thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

বেকার ৩ হাজার শ্রমিক

নীলফামারীতে ধ্বংসের পথে চলচ্চিত্রশিল্প

২০১৬ ডিসেম্বর ০৫ ১৭:৩১:৩৭
নীলফামারীতে ধ্বংসের পথে চলচ্চিত্রশিল্প

মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, নীলফামারী : ডিশ ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের প্রভাবে নীলফামারীর ২২টি সিনেমা হলের মধ্যে ১৯টি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে। এই সিনেমা হলগুলোতে শ্রমিক-কর্মচারির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারা।

কিছুদিন আগেও মানুষ বিনোদনের জন্য ছুটে যেত সিনেমা হলগুলোতে। সিনেমা হলগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। নতুন ছবি এলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই বিনোদনের জন্য সিনেমা হলে ছুটে যেতো। বেদের মেয়ে জোছনা, বাংলার বধূ, ভাত দে, সারেং বৌ-এর পাশাপাশি খায়রুন সুন্দরীর মতো সিনেমা চলতো মাসের পর মাস। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার মজাই ছিল আলাদা। বোনের বা ভাইয়ের বিয়ে হলে সবাই তাদের কাছে বায়না ধরতো নতুন সিনেমা দেখার। আবার অনেকেই ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার (ভিসিআর) বা ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ার (ভিসিপি) ভাড়া করে সবাইকে নিয়ে দেখত নতুন নতুন সিনেমা। অনেকেই নতুন ছবি দেখার জন্য এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় ছবি দেখতে যেতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ তা অতীত। এখন ছবি দেখার জন্য কাউকে সিনেমা হলে যেতে হয় না। পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখার দিন কবেই শেষ হয়ে গেছে। অশ্লীলতা যখনই গ্রাস করেছিল ছবিতে, তখন থেকেই মানুষ পরিবার নিয়ে ছবি দেখা ছেড়ে দিয়েছে। এখন বাড়িতে টেলিভিশনের ডিশ লাইনের মাধ্যমে, মোবাইলে বিভিন্ন দেশের সিনেমা ডাউনলোড করে অবসরে উপভোগ করছে সাধারণ মানুষ। এখন কেউ আর অপেক্ষোয় থাকে না কোন হলে কোন ছবি। কোন ছবিতে জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা রয়েছে বা কোন ছবিতে রয়েছে নামকরা ভিলেন। অনেকেই জানেন না নতুন নায়ক-নায়িকার নাম। ডিশ লাইন এবং ডিশের মাধ্যমে নিজস্ব চ্যানেলে নতুন নতুন ছবি দেখানোর ফলে মানুষ হলবিমুখ হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অধিকাংশ দর্শক।

আলম নামে এক সিনেমা দর্শক দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ডিশের প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে প্রতিদিন একাধিক ছবি দেওয়া হয়; তা ছাড়া ডিশের নিজস্ব চ্যানেলে নতুন নতুন ছবি দেখানোর ফলে মানুষ আর সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখে না। দর্শকশূন্যতার কারণে নীলফামারীতে ২২টি সিনেমা হলের মধ্যে ১৯টি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।

নীলফামারীর জনপ্রিয় সিনেমা হলের মধ্যে রয়েছে গ্যারিসন, লিবার্টি, মায়া, কনিকা, মমতাজ ও মুন। গ্যারিসন সিনেমা হলে ছবি চললেও লিবার্টি হল বন্ধ করে সেখানে শপিং মল করা হয়েছে তেমনি মায়া ও মুন সিনেমা হল বন্ধ করে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। ডোমার উপজেলায় ৫টি সিনেমা হল থাকলেও ৪টি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে শুধুমাত্র কনিকা সিনেমা হল খোলা রয়েছে। কনিকা সিনেমা হল খোলা থাকলেও লোকসান গুনতে গুনতে তা আজ বন্ধের পথে। মায়া সিনেমা হল বন্ধ হয়ে সেখানে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ডিমলা উপজেলায় ৪টি, জলঢাকায় ১টি, কিশোরগঞ্জে ৪টি সিনেমা হল থাকলে ও সবগুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে কেউ দোকান আবার কেউ গোডাউন করে ভাড়া দিয়েছেন। অধিকাংশ সিনেমা হলের মালিক শপিংমল, মার্কেট ও গোডাউন করে ভাড়া দিয়েছেন। আর যে ৩টি সিনেমা হল রয়েছে তারাও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অন্য ব্যবসায় যেতে না পেরে বাধ্য হয়ে তারা পরে রয়েছেন এ ব্যবসায়।

মায়া সিনেমা হলের মালিক আব্দুল খালেক দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দর্শকশূন্যতা এবং ডিশ চ্যানেলে ছবি দেখার ফলে মানুষ ছবি দেখা ছেড়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিনেমা হল বন্ধ করে তিনি মার্কেট করে দোকান ভাড়া দিয়েছেন। সিনেমা হল বন্ধ করায় প্রায় ৩০ জন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

কনিকা সিনেমা হলের মালিক মো. জোয়াস রহমান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, লোকসান গুনে সিনেমা চালাতে হচ্ছে। এখন আর কেউ হলমুখী হচ্ছেন না। তাই আর কিছুদিন দেখার পর সিনেমা হলটি বন্ধ করে দিতে হবে।

মো. আব্দুল্লাহ ইবনে খালিদ নামে এক সিনেমা দর্শক দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অশ্লীলতা, চ্যানেলে একাধিক ছবি প্রচার আর ভারতীয় আগ্রাসনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সিনেমা হলগুলো। তিনি বলেন, একসময় মানুষের মধ্যে সিনেমা দেখার যে আগ্রহ ছিল তা এখন হারিয়ে গেছে। কাঙ্ক্ষিতা ও শিরিন মামুন নামে দুজন দর্শক জানান, এখনো সিনেমাশিল্পকে বাঁচানো সম্ভব।

তবে ভালো গল্প, সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডিশ চ্যানেলে সপ্তাহে এক দিন সিনেমা এবং ভারতীয় সিনেমা আমদানি বন্ধ করলে আবারো মানুষ সিনেমা হলমুখী হতে পারে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।

(দ্য রিপোর্ট/এস/এম/এপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর