thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৮ শাওয়াল 1445

বিদেশি মদ ইয়াবা নগদ টাকাসহ আটক ১৫

চট্টগ্রামে বহিষ্কৃত ওসির গেস্টহাউসে অবাধ যৌন ও মাদক ব্যবসা

২০১৭ জানুয়ারি ১৯ ১১:৩৫:২৭
চট্টগ্রামে বহিষ্কৃত ওসির গেস্টহাউসে অবাধ যৌন ও মাদক ব্যবসা

চট্টগ্রাম অফিস : বন্দর নগরীর অভিজাত এলাকা খুলশীতে বহিষ্কৃত এক পুলিশ কর্মকর্তার মালিকানাধীন গেস্ট হাউজে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসামাজিক কাজকর্ম ও মাদক ব্যবসা চলে আসছিল।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সদরঘাট থানার বহিষ্কৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুলের মালিকাধীন ‘ইয়ারা গেস্ট হাউজ’ নামে ওই স্থানে দেহ ব্যবসা, মাদক, অভিজাত শ্রেণীর যুবক যুবতীদের অবাধ যৌনতা চলত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। গেস্ট হাউজের মালিক পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় কখনো ধরাপড়ার ভয় ছিল না এ গেস্ট হাউজে যাতায়াতকারীদের।

কিন্তু বুধবার বিকেলে ‘মধুকুঞ্জ’ নামে খ্যাত ওই গেস্ট হাউজে মাদকবিরোধী আভিজান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান চালাতে গিয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত আবিষ্কার করে বহিষ্কৃত ওই ওসির মালিকানাধীন গেস্ট হাউজে চলছে অসামাজিক কর্মকাণ্ড এবং মাদক ব্যবসা।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে খুলশীতে হাবিব লেনের এ মধুকুঞ্জে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে চার বোতল ভতকা, বিশ পিস ইয়াবা, ইয়াবা ও সীসা সেবনের সরঞ্জাম এবং এক লাখ চুয়াল্লিশ হাজার নয়শত নব্বই টাকা। আটক করা হয় ১১ যুবতিসহ ২৬ জনকে। পরে যুবতিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান জানান, অসামাজিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে আটক করা হয় ১৫ জনকে। পরে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জানা গেছে, খুলশীর ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারের পাশের গলি হাবিব লেন। এই লেনের শেষ মাথায় পাঁচ তলার এক বিল্ডিংয়ে ওসি মাঈনুল গড়ে তুলেছেন ‘ইয়ারা গেস্ট হাউজ’। নিচতলায় অফিস, দুই থেকে পাঁচ তলায় বিভিন্ন রুমে চলে দেহ ব্যবসা।

যেহেতু ওসির গেস্ট হাউজ সেহেতু পুলিশ, র‌্যাব, কিংবা মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের অভিযানের কোনো ভয় ছিল না। প্রকাশ্যে এ গেস্ট হাউজে যৌনচার চলে আসলেও কেউ মুখ খোলার সাহসও পেত না।

তবে বুধবার ঘটনাচক্রে মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়েই জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত আবিষ্কার করেন ওসি মাঈনুলের তত্ত্বাবধানে চলে আসা আসামাজিক কর্মকাণ্ডের আখড়া ‘ইয়ারা গেস্ট হাউজ’।

এর পরপরই ভবনটি ঘেরাও করে শুরু হয় পুলিশি অভিযান। প্রতি রুমে পাওয়া যায় ইয়াবা তৈরির সরঞ্জাম। নিচ তলার এক লকার থেকে চার বোতল ভতকা ও একটি কেবিন ভাঙা হলে সেখান থেকে এক লাখ নয়শত নব্বই টাকা পাওয়া যায়। পাওয়া যায় বিভিন্ন সময় এ হোটেলে আসা ব্যক্তিদের তালিকা। কল গার্লের তালিকা, বিভিন্ন তারিখে তাদের দেওয়া টাকা ও টোকেন।

হোটেলের মেয়েদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি পুরুষের কাছ থেকে হোটেলের মালিক এক হাজার টাকা করে নেয়, আর মেয়েদের দেওয়া হয় ৫০০ টাকা করে। জীবনের তাগিদে তারা এ রাস্তায় এসেছেন। তাদের কেউ ঢাকা থেকে আসেন, কেউ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে। প্রাথমিকভাবে আটক হওয়া ১১ জন মেয়ের বয়স ২০ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত। পরবর্তীতে মানবিক বিবেচনায় সতর্ক করে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অভিযানকালে ট্রাকমালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টরবৃন্দ ও নবম এপিবিএনের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, সন্দ্বীপের মগদারা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ববি এ ব্যবসার সাথে জড়িত। তার পকেট থেকে তার ভাগের চুয়াল্লিশ হাজার টাকা পাওয়া যায়। দালাল মো. মাসুম ও দালাল জাহাঙ্গীরকে ছয় মাস, পারভেজকে এক মাস, মো. ইউসুফ, মানিক ও বাহার আমজাদ, জাকারিয়া শাহাবুদ্দিনি, ইমরানকে পনের দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাবুর্চি তাহের (৬২), তার সহকারী নিত্য বড়ুয়াকে (৫৮) মানবিক ও বয়স বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দারোয়ান বাশারকে (৩৫) এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অভিযানের সময় টেরপেয়ে পালিয়ে যায় নোয়াখালীর আলমগীর (৪৮), কক্সবাজারের গণি হোটেলের ম্যানেজার আলম ও বাবুল।

(দ্য রিপোর্ট/এস/এইচ/জানুয়ারি ১৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর