে সরকার ও বিরোধী দলকে অবিলম্বে সমঝোতার আহ্বান জানাতে হবে। সহিষ্ণু ও বহুমতের বাংলাদেশের সুনামের কথা স্মরণ রেখে কোনো দল বা গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার নিন্দা জানাতে হবে। সব দল ও গোষ্ঠীকে সব সময় বিশেষ করে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও পরে সহনশীল ও সংযত থাকার আহ্বান জানাতে হবে।

(দিরিপোর্ট/জেআইএল/এমসি/নভেম্বর ২৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর