thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

অসহযোগে রূপ নিতে পারে অবরোধ

২০১৩ ডিসেম্বর ০২ ০২:০০:৪০
অসহযোগে রূপ নিতে পারে অবরোধ

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা চলতি অবরোধ ৭২ ঘণ্টা থেকে বেড়ে ১৩২ ঘণ্টা হতে পারে। কিন্তু সপ্তাহ শেষে আগামী ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের রাজনীতি বিষয়ক বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্ডেজ তারানকোর সফর উপলক্ষে চলমান আন্দোলন শিথিল করতে পারে বিরোধীদলীয় জোট। তারানকোর সফরের কর্মসূচিতে বিরতি বা শিথিলের পর চলতি কর্মসূচি অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নিতে পারে বলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সূত্রে জানা গেছে।

চলতি সপ্তাহজুড়ে অবরোধ থাকলেও আগামী সপ্তাহে অবরোধ কর্মসূচি শিথিল হতে পারে। ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের রাজনীতি বিষয়ক বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। মূলত এজন্যই আন্দোলন কর্মসূচি শিথিল করতে পারে ১৮ দলীয় জোট। আলোচনা, সংলাপ ও শেষ ফয়সালা হিসেবে তারানকোর সফরকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন জোটনেত্রী খালেদা জিয়া। এজন্য দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের পরও বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারকে এখনও সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের কথা বলছেন। তারানকোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার সমাধানকেও বিরোধী জোট আন্দোলনের অংশ বলেই মনে করছে।

সূত্রমতে, লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির প্রতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ও তাদের মনোভাবের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তারানকোর সফরে শুধু ঢাকাতেই কর্মসূচি শিথিল করতে পারে ১৮ দলীয় জোট। সেক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এছাড়াও বছরের শেষ সময়ে দেশের সব স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষার মৌসুম হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ১৮ দলীয় জোট অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এজন্য পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য জোট সময় দিতে পারে, যাতে এ সময়ে স্কুলগুলো তাদের পরীক্ষা শেষ করে আনতে পারে। এসব কারণেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের পরও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনও সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানান।

সূত্র জানায়, ১৮ দলের পক্ষ থেকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত অবরোধ বলবৎ রয়েছে। তা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নামে অব্যাহত মামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিরতিহীন এ কর্মসূচি টানতে চাইছে দলটি। এক্ষেত্রে সরকারকে আর কোনো ছাড় দেবে না বিএনপি। এজন্য বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে আটক এবং কার্যালয় তছনছ করার প্রতিবাদে আগের ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে নতুন করে আরও ৬০ ঘণ্টা যোগ হতে পারে। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ বিষয়টি ইঙ্গিত দিয়েছে।

দলটির হাইকমান্ড মনে করছে, সরকার বিরোধী দল দমনে হার্ডলাইনে চলে গেছে। এ অবস্থায় সংলাপ নিয়ে বিরোধী দল এখন আর কোনো আশার আলো দেখছে না। সংলাপ ইসুতে বিএনপি অনেক দূর এগিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ খোলা নেই। এজন্য চলতি সপ্তাহ জুড়েই টানা আন্দোলনে থাকবে বিএনপি।

জোটের একাধিক সূত্র জানায়, তারানকোর আসন্ন ঢাকা সফরের পরপরই দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে নামবেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে অসহযোগ আন্দোলনে চলে যাবেন তিনি। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকোর সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সংলাপ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ আগ্রহের কথাও তুলে ধরবেন তিনি। এজন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূতের বাংলাদেশ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন খালেদা জিয়া।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘তারানকোর সফর নিয়ে অবশ্যই আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে। জাতিসংঘ সারাবিশ্বে শান্তির জন্য কাজ করে। তারা বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানেও আন্তরিক। বিশেষ করে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন আমাদের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে এর আগেও নিজ থেকে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে দুইবার চিঠি দিয়েছেন। দুই নেত্রীর সঙ্গে ফোনেও আলাপ করেছেন।’

জেনারেল মাহবুব বলেন, ‘তারানকো এর আগেও বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তার এবারের সফরকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।তবে সম্ভাবনা খুব কম। কারণ নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। নির্বাচনের তারিখও তারা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এ ক্ষেত্রে সংকট সমাধানে ইসিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এসব কারণে জাতিসংঘের উদ্যোগকেও আমরা স্বাগত জানাই।’

কর্মসূচির ব্যাপারে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের অন্যতম এ নেতা বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি দিতে চাই না। আমাদের মূল দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এটা শুধু আমাদেরই দাবি না, দেশের জনগণের দাবি। জনগণ আমাদের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করছে। আমাদের কর্মসূচি চলছে, কর্মসূচি চলবে। কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। তাই আশাকরি জাতিসংঘের মহাসচিব এ বিষয়টি উপলব্ধি করবেন।’

সূত্র জানায়, বিরোধী দল দমনে সরকারের হার্ডলাইনে চলে যাওয়া, সংলাপ নিয়ে সরকারের অনীহা এবং বিরোধী জোট ছাড়াই এক তরফা নির্বাচনের পথে হাঁটা বিরোধীজোটকে আন্দোলনের পথ বেছে নিতে সরকার বাধ্য করছে বলে জোট নেতারা মনে করছেন।

সংলাপ ইস্যুতে বিএনপির বারবার আগ্রহ দেখালেও আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই। এ জন্য চলতি সপ্তাহজুড়েই আন্দোলনে থাকছে দলটি।

এ অবস্থায় ১৮ দলকে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কর্মসূচি পালনে কড়া নির্দেশ রয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের ওপর। আর আন্দোলন-কর্মসূচির পুরো বিষয়টি সরাসরি মনিটরিং করছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এমএইচ/এনডিএস/ডিসেম্বর ০১,২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর