thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মে 24, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৩ শাওয়াল 1445

৩০ হাজার টাকায় ধামাচাপার চেষ্টা

বরিশালে স্কুলছাত্রীকে আট দিন আটকে রেখে নির্যাতন

২০১৬ ডিসেম্বর ১০ ২০:৩০:৫৮
বরিশালে স্কুলছাত্রীকে আট দিন আটকে রেখে নির্যাতন

বরিশাল অফিস : বরিশালে পঞ্চম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে (১৩) আট দিন আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনা ৩০ হাজার টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পর পুলিশ ওই ছাত্রীকে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে গেছে।

মহসিন নামে এক গাড়িচালক গত ২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। মহসিনের গাড়ির হেলপার মাসুদের স্ত্রী মালিয়া এই কাজে মহসিনকে সহযোগিতা করে বলেও অভিযোগ করেছে ওই ছাত্রীর পরিবার।

পরিবারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, তাদের বাসার সামনেই বরিশাল নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিল আ ন ম সাইফুল আহসান আজিমের টোটাল গ্যাসের দোকান। মহসিন ওই দোকানের গাড়ি চালায়।

স্থানীয়রা জানান, মহসিন বরিশাল শহরের কাজীপাড়া মুন্সিবাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকে। তার বাড়ি মাদারীপুরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।

ছাত্রীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাড়ির হেলপার মাসুদের স্ত্রী মালিয়া ও ওই ছাত্রী একসঙ্গে আরবি পড়ত। গত ২ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় আরবি পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে ওই ছাত্রীকে আচার খাওয়ায় মালিয়া। আচার খেয়ে আচেতন হয়ে পড়ে সে। আচেতন হওয়ার পর মহসিন বাসে করে ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন শনিবার বেলা ১২টার দিকে ছাত্রীটির জ্ঞান ফেরার পর সে জানতে পারে যে, সে এখন মাদারীপুরে মহসিনের বোনের বাড়িতে আছে।

আট দিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার ওই ছাত্রীকে বাসায় পৌঁছে দেয় মহসিনের স্ত্রী ছালমা।

ওই ছাত্রীর মা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে মেয়েকে কোথাও না পেয়ে দুই দিন পর কোতোয়ালি থানায় জিডি করি। সন্দেহ করে মহসিনের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে সে জানায় ঢাকায় আছে। মহসিনের দেওয়া ঠিকানায় স্বামীকে পাঠানোর পর মহসিনকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে মহসিনের বড় স্ত্রী ছালমাকে চাপ দিলে শুক্রবার রাত ১০টায় মাদারীপুর থেকে আমাদের মেয়েকে এনে বাসায় দিয়ে যায়। এরপর আমরা ছালমাকে আটকে রাখি।’

ওই ছাত্রীর মা আরও বলেন, ‘পরদিন সকালে (শনিবার সকালে) স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর ও অন্যান্য লোকেরা এসে সালিশ করার কথা বলে ছালমাকে নিয়ে যায়। আর আমাদের বলে, যা হওয়ার হয়েছে, ইজ্জতের বিষয়, ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, ওই নিয়ে চুপচাপ থাকো।’

সালিশিদের মধ্যে একজন স্থানীয় মুদি দোকানি মিজানুর রহমান। তিনি দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘মহসিন ৩টি বিয়ে করেছে। এজন্য ওর সাথে মেয়েটির (ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর) বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না ভেবে বিচার করে আর্থিক জরিমানা করেছি। মেয়ের বাবা বিয়ের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা চাইলে মহসিন বলেছে, মামা টাকাতো খরচ হয়ে গেছে, ৩০ হাজার টাকা দিতে পারব। সেই অনুযায়ী ত্রিশ হাজার টাকায় রফা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমি এমনিতেই অসহায়। চায়ের দোকানদারি করি। অপরদিকে সাবেক কাউন্সিলর আজিম ভাই ও আরো লোকেরা সালিশি করায় ওই সময় কিছু বলতে পারিনি। তবে আমি এ ঘটনায় বিচার চাই।’

নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ খান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের মতো এই ঘটনা সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়ার নয়। এর আগে জিডি হওয়ার পর আমরা বিভিন্ন থানায় সংবাদ পাঠিয়েছি। এখন শিশুটিকে উদ্ধার করে ভিক্টিম সার্পোট সেন্টারে রাখা হয়েছে। এরপর তার অভিভাবকদের মাধ্যমে মামলা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় ন্যায়বিচারের জন্য যা করা প্রয়োজন তার সব করা হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/এস/জেডটি/এম/ডিসেম্বর ১০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর