thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

১১ দাবি উত্থাপন

খুলনায় জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে প্রতীকী সম্মেলন

২০১৬ অক্টোবর ২৫ ১৭:৩০:৫০
খুলনায় জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে প্রতীকী সম্মেলন

খুলনা ব্যুরো : পেছনে সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশি। জলরাশির উপরিভাগে একটি টেবিলে বসে সভা করছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী আটটি দেশের রাষ্ট্রনেতারা। তাদের পা ডুবে আছে সমুদ্রের পানির স্ফীতিতে। তারপরও তারা জলবায়ু পরিবর্তনের দায় নিতে রাজি নন। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন ব্রিকসভুক্ত চারটি দেশের রাষ্ট্রনেতারা। এদের দুজন হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রনেতাদের। অন্য দুজন একটি প্ল্যাকার্ড ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। যাতে লেখা আছে, ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ইজ রিয়েল, সো হোয়াট?’ অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা সত্য, তাতে আমাদের কী? সভাস্থলের প্রবেশপথে বিশ্বব্যাংক ও এর সহযোগীদের সৌজন্যে নির্মাণ করা হয়েছে জি-৮ সম্মেলন উপলক্ষে সাজানো একটি তোরণ। জলবায়ু ঋণের বিজ্ঞাপনও দেওয়া আছে ওই তোরণে। পাশাপাশি সভাস্থলের দুপাশে শতাধিক তরুণ ব্যানার প্ল্যাকার্ড নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দেওয়া উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) খুলনার রূপসা নদীর চরে প্রতীকী জি-৮ সম্মেলনস্থলে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। আগামী ৭ থেকে ১৮ নভেম্বর মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-বিরোধী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (কপ-২২) জলবায়ু বিষয়ে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ প্রতীকী প্রতিবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তিনটি পরিবেশবাদী সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো- উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)।

প্রতীকী প্রতিবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, প্যারিস চুক্তিতে শিল্পোন্নত ও অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলো যে ঐচ্ছিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাতে পৃথিবীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই দেশগুলো ঐচ্ছিকভাবে কার্বন নির্গমনের জন্য কিছু বলা যাবে না, তারা ঐচ্ছিকভাবে কার্বন নির্গমন কমাবে অথচ সম্মিলিতভাবে তারা পৃথিবীর ৭৭ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। অপরদিকে, শিল্পোন্নত দেশগুলো সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ)-এ প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬ বছরে মাত্র ১ হাজার কোটি ডলার দিয়েছে। কিন্তু এই টাকার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে জিসিএফ থেকে বরাদ্দ দেয়া ১০০ কোটি ডলারের শতকরা ৯০ ভাগ টাকাই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক পেয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ ও দেশগুলোর সরাসরি তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন জলবায়ুখাতে ঋণ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘকে ব্যবহার করছে। এভাবে তারা জলবায়ু-দুর্গতদের দুর্ভোগ ব্যবহার করে ঋণবাণিজ্য গড়ে তুলছে।

অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে থাকলেও উন্নত বিশ্ব এ বিষয়ে ক্ষমাহীন নীরবতা প্রদর্শন করে যাচ্ছে বলে প্রতীকী প্রতিবাদ সম্মেলনে বক্তারা উল্লেখ করেন।

প্রতীকী প্রতিবাদ সম্মেলন থেকে আসন্ন ২২তম জলবায়ু সম্মেলনে উত্থাপনের জন্য ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিল্পোন্নত ও অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা যথেষ্ট মাত্রায় বৃদ্ধি করা; নির্গমন কমানোর পরিমাণ যাচাই করার জন্য পরিবীক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা; প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা; জলবায়ু পরিবর্তনখাতে ঋণদান বন্ধ করা; সবুজ জলবায়ু তহবিলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সরাসরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা; আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনা, বরাদ্দ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করা; জলবায়ু-বাস্তুচ্যুতদের উন্নত দেশে স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের অধিকার দেওয়া; জলবায়ু-দুর্যোগের তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন করা; জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য জাতিসংঘের অধীনে বিশেষ সংস্থা গড়ে তোলা এবং জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা।

ক্লিন-টিআইবি-সনাক ওয়ার্কিং গ্রুপের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদার সভাপতিত্বে আয়োজিত প্রতীকী প্রতিবাদ সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার ফিরোজ উদ্দীন, ইয়েস সদস্য সুস্মিত সরকার, এসএম মামুনুর রশীদ, ক্লিন-এর নাসিম রহমান কিরণ, সুবর্ণা ইসলাম দিশা প্রমূখ।

(দ্য রিপোর্ট/এস/এপি/এম/অক্টোবর ২৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর