thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধস

২০১৪ জুন ২০ ১৬:১৯:২৪
টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধস

চট্টগ্রাম অফিস : টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। প্রবর্তক মোড় ও টাইগার পাস এলাকায় শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পাহাড় ধসে একজন আহত হয়েছেন। আহতের নাম নার্গিস আক্তার।

এদিকে, শুক্রবার সকাল ১১টায় টাইগার পাস ও লালখান বাজারের মাঝের সড়কের পূর্ব পাশের একটি পাহাড়ের কিছু অংশ কয়েকটি গাছসহ ধসে পড়লে সড়কের রেলিং ভেঙে যায়।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার বাবুল আক্তার জানান, তারা কয়েকটি জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা জেনেছেন। এতে কেউ হতাহত হয়নি।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে একই দিনে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল।

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, যান চলাচল ব্যাহত ও যানজট

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই টানা ভারি বর্ষণে বন্দর নগরীর অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে।

ফলে রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে যান চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েন নগরীর অনেক এলাকার মানুষ।

প্রবল বর্ষণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শুক্রবার সকাল থেকে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। নগরীতে মাটি ও দেয়াল ধসের ঘটনাও ঘটে। ব্যাহত হয় বন্দরের পণ্য ওঠা-নামা কার্যক্রম।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির বেগও বাড়ে। শুক্রবার ভোরে প্রবল ও ভারি বর্ষণে ব্যস্ত নগর জীবন একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে। বৃষ্টির তোড়ে নগরজুড়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অনেক এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে বৃষ্টির পানির স্রোত বয়ে যেতে দেখা যায়। প্লাবিত হয় নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা।

নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত

নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম জেলায় ৩২৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, মৌসুমী বায়ুর প্রভাব সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান ওই আবহাওয়া কর্মকর্তা।

মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টিপাত

বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫০ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আর শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃষ্টির পরিমাণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার রাত ৯টা-শুক্রবার সকাল ৯টা) বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৭৫ মিলিমিটারেরও বেশি। আর শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাতেই বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রায় ৬৭ মিলিমিটার।

জলাবদ্ধতা, যান চলাচল ব্যাহত

প্রবল এই বর্ষণে নগরীর হালিশহর পোর্ট কানেক্টিং রোড, বড়পুল, আগ্রাবাদ, মুরাদপুরসহ কয়েকটি এলাকায় শুক্রবার সকালে যান চলাচল প্রায় বন্ধ থাকে। এ ছাড়া নগরীর অন্য এলাকাগুলোর মধ্যে বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, মোহরা, ষোলশহর, চকবাজার, কালারপোল, হামজারবাগ, নাসিরাবাদ, জিইসি মোড়, সাগরিকা, পাহাড়তলী, হালিশহর, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, কাতালগঞ্জসহ নগরীর আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় পানি সরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে।

প্রবল ও ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।

পাহাড় ধসে মা ও ছেলে আহত

প্রবল বর্ষণে শুক্রবার ভোরে নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকার রাজাপুর লেনের দয়াময় কলোনিতে দেয়াল ধসে সুমন ও তার মা আহত হন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর প্রবর্তক মোড়ের রূপনগর কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় আংশিক পাহাড় ধসে পড়ে। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর প্রহ্লাদ সিংহ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে, সকাল ৮টার দিকে টাইগারপাস-লালখানবাজার সড়কের পেট্রোল পাম্প এলাকায় গাছসহ পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দেয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেহাল অবস্থা

একটানা ভারি বর্ষণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবস্থাও বেহাল হয়ে পড়ে। চারলেন মহাসড়কের কাজ অসমাপ্ত থাকায় বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। ফলে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করে।

সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-ভাটিয়ারি এলাকায় যানবাহন গর্তে পড়ে আটকে যায়। এ কারণে ওই এলাকায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা হাইওয়ের পুলিশ সার্জেন্ট জিল্লুর রহমান জানান, চারলেনের কাজের কারণে রাস্তায় সৃষ্ট গর্ত এবং প্রবল বৃষ্টির কারণে যানবাহন ধীরগতির হয়ে পড়ে। ফলে ‘কিছুটা’ যানজটের সৃষ্টি হয়।

(দ্য রিপোর্ট/কেএইচএস/এমএআর/এমডি/এনআই/জুন ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর