thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

খ্যাতির বিড়ম্বনায় ক্রিকেট তারকারা?

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০১ ২৩:১৩:০০
খ্যাতির বিড়ম্বনায় ক্রিকেট তারকারা?

একমাত্র টেস্ট খেলতে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ভারত গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মুশিফকুর রহিম-তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানরা যখন ভারত মিশন নিয়ে ব্যস্ত, তখন জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা স্পিনার আরাফাত সানির দিন কাটছে কারাগারে। এক তরুণীর করা মামলার কারণে মাঠের তারকাটি এখন অপরাধীর কাঠগড়ায়। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সানির বিরুদ্ধে নতুন করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন নাসরিন সুলতানা নামক ওই তরুণী। নিজেকে সানির স্ত্রী দাবি করা এই তরুণী এবার সানি ও তার মায়ের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা ঠুকেছেন।

কেবল সানি নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকাদের এমনিভাবে অপরাধীর কাতারে চলে যাওয়া, জেল-জরিমানার শিকার হওয়া কিংবা সমালোচনা-নিন্দার মুখে পড়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। নিজের শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনে দায়ে জেল খেটেছেন তারকা পেসার শাহাদত হোসেন রাজীব ও তার স্ত্রী। হ্যাপি নামক এক উঠতি নারী অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের রেশ ধরে জেল খাটতে হয়েছে আরেক পেস তারকা রুবেল হোসেনকে। এ ছাড়াও নারী সম্পর্কের রেশ ধরে অতি সম্প্রতি দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন পেসার আল-আমিন হোসেন ও অলরাউন্ডার সাব্বির রহমান। তাদের বিষয়গুলো আইন-আদালত পর্যন্ত না গড়ালেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জরিমানা করেছে। অতীতে এমন জরিমানার শিকার হওয়া মতো কিংবা শৃঙ্খলা-ভঙ্গের কাজ করেছেন বড় তারকা সাকিব আল হাসানও। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটে জুয়া কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে শাস্তি পেয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো তারকাও। স্বাভাবিকভাবেই তাই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যে প্রশ্ন সরব হয়ে উঠেছে তা হলো-কেন, কী কারণে, এমনভাবে একের পর এক ক্রিকেট তারকা অপরাধমূলক, দেশের ক্রিকেটের সুনাম ক্ষুণ্ন করা, কর্মকাণ্ডের জন্ম দিচ্ছেন? এটা কি তাদের খ্যাতির বিড়ম্বনা, নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনো কারণ? এ থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কী?

এ ব্যাপারে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির একজন কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘আমাদের দেশে হয়তো ব্যাপারটা সাম্প্রতিক। একটা সময় আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ক্রিকেটারদের মধ্যে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। এখন যেটা আমাদের দেশে দেখা দিয়েছে। এর কারণ আমাদের ক্রিকেটাররা বয়সে তরুণ, আর তারা প্রতিনিয়ত নারী ভক্তের কবলে পড়ছেন। এ থেকে অনেক সময় তারা এসব অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এটা তো দুই একটা ঘটনা। এ ধরনের আরও ঘটনা আমরা ঘরোয়াভাবে মীমাংসা করেছি। একটা সময় আমাদের দেশে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা এলে ভক্তদের দ্বারা এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতেন। এখন যেটা আমাদের ক্রিকেটাররা হচ্ছেন। মোবাইল ট্রাকিং করে হয়ত একটা সময় এ ধরনের পরিস্থিতি সামলানো যেতো। কিন্তু ফেসবুকের সহজলভ্যতায় এখন সেটা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

এদিকে মাঠের বাইরে সম্প্রতি তরুণ তারকা ক্রিকেটারদের এমন কিছু ঘটনায় বিব্রত সাবেক ক্রিকেট তারকারাও। তাদের মতে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড এড়াতে ব্যক্তিজীবনে আরও বেশি সাবধান, নীতিবান হওয়া জরুরি বর্তমান ক্রিকেটারদের। সেই সঙ্গে ক্রিকেটারদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার) মাসে অন্তত ২/১ বার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করাও উচিৎ বলে মনে করেন তারা।

এ ব্যাপারে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম বলেছেন, ‘আসলে এ ধরনের ঘটনা আমাদের ক্রিকেটের জন্য খুবই দুঃখজনক। তবে, কেউই আইনের উর্ধে নয়। ক্রিকেটার হলেও তারা এ দেশের নাগরিক। সুতারাং আমি মনে করি, নাগরিক হিসেবেও তারা এর বাইরে নয়। বিষয়টা সবদিক দিয়ে বিবেচনা করতে হবে, খতিয়ে দেখতে হবে তারা কোন ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে কিনা।’

তবে, ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কেউ যেন টিম বাংলাদেশকে খাটো করে না দেখে, সে ব্যাপারেও সচেতনতার উপর জোর দেন বেলিম। এ প্রসঙ্গে সাবেক এই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘এ ধরনের ঘটনা শুধু আমাদের দেশে বা আমাদের ক্রিকেটারদের নিয়ে ঘটে এমন না। বিশ্বের অনেক ক্রিকেটারই এ ধরনের ঝামেলায় এর আগে পড়েছেন, এখনও পড়ছেন। কারণ, তারা তো শুধু ক্রিকেট খেলেননা, তাদের একটা ব্যক্তিজীবনও আছে। ব্যক্তিজীবনে অনেক কিছুই ঘটে, তার জন্যে তো আর ক্রিকেটকে দ্বায়ী করা যাবে না।’

ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা থেকে অন্য ক্রিকেটারদের শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তিজীবনে সাবধান হওয়ার জন্য জোর তাগিদ দেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। এ প্রসঙ্গে বেলিম বলেছেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্যে ক্রিকেটারদের উচিৎ ব্যক্তিজীবনে সাবধান হওয়া। কারণ, তাদের বোঝা দরকার ক্রিকেটের সাথে সাথে তাদেরও এক ধরনের খ্যাতি তৈরি হয়। যা তাদের জন্য উপকারের পাশাপাশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আসলে তাদের পিছনে যেমন ভক্তরা লেগে থাকে, তেমনি তাদেরকে অন্যরাও নজরে রাখেন, এটা মাথায় রাখতে হবে।’

এ অবস্থায় করণীয় বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আসলে তারা তো প্রফেশনাল আর নিজেদের ভালো মন্দটা বোঝে, তারা ছোটও না। এ ব্যাপারে তাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। এছাড়া তাদেরকে শুধু খেলাধুলার মধ্যে রাখলেই হবে না, খেলার পাশাপাশি তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা তাদেরকে নিয়ে মাসে ২/১ বার বসতে পারে। এসব ব্যাপার তুলে ধরে সচেতনতা সৃষ্টি আর সতর্ক করতে পারে।’

এদিকে এ প্রসঙ্গে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হাসানুজ্জামান ঝড়ু দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, তারকারা সব সময় সবার নজরে থাকেন। এই জন্যে বিপদও তাদের পদে-পদেই ঘুরে বেড়াই। এটা আমাদের তরুণ তারকা ক্রিকেটারদের মনে রাখা উচিৎ। এ ধরনের কাজের জন্য তারা যেমন নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি দেশের ক্রিকেটেও যে কম-বেশি দাগ পড়ে না, তা কিন্তু নয়। এ জন্যে তারকা বনে যাওয়া আমাদের তরুণ ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আরও বেশি সাবধান হতে হবে। তারকা হওয়ার পর তাদের সামনে দুটি পথই খুলে যায়। ভালো আর মন্দ। তাই তাদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে তারা কোন পথে হাঁটবে।’

‘দেখা যাচ্ছে এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হওয়ার ফলে আমাদের ক্রিকেটাররাই ব্যক্তি জীবনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক সময় খেলা থেকেই বাদ পড়ে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে এক সময় দেখা যাচ্ছে সামগ্রিকভাবে আমাদের ক্রিকেটেরই ক্ষতি হচ্ছে।’ যোগ করেন ঝড়ু।

এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে উত্তোরণের উপায় জানতে দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে মতামত নেওয়া হয় সমাজ বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান আর অপরাধ বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের। তারা মনে করছেন, হঠাৎ তারকা বনে যাওয়া আর নিজের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে সচেতনতা ও সতর্কতার অভাবেই এ ধরনের অপরাধকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন ক্রিকেটাররা।

হঠাৎ করে আমাদের ক্রিকেটাররা এ ধরনের নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে কেন জড়িয়ে পড়ছে? এর উত্তর খুঁজতে যোগাযোগ করা হয় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ তত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আসলে এটা অপরাধ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখবো যেকোন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পিছনে সামাজিক কাঠামো একটা বড় ব্যাপার। তো বাংলাদেশে আমরা যদি অপরাধের গতি-প্রকৃতি দেখি তাহলে দেখবো দিনকে-দিন অপরাধের হার কিন্তু বাড়ছে। যার একটি ফলাফল আমাদের ক্রিকেটারদের এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়া।’

‘ক্রিকেট কিন্তু এখন একটি বাণিজ্যিক খেলা, ক্রিকেটের সঙ্গে অনেক টাকা-পয়সার যুক্ততা আছে এবং বাংলাদেশে ক্রিকেট সেলিব্রেটি জীবন নিয়ে আসে। ফলে ক্রিকেটাররা সাময়িক দিনের জন্য বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন। এখানে ক্রিকেটাররা তো কেবল ব্যক্তিগতভাবে জড়িত না, যদি অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় বলি, তবে এটি হবে সংগঠিত অপরাধ। যে অপরাধগুলো আসলে অনেক মানুষ একসাথে যুক্ত হয়ে করে। আমাদের দেশে ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট খেলা নিয়ে যে উত্তেজনা, ক্রিকেট খেলা নিয়ে মানুষের যে আবেগ অনুভূতি, সেই জায়গায় ক্রিকেটাররা একটা অবস্থানে আছেন। ফলে ক্রিকেটারদের এই যে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সঙ্গে অনেক মানুষের যে সম্পর্ক আছে এই সম্পর্কের মধ্যে দিয়েই মূলত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। আসলে খেলাধুলার অপরাধ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি, যার কারণে আপাতত তারা সংগঠিত অপরাধের একটা অংশে পরিণত হচ্ছে।’ যোগ করেন তিনি।

এদিকে, ক্রিকেটাঙ্গনে এ ধরনের অপরাধ এর আগেও সংঘটিত হয়েছে জানিয়ে এ ক্ষেত্রে বর্তমান মিডিয়ার সরব ভূমিকায় এখন তা নিয়ে আলোচনা বেশি বলে উল্লেখ করেন এই অপরাধ বিশ্লেষক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আসলে আমাদের দেশে তো এই ধরনের অপরাধ সব সেক্টরেই আছে। তবে, এতদিন ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ততটা লেখালেখি হতো না, ফলে ওই জায়গাটাতে সেভাবে এতদিন কেউ নজরও দিতো না। দেখা যাচ্ছে দেশে কিন্তু প্রতিনিয়ত অনেক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো সবই যে মিডিয়াতে আসছে তেমন না। তাই সেগুলো নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয় না। কিন্তু ক্রিকেটাররা বলেন বা আমাদের সেলিব্রেটি বলেন, তাদের বিষয়গুলো মিডিয়াতে বেশি চলে আসে। যার কারণে তাদের অপরাধগুলো আমরা বুঝতে পারি বা তা নিয়ে আলোচনা হয়। আসলে আগেও এ ধরনের অপরাধ ক্রিকেটাঙ্গনে ছিল।’

‘এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং যারা ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (বিসিবি ও সরকারের আইন সংস্থার) আগেই সতর্ক হওয়া উচিৎ। এবং তাদের দ্বারা সংঘটিত ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত সাপেক্ষে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। তবে, এটা ঠিক যে তাদেরকে নিয়ে অনেক সময় ষড়যন্ত্রও হতে পারে। এই জন্যে তারা কোন অপরাধে যুক্ত হলে তাদের অপরাধ প্রমাণের আগেই তাদের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা বা তাদের অপরাধী বলাটা সমীচীন হবে না। এমনটা হলে তাদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে অথবা তার বিরুদ্ধের অভিযোগ প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।’ যোগ করেন সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম।

এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হওয়া ঠেকাতে পূর্ব প্রস্তুতি কি হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় যদি বলি, তবে তাদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার আগেই অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করার দিকে জোর দিতে হবে। এছাড়া তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে, তারা দেশের জন্য খেলে এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে। তারা যদি ব্যক্তি জীবনে এটা ধারণ করতে পারে, তাহলে আমার মনে হয় তারা এ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে থাকতে পারবে।’

ক্রিকেটারদের এ ধরনের কর্মমাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পেছনে পাঁচটি কারণ তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল করিম। তিনি মনে করেন, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সমাজের সব ক্ষেত্রের মতো ক্রিকেটাঙ্গনেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে পাঁচ ধরনের ব্যাপার থাকতে পারে। এর মধ্যে প্রথমত হতে পারে, তাদের বেড়ে ওঠাটা সুন্দর হয়নি। দ্বিতীয়ত হতে পারে, তারা চারিত্রিকভাবে দুর্বল। তৃতীয়ত, তাদের মধ্যে নৈতিক চেতনা কাজ করে না। চতুর্থত, সেখানে আইনের দুর্বলতা থাকতে পারে। আর পঞ্চমত, রাজনৈতিক বিবেচনায় সুযোগ পাওয়া বা আশ্রয় পাওয়া।’

এ বিষয়ে করণীয় বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে উত্তরণের উপায়টা হচ্ছে, সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সঙ্গে সমাজের সবস্তরে, এমনটি ক্রীড়াঙ্গনেও সুসাশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

এদিকে, ক্রিকেটারদের অপরাধের প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক কিশোর রায় দ্য রিপোর্টের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের ক্রিকেটাররা সবাই যে এমন তা নয়। অনেকে আছেন যারা সমাজে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। আর গুটি কয়েক ক্রিকেটারই এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গেছেন। সম্প্রতি যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গেছেন, আমার মনে হয় ছোট থেকে তাদের পারিবারিক বা সামাজিক বিকাশটা ঠিকমতো হয়নি। ফলে দেখা যাচ্ছে এখন সে একটা বড় জায়গায় বা উন্মুক্ত পরিবেশে এসে নিজেকে আর খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। তাতে দেখা যাচ্ছে তার কাছে যে সুযোগগুলো আসছে, সেগুলোকে সে পজিটিভলি না নিয়ে নেগেটিভলি ব্যবহার করছে।’

এ ক্ষেত্রে তাদের হঠাৎ খ্যাতি কোন প্রভাব ফেলছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে নৈতিক শিক্ষার জন্যে পরিবেশ বা পরিবারের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক সময় তারা এ শিক্ষাটা সেই পরিবেশ থেকে পাচ্ছে না। ফলে যখন একটা উন্মুক্ত পরিবেশে আসছে, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। তখনই মূলত এই অপরাধগুলো ঘটিয়ে ফেলছে। যেটাকে আমাদের সাইকোলজির ভাষায় বলে, ইড, ইগো, সুপার ইগো। যা মানুষের চিত্ত গঠনে কাজ করে। ইড যেটা হলো ফিগারেবল প্রিন্সিপাল। আর দেখা যাচ্ছে, ইগো সুপার ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সে জন্য তারা বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ছে।’

এ থেকে উত্তরণের উপায় বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেটাররা আমাদের গৌরব ও অহংকারের অংশ। তারাই কিন্তু আমাদের দেশের পরিচয়কে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মাথায় রাখতে হবে তারা আমাদের তরুণদের আদর্শ। বর্তমান তরুণদের একটা অংশ তাদেরকে ফলো করে। সুতরাং তাদের সমাজের প্রতি বা দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে এই বিষয়টা মাথায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়া, বিসিবি আমাদের ক্রিকেটারদের জন্যে নিয়মিত হিসেবে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দিতে পারে। যারা কিনা ক্রিকেটারদের মানসিক দিকগুলো উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে মনোযোগ না দিয়ে ক্রিকেটাররা যেন খেলার প্রতি মনোযোগী হন সে ব্যাপারেও তারা কাউন্সিলেংয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারেন।’

(দ্য রিপোর্ট/এজে/জেডটি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর