thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতারে পুলিশকে যা মানতে হবে

২০১৬ মার্চ ১৭ ২১:০৯:০৬
পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতারে পুলিশকে যা মানতে হবে

খাদেমুল ইসলাম

আমাদের দেশে সন্দেহভাজন গ্রেফতার প্রসঙ্গটি প্রায়ই আলোচনায় থাকে। তাই ৫৪ ধারায় গ্রেফতার কথাটি বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত। সাধারণভাবে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে হলে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা (অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট) লাগবে। তবে কখনো কখনো পুলিশ পরোয়ানা ছাড়াই কাউকে গ্রেফতার করতে পারে।

পুলিশ কখন পরোয়ানা ছাড়াই কোনো ব্যক্তিকে গেফতার করতে পারেন, তা সুস্পষ্টভাবে প্রত্যেক নাগরিকের জানা থাকা দরকার। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ থেকে ৬৫ ধারা পর্যন্ত বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এ-সংক্রান্ত সম্পর্কে আইনের বিধান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলো।

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের কারণ : ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী কাউকে গ্রেফতার করতে হলে নিম্নলিখিত কারণের উপস্থিতি থাকতে হবে।

প্রথমত: কোনো আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে কোনো ব্যক্তি যুক্ত থাকলে বা যুক্ত থাকার যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ থাকলে বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকলে অথবা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ থাকলে।

দ্বিতীয়ত: আইনসঙ্গত কারণ ব্যতীত যার নিকট ঘর ভাঙার কোনো সরঞ্জাম রয়েছে।

তৃতীয়ত: এই বিধি অথবা সরকারের আদেশ দ্বারা যাকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়েছে।

চতুর্থত: যার নিকট চোরাই মাল রয়েছে বলে সন্দেহ হয় এবং এইরূপ মাল সম্পর্কে কোনো অপরাধ করেছে বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যেতে পারে।

পঞ্চমত: পুলিশ অফিসারের কাজে বাধাদানকারী ব্যক্তি অথবা আইনসঙ্গত হেফাজত থেকে পলায়ন করলে বা পলায়নের চেষ্টা করলে।

ষষ্ঠত: বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী হতে পলায়নকারী বলে যাকে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যেতে পারে।

সপ্তমত: বাংলাদেশে করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতো, দেশের বাইরে এরূপ কোনো অপরাধ করলে বা এরূপ অপরোধে জড়িত বলে যার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ রয়েছে বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে, অথবা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ রয়েছে এবং যার জন্য সে প্রত্যর্পণ-সম্পর্কিত আইন বা ১৮৮১ পলাতক অপরাধী অনুসারে বা অন্য কোনোভাবে বাংলাদেশে গ্রেফতার হতে বা হেফাজতে আটক থাকতে বাধ্য।

অষ্টমত: কোনো মুক্তিকামী আসামী যে ৫৬৫(৩) ধারা অনুযায়ী প্রণীত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করে।

নবমত: যাকে গ্রেফতারের জন্য অন্য কোনো পুলিশ অফিসারের নিকট হইতে অনুরোধ পাওয়া গিয়েছে। তবে যাকে গ্রেফতার করা হবে তার অপরাধ বা অন্য যে কারণে গ্রেফতার করা হবে, সেই ব্যাপারে অনুরোধে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় এবং এই মর্মে প্রমাণ হয় যে উক্ত ব্যক্তিকে অনুরোধকারী কর্মকর্তা বিনা পরোয়ানায় তাকে গ্রেফতার করতে পারবেন।

বিনা পরোয়ানায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গ্রেফতার ক্ষমতা: ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারা অনুযায়ী নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের গ্রেফতার বা গ্রেফতারের ব্যবস্থা নিতে পারেন:

ক. ওই থানা এলাকার মধ্যে কোনো ব্যক্তি নিজের উপস্থিতি গোপন করতে সাবধানতা গ্রহণ করছে; যার ফলে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাযোগ্য হয় যে, কোনো আমলযোগ্য অপরাধের কারণেই সে এরূপ সাবধানতা অবলম্বন করছে।

খ. থানা এলাকার মধ্যে কোনো প্রকাশ্য জীবিকা নাই এমন কোনো ব্যক্তিকে বা নিজের সম্পর্কে সন্তোষজনক বিবরণ দিতে পারে না এমন কোনো ব্যক্তিকে।

গ. অভ্যাসগতভাবে ডাকাত, গৃহভঙ্গকারী অথবা চোর বলে পরিচিত অথবা চোরাই বলে জেনেও অভ্যাসগতভাবে মাল গ্রহণের দুর্নাম রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তিকে অথবা অভ্যাসগতভাবে বলপূর্বক আদায় করে বলে পরিচিত বা অভ্যাসগতভাবে বলপূর্বক গ্রহণের উদ্দেশ্যে অন্যকে আঘাতের ভীতি প্রদর্শন করে বা করার চেষ্টা করে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধস্তন কর্মকর্তার মাধ্যমে গ্রেফতারের পদ্ধতি: এরূপ ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধস্তন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন তখন তাকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যা ফৌজাদারি কার্যবিধির ৫৬ ধারায় বর্ণিত হয়েছে।

এই ধারা অনুযায়ী যে অপরাধ বা অন্য যে কারণে গ্রেফতার করা হইবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ করে ওই অধস্তন অফিসারের নিকট ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একটি লিখিত আদেশ প্রদান করবেন। ওই অফিসার যাকে গ্রেফতার করা হইবে তাকে গ্রেফতারের পূর্বে আদেশের বিষয়বস্তু জানাবেন এবং সে দেখতে চাইলে আদেশটি দেখাবেন।

নাম ও পরিচয় প্রদানে অনিচ্ছুক ব্যক্তিকে গ্রেফতার : কোনো ব্যক্তি নাম, পরিচয় ও বাসস্থান সম্পর্কে জানাতে অস্বীকৃতি জানালে এই আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারবে। এই ধারায় বলা হয়েছে-

(১) যখন কোনো ব্যক্তি কোনো পুলিশ অফিসারের সামনে আমলযোগ্য অপরাধ করে বা অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং উক্ত অফিসার দাবি করলে নিজের নাম ও বাসস্থান জানাতে অস্বীকার করে বা এমন নাম ও বাসস্থানের কথা উল্লেখ করে যা উক্ত অফিসার যুক্তিসঙ্গতভাবে মিথ্যা বলে মনে করেন। তখন তার নাম বা বাসস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে উক্ত অফিসার তাকে গ্রেফতার করতে পারেন।

(২) এইরূপ ব্যক্তির প্রকৃত নাম ও বাসস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে প্রয়োজনবোধে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির হওয়ার উদ্দেশ্যে জামিনদারসহ বা জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা প্রদানের পর তাকে ছেড়ে দিতে হবে।

তবে তবে এরূপ ব্যক্তি বাংলাদেশের বাসিন্দা না হইলে এক বা একাধিক ব্যক্তির তার মুচলেকার জামিনদার হতে হবে।

(৩) গ্রেফতার বা গ্রেফতারের সময় হতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম ও বাসস্থান না পাওয়া গেলে বা সে যদি মুচলেকা প্রদানে ব্যর্থ হয় বা প্রয়োজন মতে জামিনদার সংগ্রহে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অগ্রবর্তী করিতে হবে।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যতক্ষণ পুলিশ হেফাজতে রাখা যাবে :

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুলিশি হেফাজতে রাখার সময়সীমা সম্পর্কে কার্যবিধির ৬১ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতাকৃত কোনো ব্যক্তিকে সামগ্রিক বিবেচনায় যুক্তিসঙ্গত সময় অপেক্ষা অধিককাল আটক রাখবেন না। এবং ১৬৭ ধারা অনুযায়ী কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ না থাকলে এইরূপ সময় গ্রেফতারের স্থান হতে আদালতে যাওয়ার সময় বাদে ২৪ ঘণ্টার অধিক হবে না।

গ্রেফতার সম্পর্কে পুলিশ রিপোর্ট :

কার্যবিধির ৬২ ধারা অনুযায়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ মেট্রোপলিটন এলাকায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্য এলাকায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট তাদের স্ব স্ব এলাকার মধ্যে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারকৃত সমস্ত ব্যক্তি এবং তাদের জামিন দেওয়া হয়েছে কি না তৎসম্পর্কে রিপোর্ট প্রদান করবেন।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে অব্যাহতির নিয়ম:

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে অব্যাহতির নিয়ম সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধির ৬৩ ধারায় বলা হয়েছে।

এই ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি কোনো পুলিশ অফিসার কর্তৃক গ্রেফতার হলে তাকে নিজের মুচলেকায় অথবা জামিনে বা কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বিশেষ আদেশ ব্যতীত ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর