thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

ডেসটিনির বিরুদ্ধে দুদকের ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়

২০১৪ জানুয়ারি ১৬ ২৩:৪৮:৪২

গ্রাহকদের ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ ১ হাজার ১৮২ টাকা আত্মসাৎ এবং তা পাচারের অভিযোগে ডেসটিনির ৫১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুদক।

কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে ডেসটিনির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ওই দুটি মামলার চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

দুদক কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে দুদক ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লি. (ডিটিপিএল) ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের অনুসন্ধান কাজ শুরু করে। প্রায় এক বছরের অধিক সময় তদন্ত করে কমিশনের তদন্ত টিম প্রায় ১ হাজার ৩০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন কমিশনে পেশ করে। কমিশন তা পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার নিয়মিত সভায় বিষয়টি অনুমোদন করে। পরবর্তী সময় এ চার্জশিট থানায় পাঠানো হবে।’

কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জানিয়েছেন, ‘ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশনের আওতায় ৬ কোটির অধিক গাছ (কল্পিত) বিভিন্ন প্যাকেজে সাড়ে ১৭ লাখ গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সরেজমিন দুদকের তদন্তে সাড়ে ৩২ লাখ গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তাদের অপরাধলব্ধ আয় হয়েছে ২ হাজার ৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা পরবর্তী সময়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তরা অভিনব ও কৌশলী প্রতারণা করেছেন। আর ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাড়ে ৮ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত লাভে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।’

কমিশনারের মতে, ‘ডেসটিনির মাত্র ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। যেখানে তাদের আয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধের কথা কল্পনাও করা যায় না।’

দুদক জানায়, দুই মামলায় মোট ৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন উভয় মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন।

দেশে আলোড়ন তোলা এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) কোম্পানি ডেসটিনি প্রতারণার নানা কৌশল প্রয়োগ করে নিরীহ ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুণ্ঠন করেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। যে হিসাব দুদক দিয়েছে, তা লুণ্ঠনের একটি অংশ মাত্র। শুধু অর্থ লুণ্ঠন করেই তারা মানুষের সর্বনাশ করেনি, তারা কোমলমতি ছাত্রছাত্রী, বেকার তরুণ-তরুণীদের শিক্ষা এবং জীবনের স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থেকেও বিচ্যুত করেছে। অনেকেই এদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে একপর্যায়ে প্রতারকে পরিণত হয়েছে। তারা হারিয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা, যা কখনই পুনরুদ্ধার হবে না। বলা যায়, লাখ লাখ তরুণ যুবককে সদস্য করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে যেমন পঙ্গু করেছে, তেমনই তাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিয়েছে। যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুদক চার্জশিট দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে, নিয়মিত মামলায় তাদের সাজা হলেও এই জাতির যে সর্বনাশ ঘটিয়েছে- তা কখনই পুনরুদ্ধার হবে না।

শুধু ডেসটিনি নয়, বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য প্রতারক চক্র এখনও সক্রিয়। একটি বিশেষ চক্রকে আইনের আওতায় আনলেও অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। যদি এই চক্রকে শায়েস্তা করার জন্য দেশের প্রচলিত আইন যথেষ্ট না হয়, আমরা মনে করি দেশের এবং মানুষের স্বার্থে আইন সংশোধন অথবা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এছাড়া এ ধরনের শাস্তির জন্য বিশেষ আদালত গঠন করে দ্রুতবিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেতে পারে। প্রশাসন এ চক্রকে পাকড়াও করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী গঠন করতে পারে।

একটি বা দুটি মামলা দিয়ে সরকার যদি দায়িত্ব পালন করেছে বলে মনে করে, তাহলে জনগণ দুদক এমনকি সরকারকেও সন্দেহের চোখে দেখতে পারে।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert