thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৮ শাওয়াল 1445

দেশে নারী কর্মী ৪০ লাখ ৫১ হাজার

২০১৬ মার্চ ০৭ ২০:৪৬:১৫
দেশে নারী কর্মী ৪০ লাখ ৫১ হাজার

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : দেশের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। শুধু শ্রমিক বা কর্মী হিসেবেই নয়, প্রতিষ্ঠান-প্রধান হিসেবেও বাড়ছে নারীর সংখ্যা। ২০০১ সালে এবং ২০০৩ সালে বাংলাদেশে মোট নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ২৯ হাজার ৪১৩ জন। যা মোট শ্রমিকের ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেটি বেড়ে গিয়ে ২০১৩ সালে পরিচালিত শুমারিতে দেখা গেছে ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৭১৮ জন, যা মোট শ্রমিকের ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাস, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাধান্য, মানুষের মধ্যে সচেতনতা, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায় দিন দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছেন নারীরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ অর্থনৈতিক শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে তা অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য। তা ছাড়া আমরা যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছি এতে করে নারীরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। আশা করছি আগামী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারী-পুরুষের যে বৈষম্য রয়েছে তা দূর হয়ে যাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শিক্ষা, যুক্তি, জনযোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মোপযোগী পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটেছে। সরকার এই পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছে বলেই নারীরা এগিয়ে যেতে পারছে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ভূমিকাও কম নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। বলা যায় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে। বিবিএসের জরিপ থেকে সেটিই ফুটে উঠেছে।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খলিলগঞ্জের বাসিন্দা লতিফা বেগম চাকরি করেন আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায়। তিনি জানান, তার বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই একটি মেয়ে জন্ম নেয়। প্রথম দিকে সংসার কিছুটা ভালো চললেও দুই বছর পার না হতেই স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। এ সময় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আসেন বাবার অভাবের সংসারে। মেয়েকে নিয়ে পড়ে যান বিপাকে। এক পর্যায়ে পরিচিতজনদের সঙ্গে আলোচনা করে চলে আসেন সাভারের আশুলিয়ায়। বর্তমানে পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে চাকরি করে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করেছেন। পাশাপাশি ঘরভাড়া ও নিজের ব্যয় নিজেই নির্বাহ করতে পারছেন।

লতিফা বলেন, কর্মক্ষেত্রে কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আমি চাকরি করে সম্মানের সঙ্গেই আছি।

অর্থনৈতিক শুমারি প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, শুধু শ্রমিকই নয়, প্রতিষ্ঠান-প্রধান হিসেবে মহিলাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সবশেষ শুমারির সময় ২০১৩ সালে দেশে মোট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মহিলা-প্রধান প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬৮টি, যা মোট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০০১ এবং ২০০৩ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১ লাখ ৩ হাজার ৮৫৮টি, যা মোট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২ দশমিক ৮০ শতাংশ। এতে দেখা যাচ্ছে, এক দশকে প্রতিষ্ঠান-প্রধান হিসেবে মহিলাদের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা দ্য রিপোর্টকে বলেন, নারীরা এগিয়ে চলছে, তবে এই চলার পথ মসৃণ নয়, নানা বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আমরা নিজেদের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি। খাড়া পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে এ দেশের নারীদের। তারপরও অদম্য নারীরা থেমে যায় না। এগিয়ে চলে সামনের পথে।

সূত্র জানায়, সরকার নারীদের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে শুরু থেকেই নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যেই ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় নারীবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় জেন্ডার ভিশনে বলা হয়েছে, একটি স্বাধীন দেশ যেখানে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকার থাকবে এবং যেখানে নারীরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে সমান অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত হবে। পরিকল্পনায় নারীর ক্ষমতায়নে ও জেন্ডার সমতা নির্ধারণে চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রথমত, নারীর সামর্থ্য উন্নীতকরণ, দ্বিতীয়ত নারীর অর্থনৈতিক প্রাপ্তি বৃদ্ধিকরণ, তৃতীয়ত নারীর মত প্রকাশ ও মতামত প্রকাশের মাধ্যম সম্প্রসারণ এবং নারীর উন্নয়নে একটি সক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টিকরণ।

এ বিষয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে জানান, সরকার দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং দারিদ্র্যের হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান সরকার পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে। সরকারের পূর্ব ও বর্তমান মেয়াদকালে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ সময়কালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝেও অর্জিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারের দক্ষ সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার ফলে রাজস্ব আহরণে ঊর্ধ্বগতি এবং ঋণ গ্রহণে স্থিতিশীলতা রজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। প্রতিবেশী ও সমমানের রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

সূত্র জানায়, লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। দি গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুসারে ২০১৪ সালে ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৮তম। শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের পেছনে। এ ছাড়া নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২টি দেশের মধ্যে দশম।

চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বলা হয়েছে, অসহায়, অবহেলিত ও প্রতিবন্ধী নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, আত্মকর্মসংস্থানে ক্ষুদ্রঋণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা এবং জেন্ডার সংবেদনশীল আইনি কাঠামো, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের ফলে নারীরা ধীরে ধীরে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে কর্মরত নারীর সংখ্যা ২০০৬ সালে ছিল ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন, ২০১৩ সালে তা ১৬ দশমিক ৮ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। নারী সমাজের শ্রম, মেধা ও মননকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এএসটি/এম/মার্চ ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর