thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

‘গাঁওত কাম নাই, পেটে ভাত নাই’

২০১৬ অক্টোবর ১৬ ২২:১৫:৩২
‘গাঁওত কাম নাই, পেটে ভাত নাই’

দিনাজপুর প্রতিনিধি : ‘গ্রামের ২০ বিঘা জমিয়ালা সীতারাম পায় ১০ টাকা কেজি চাল আর হামার ঘরে চাল নাই, ধারদেনা করে কোনোমতে সংসার চলে। গাঁওত কাম নাই, পেটে ভাত নাই, ঋণ করে সংসার চলে। তাও হামার চেয়ারম্যান, মেম্বাররা হামাক চালের কার্ড দেয় না। ৬১ বছর হয়ছে, ৬৫ বছর হয় নাই, তাই বয়স্ক ভাতার কোনো কার্ডও পাই না।’

ক্ষোভ আর আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন বিরামপুর উপজেলা কাটলা ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা রনগাঁও গ্রামের ৬১ বছরের বৃদ্ধ মফিজ উদ্দীন।

হতদরিদ্র নাগরিকদের কষ্ট লাঘবে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি চালের রেশন কার্ড প্রকল্প চালু করলেও রনগাঁও গ্রামের ১৮ জন হতদরিদ্র লোক এই কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় জেলা ও উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যর কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের ঘাসুড়িয়া, চৌঘুরিয়া, রনগাঁও, গ্রামের বেশির ভাগ শ্রমজীবী মানুষ মাঠে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্তমানে মাঠে কাজ না থাকায় তারা আগাম শ্রম বিক্রি এবং ঋণ করে কোনোমতে সংসার চালায়। এসব গ্রামের অনেকেই ১০ টাকা কেজি চালের রেশন কার্ড পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মফিজ উদ্দীন জানান, তার থাকার মত নিজের ঘর নেই। থাকেন অন্যের ঘরে। ৪ জনের সংসার তার। জীবিকার তাগিদে এখনো অন্যের জমিতে কাজ করে কোনমতে সংসার চালান। দিনে আয় করেন ১শ’ পঞ্চাশ টাকা থেকে ১শ’ সত্তর টাকা। ১০ টাকা কেজি চাল না পাওয়ায় তিনি এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ওই গ্রামের বৃদ্ধ আজিমুদ্দীন (৬০) জানান, দুই শতক জমির উপর তার বসতবাড়ি। এক মেয়ে জুলেখা বিবি ৩ বছর আগেই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। মেয়ে, নাতি-নাতনি, স্ত্রীসহ মোট ৬ জনের সংসার। বৃদ্ধ বয়সে মানুষের জমিতে কামলা দিয়ে এত বড় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। ১০ টাকা কেজি চালও পাই না। বাধ্য হয়ে আগাম শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি।

রনগাঁও গ্রামের তাহমিনা বেগম ৪ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। বর্তমানে দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনমতে সংসার চালান। তিনি বলেন, কোন বিধবা ভাতা বা সরকারি কোন অনুদান পাই না। কষ্ট করে জীবন চলে।

কাটলা ইউপির ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নুরুজ্জামান হোসেন বলেন, এ বিষয়ে জানি। বিধবা ভাতার কার্ড আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কাটলা ইউপি চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, আমি নতুন চেয়ারম্যান হয়েছি। ১০ টাকা কেজি চালের তালিকা নির্বাচনের আগেই ইউপি সচিব মশিউর রহমান তৈরি করায় অনেক ভুল ছিল। নতুন তালিকায় যোগ্যদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তবে বিধবা ভাতার কার্ড এলে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এবং মহিলা সদস্য নিয়ে যাচাই করে তাদের কার্ড প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এপি/এনআই/অক্টোবর ১৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর