thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

উন্মুক্ত হলো মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

২০১৭ জানুয়ারি ১৯ ২২:০৯:৫৬
উন্মুক্ত হলো মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত হলো মালয়েশিয়ার বৈদেশিক শ্রমবাজার। শুরুতেই প্লান্টেশন খাতে ৮-১০ হাজার কর্মী নিতে ‘চাহিদাপত্র’ পাঠিয়েছে দেশটি। দেশের জনশক্তি রফতানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চুক্তিপত্রে সই করার অধিকার পাচ্ছেন মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীরা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, চাহিদাপত্র পাওয়ার মাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলো। বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড বা অনলাইন পদ্ধতিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মীর প্রথম ব্যাচ মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়তে পারে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর মো. সাইদুল ইসলাম চাহিদাপত্র হাতে পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি, তাই পরীক্ষামূলকভাবে আমরা কিছু কাজ সত্যায়ন করছি। অনলাইন সিস্টেম ওকে থাকলে শিগগিরই মোটাদাগে কর্মী পাঠানো শুরু হবে।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জাবেদ আহমেদ বৃহস্পতিবার রাতে দ্য রিপোর্টকে বলেন, মালয়েশিয়ায় আমাদের হাইকমিশনে চাহিদাপত্র এসেছে বলে শুনেছি। এটির ফলে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে গেল।

চাহিদাপত্র কি পরিমাণ এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে সংখ্যা বলতে পারব না। শুনেছি কমপক্ষে ৫-৬ হাজার এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের এখনো দূতাবাস জানায়নি তো, তাই প্রকৃত সংখ্যাটা বলতে পারছি না এই মুহূর্তে।

তবে, অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কমপক্ষে ৮-১০ হাজার চাহিদাপত্র এসেছে।

এর আগে কর্মী নেওয়ার সব প্রস্তুতির কথা জানিয়ে গত ১২ জানুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে সব ধরনের কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মালয়েশিয়া। দ্রুত বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে তৎপর হতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। গত ১৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়া সরকারের চিঠির জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। জবাবে বাংলাদেশও প্রস্তুত বলে জানানো হয়। উভয় দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতির পর অবেশেষে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলো।

বিগত ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ রেখে উভয় দেশের মধ্যে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির পরের দিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। কয়েক মাস আগে বিদেশি কর্মী না নেওয়ার ঘোষণাটি প্রত্যাহারের পর ‘জিটুজ প্লাস’ চুক্তির আলোকে কর্মী প্রেরণের বিষয়টি আবারও সামনে আসে। প্লান্টেশন, এগ্রিকালচার, ম্যানুফাকচারিং, কনস্ট্রাকশনসহ মোট ৫টি খাতে বিপুল সংখ্যক কর্মী নেওয়ার ঘোষণা রয়েছে মালয়েশিয়া সরকারের।

চাহিদাপত্রে যা রয়েছে

শতভাগ অনলাইনের সহায়তায় কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে মালয়েশিয়া সরকার। বাংলাদেশের অনুকূলে যে চাহিদাপত্র ইস্যু হয়েছে তাতে ৩ বছর কাজের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা টানা ১০ বছর পর্যন্ত নবায়ন করা যাবে। কর্মীর দৈনিক কর্মঘণ্টা হবে ৮ ঘণ্টা, চাইলে ওভারটাইম করা যাবে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের শ্রম আইন শতভাগ প্রযোজ্য হবে। কর্মীর মাসিক বেতন চুক্তিপত্রে যা উল্লেখ থাকবে তাই-ই দেওয়া হবে। এর কম হলে কম্পিউটার ক্লিক করবে না। হাতে নয়, কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মজুরি জমা হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের সরকারের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা চলে যাবে। অনলাইন প্রক্রিয়ার কারণে একটি ধাপের সঙ্গে অন্যটি ম্যাচ না করলে সিস্টেম কাজ করবে না বলে জানা গেছে।

অনলাইনে দ্রুত সময়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে

‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল বা অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ হবে মালয়েশিয়ায়। কর্মীর বায়োমেট্রিক পরীক্ষার পর অনলাইনে কর্মী ভিসা প্রসেস করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। বর্তমান ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে একজন কর্মীর নিয়োগে ৩ থেকে ৯ মাস সময় লাগলেও নতুন এ পদ্ধতিতে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মীর নিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নতুন এ পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের কারিগরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সিনারফ্লাক্স ও বেস্টিনেট মালয়েশিয়ার দুটি কোম্পানি। এ দুটি কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা।

কমবে প্রতারণা

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠাতে গড়ে উঠেছে দালালচক্র। বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের পর থেকেই দালালচক্র দফায় দফায় টাকা নিচ্ছে। কোনো কোনো সময় রিক্রুটিং এজেন্সির কাছেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কর্মীরা। মেডিক্যাল আর বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় ওই চক্র। দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে কর্মীরা বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবনযাপনের ঘটনা বহু পুরনো। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতেও দালালচক্রের থাবা রয়েছে। মোটা অংকের টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় এসে প্রতিশ্রুত চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা অনেকের ঠাঁই হয়েছে বনে-জঙ্গলে। ব্রিজের নিচে ও ফুটপাতে রাত কাটানোর ঘটনাও রয়েছে। এসব প্রতারণার কারণে দেশের অন্যতম এ শ্রমবাজারটি কয়েকবার বন্ধও হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে যেমন এর খেসারত দিতে হচ্ছে, তেমনি মালয়েশিয়া সরকারও ওই ঘটনায় বিব্রত রয়েছে।

এ অবস্থায় উভয় দেশের সরকার মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কোনোভাবেই যাতে দালালচক্র সুবিধা না করতে পারে সেজন্য ম্যানুয়াল বা পুরনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে কর্মী বাছাই এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে এবার।

গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া সফরকালে সরেজমিন মালয়েশিয়ান দুই সহযোগী সংস্থা সিনারফ্লাক্স ও বেস্টিনেট নামে মালয়েশিয়ান দু’টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোট ১২টি ধাপ অনুসরণ করে বাংলাদেশ থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী নেওয়া হবে। অনলাইন প্রক্রিয়ায় কর্মী নেওয়া শুরু হলে জালিয়াতি আর অনিয়মের কোন সুযোগ থাকছে না। অভিবাসন ব্যয় কমে যাওয়ার পাশপাশি মালয়েশিায় এসে কর্মীরা কাজের নিরাপত্তা, বীমা সুবিধাসহ আইএলওর সকল সুযোগ-সুবিধা পাবে।

মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা জানান, অনলাইন প্রক্রিয়ার প্রথমেই মালয়েশিয়ায় কোনো কোম্পানি কিংবা কারখানার মালিক কর্মীর চাহিদাপত্র অনলাইনে তাদের সরকারের কাছে আবেদন করবেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা কারখানার বাস্তবতা যাচাই করে রিপোর্ট দিবে এবং চাহিদাপত্র ঠিক হলে মালয়েশিয়ান সরকার কর্মী নেওয়ার অনুমোদন দিবে। এরপর মালয়েশিয়ার সরকারই কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনীত করবে। পরে সেই চাহিদাপত্র বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান দূতাবাসে যাবে। মনোনীত রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী বাছাই, মেডিক্যালসহ ১২টি ধাপ পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নেওয়া হবে।

শুধু বাংলাদেশ নয়-একই পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার অন্য ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকেও কর্মী নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের কারিগরি সহায়তাকারী দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে কয়টি প্রতিষ্ঠান কর্মী পাঠাবে সেটা তাদের দেখার বিষয় নয়। সেটা দেখবে উভয় দেশের সরকার। এটা অন্য কারো নির্ধারণ করার সুযোগ নাই। মূলত প্রতারণা ও জালিয়াতি বন্ধ করা এবং প্রবাসী কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই উভয় সরকার এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/জানুয়ারি ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর