thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

জাপার বিশেষ কাউন্সিলে বক্তারা

‘সেনাবাহিনীকে কলঙ্কিত করবেন না’

২০১৩ ডিসেম্বর ২০ ১৯:১২:২৪
‘সেনাবাহিনীকে কলঙ্কিত করবেন না’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির বিশেষ কাউন্সিলে বক্তারা বলেছেন, ‘শুনলাম সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে। সেনাবাহিনীকে জনগণের কাছে কলঙ্কিত করবেন না। এই বাহিনীতে আমাদের ভাই-ছেলেরা আছে। তাদেরকে বিতর্কিত করবেন না।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে শুক্রবার বিকেলে জাতীয় পার্টির বিশেষ কাউন্সিলে আ স ম আব্দুর রব ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্ করে এসব কথা বলেন।

তারা আরো বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে কোরআন শরীফ নিয়ে শপথ নিতে হয়। এরশাদকে অসুস্থ সাজিয়ে সেনাবাহিনীকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে বাধ্য করার জন্য বর্তমান সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।’

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত জাপার চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর ১৫২ জন শাহাদাৎ বরণ করেছেন। সারাদেশ থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন। মৃত্যুঞ্জয়ী সংগ্রাম চলছে। এ সরকার পৌনে পাঁচ কোটি ভোটারকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ইতিহাসে এই সংসদ পাগলের সংসদ হিসেবে পরিচিতি পাবে।’

বিশেষ কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন গোলাম মসীহ। ২২ সদস্যের প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে রয়েছেন ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি এমপি, মোস্তফা জামাল হায়দার, এস এম এম আলম, এ এইচ এম গোলাম রেজা এমপি, ব্রিগেডিয়াম জেনারেল (অব.) মাহমুদ হাসান, জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল, নবাব আলী আব্বাস এমপি, মুনিরা বেগম, মাওলানা মুজিবুর রহমান যুক্তিবাদী প্রমুখ।

কাউন্সিলে ‘চলমান প্রতিরোধ সংগ্রামে’ নিজ দলের একাত্মতা ঘোষণা করে কাজী জাফর আহমদ বলেন, ‘সারাদেশে যে প্রতিরোধ সংগ্রাম চলছে এর সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি।’

তিনি বলেন, ‘হয় জাপা নিজে আন্দোলনে যাবে। তা না হলে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে। অথবা বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জোটে যাবে।’

কাউন্সিলে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘সরকার ও এরশাদ যদি যৌথ প্রযোজনায় নাটক করে থাকেন তবে তা হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের নাটক। এ দেশের জনগণ তা বুঝতে পেরেছে। সরকারকে বুঝতে হবে মানুষ এতো বোকা নয়। এ দেশের মানুষ বুকের বক্ত দিয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করেছে। বার বার বুকের রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ দেশের জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছিল। এবারও তারা রুখে দাঁড়াবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এ বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়নি। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে নিচু করা হয়নি? দেখি এখন বাংলাদেশ সরকার কী করে?’

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যেখানে ১৫৭ সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে ভোটের ও গণমানুষের অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এর শুধু প্রতিবাদ নয়, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমরা মার্শাল ল দেখেছি। তখনও এমন অবস্থা ছিলো না। এখন চলছে এক ব্যক্তির শাসন। এ শাসন স্বৈরাচারী শাসনকেও হার মানিয়েছে।’

তিনি এরশাদসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবি জানান।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, ‘১৩ নভেম্বর বি. চৌধুরীর বাসভবনে এরশাদের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছিলো। ১৩ নভেম্বর যদি জানতাম এরশাদ থাকবে তা হলে আমি সেখানে যেতাম না। এতো ধূর্ত মানুষ আমি দেখিনি, বেশি চালাকের গলায় দঁড়ি।’

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘এ দেশের মানুষ হাসিনার শাসন চায় না। এবার দরকার পুরুষ মানুষের সরকার।’

তিনি আরো বলেন, ‘জীবনেও দেখিনি একজন সুস্থ মানুষকে হাসপাতলে ভর্তি করে রাখা হয়। আমি বিস্মিত হয়েছি। তিনি অসুস্থ নন। সেনাবাহিনীতে কোরআন শরীফ নিয়ে শপথ নিতে হয়। এরশাদকে অসুস্থ সাজিয়ে সেনাবাহিনীকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে বাধ্য করার জন্য বর্তমান সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ইশারা ছাড়া লাশ পড়ে না। এখানে যারা হামলা করেছেন তাদের পরিণতি ভালো হবে না।’

রব বলেন, ‘সব কিছুর একটা সীমা আছে। ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন দিয়ে পাওয়া স্বাধীনতা কারো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নয়। আমার ফাঁসি হওয়ার কথা ছিলো, যেহেতু এখনো বেঁচে আছি যেখানেই অন্যায় দেখবো সেখানেই প্রতিরোধ করবো।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ করেছে সাড়ে সাত কোটি মানুষ। কিছু আল-বদর ছাড়া। কথা ছিলো স্বাধীনতার পর গুলি হবে না। মানুষ না খেয়ে মারা যাবে না। আগে ছিলো টাকার ঘুষ, এখন দেয় সিট ঘুষ। সারাদেশের ষোল কোটি মানুষকে বোকা বানানোর জন্য নির্বাচনের আগেই আসন ভাগাভাগি করা হচ্ছে। বিয়ের আগেই বাচ্চা হয়ে গেছে। কখন কী হয় কেউ জানে না। আমরা জানতাম না বঙ্গবন্ধু, মঞ্জু, কর্নেল তাহের এভাবে মারা যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন। চেতনাকে ধূলিসাৎ করে অন্য দেশের স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে।’

আ স ম রব সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করা হবে। আমদানি-রফতানি বন্ধ হবে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে লোকজন প্রত্যাহার করা হবে। আর যেখানে থাকেন সেটাকে দুর্গ বানিয়েছেন, সারাদেশকে কারাগার বানিয়েছেন। ইতিহাস দেখেন, দাসরা শৃঙ্খলিত অবস্থায় যুদ্ধ করেছে। সারাদেশে ভূমিকম্প হবে।’

রব বলেন, ‘শুনলাম সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে। সেনাবাহিনীকে জনগণের কাছে কলঙ্কিত করবেন না। এই সেনাবাহিনীতে আমাদের ভাই-ছেলেরা আছে। তাদেরকে বিতর্কিত করবেন না। যদি আল্লাহ থাকে এর বিচার হবে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা মানসিক রোগগ্রস্ত। ৫ জানুয়ারির প্রতিটি ভোটকেন্দ্র খালি থাকবে। আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, জাপা মহাসচিব গোলাম মসীহ, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম এম আলম, নবাব আব্বাস আলী, ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি, ব্রিগেডিয়ার (অব.) হাসান মাহমুদ, মাওলানা রুহুল আমীন, এইচ এম রেজা এমপি, মাওলানা মুজিবুর রহমান যুক্তিবাদী, মোস্তফা জামাল হায়দার, জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল প্রমুখ।

এদিকে সম্মেলন শুরুর আগে দুপুর ২টার দিকে সরকার সমর্থকরা কাউন্সিল মঞ্চের পাশে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় বলে জাপার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/সাআ/এমএআর/নূরুল/ডিসেম্বর ২০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর