thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ৪ মে 24, ২১ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৫ শাওয়াল 1445

প্রেরণার আধার ম্যান্ডেলা

২০১৩ ডিসেম্বর ০৮ ০০:০৮:১৮
প্রেরণার আধার ম্যান্ডেলা

ইকবাল জাফর খন্দকার : ইতিহাস নামক সমুদ্রের জলবিন্দু হতে এই পৃথিবীতে সবাই আসেন না। কেউ কেউ আসেন ইতিহাসের বাঁক হতে। কেউ কেউ ইতিহাসের সজীব পাঠ হয়ে যুগ যুগ ধরে মানবসভ্যতা বিকাশে আলো ফেলে চলেন। প্রতিবাদের হাতিয়ার দিয়ে ভেঙ্গে চুরমার করে দেন সময়ের দুষ্ট ক্ষতকে।

কেউ কেউ জীবনেই কিংবদন্তি, জীবন্ত মিথ। কোনো বিশেষণে শোভিত করা লাগে না- নিজেই হয়ে ওঠেন বিশেষণের অধিক। তেমনই একজন আমাদের নেলসন ম্যান্ডেলা। আমাদের বলতে কোনো বর্ণের নন- ৭ শ’ কোটি মানুষের। তাঁর জন্য কোনো বিশেষণ দরকার ছিল না, দরকার নেই-ও।


আধুনিকতা ও সভ্যতার সর্বজনগ্রাহ্য কোনো সংজ্ঞা আছে কি? সহজেই ধরে নেওয়া যায়- ছিল না, আগামীতেও সুনির্দিষ্টভাবে থাকার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু মানুষ তো মোটা দাগে বহু বিষয়ে একমত হতে পেরেছে। তারপরও বুঝি এ পথ চলার শেষ থাকে না। কেননা, পুষে রাখা ক্ষত আর নতুন দিনের নতুন নতুন সংকটকে মোকাবিলা করেই তো মানুষের পথচলা।

মানুষের এই চলার পথকে সভ্য ও মানবিক করতে, নব নব দুষ্ট-ক্ষত দমনে যুগে যুগে লড়াই করা লেগেছে অসংখ্য মানুষকে।

তেমনই একটি দুষ্ট-ক্ষত, তথাকথিত সভ্যতার তল্পিবাহী শ্বেতাঙ্গরা বহু যুগ ধরে ভেতরে ভেতরে বর্ণবাদের ঘৃণা পুষে রেখে চলেছিল। তাদের ঘৃণার আগুনে পুড়ে ছাড়খাড় হয় অসংখ্য মানুষ। (যাদেরকে শ্বেতাঙ্গরা কালোমানুষ বলে আলাদা করতে চেয়েছে। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবেই তাদের একটাই পরিচয়- মানুষ।) এভাবে গাত্রবর্ণকে মুখ্য ধরে তাদেরকে নিষ্পেষণ করা হচ্ছিল। অর্থাৎ বর্ণবাদের ঘূর্ণাবর্তে মানবতাবাদ দিনকে দিন মুমূর্ষু হয়ে ঘুরছিল বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে। তখন একজন ম্যান্ডেলা তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করার অঙ্গীকার করলেন বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামে।

বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে ম্যান্ডেলা শক্ত হাতে ধরলেন হাল, উঁচু করলেন প্রতিবাদের ঝাণ্ডা। ক্রমেই আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র দলটির নেতৃত্ব উঠে এল তাঁর বলিষ্ঠ হাতে। কিন্তু সংগ্রামের পথ কখনো কুসুমিত নয়, সব সময়ই বিপদসংকুল-কণ্টকাকীর্ণ। বহুবার তাঁকে মামলা ও জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়। ‘নাশকতা’র অভিযোগে যেতে হয় কারাগারে। জীবনের ২৭টি বছর তাঁকে কাটাতে হয় কারাগারে।


তাঁর মুক্তির দাবিতে বিশ্ব ক্রমেই মুখর থেকে মুখরতর হয়ে ওঠে। অবশেষে মুক্তি পেলেন মহতি বিশ্বনেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। দিনটি ছিল ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ । মুক্তি পেল যেন আফ্রিকাসহ সারাবিশ্বের বিবেকবান মানুষ। জয় হল বর্ণবিরোধী আন্দোলনের। আফ্রিকাসহ বিশ্ব পেল এক নতুন রাজনীতির ধারা, পেল বহুবর্ণের গণতন্ত্র।


বিশ্ববাসীর প্রাণের নেতা ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি দেশটিকে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। ২০০৮-এর জুলাই পর্যন্ত ম্যান্ডেলা ও এএনসি কর্মীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কেবল মাত্র নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে তাঁদের যাওয়ার অনুমতি ছিল।

অবিসংবাদিত বিশ্বনেতা নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলার গোত্রের নাম মাদিবা। গত চার দশকে তিনি ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার ও শাখারভ পুরস্কার। ম্যান্ডেলা ৩ বার বিয়ে করেন। তাঁর ৬টি সন্তান, ২০জন নাতি-নাতনি এবং অনেক প্রপৌত্র রয়েছে। থেম্বুর উপজাতীয় নেতা মান্দলা ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি।


জীবনকে উপভোগের নানা পথ রয়েছে। কেউ কেউ ব্যক্তিজীবনের ভেতর নিজের জীবনকে সংকুচিত করে। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে, কেঁচোগণ্ডুস হয়ে বেঁচে থেকে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। আবার কেউ কেউ মানুষের জন্য, দেশের জন্য, বিশ্বের জন্য, প্রকৃতির জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। উৎসর্গ বলছি কেন? -সুবিস্তৃত করে, করে বিশাল বিপুল। মহৎ সে জীবন সবার ভাগ্যে জুটবার কথা নয়। যাঁরা তা লাভ করেন- যুগ যুগ ধরে তাঁদের নাম থাকে মানুষের হৃদয়ে। তাঁরা থাকেন- শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, থাকেন আগামীর সুন্দর দিন যাঁরা আনবেন তাঁদের প্রেরণার উৎস হয়ে।

নেলসন ম্যান্ডেলা, যেন সারাবিশ্বের সকল সফল মানুষের প্রেরণার আধার।

লেখক : সাংবাদিক


পাঠকের মতামত:

SMS Alert

মুক্তমত এর সর্বশেষ খবর

মুক্তমত - এর সব খবর