thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

পঞ্চগড় চিনিকলে দেড় শ’ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ ২২:১৭:৩৪
পঞ্চগড় চিনিকলে দেড় শ’ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা

রাজিউর রহমান রাজু, পঞ্চগড় : পঞ্চগড় চিনিকলে দিন দিন বেড়েই চলছে লোকসানের মাত্রা। গত কয়েক অর্থবছর থেকে টানা লোকসান গুনছে পঞ্চগড় জেলার সবচেয়ে পুরনো ও সর্ববৃহৎ এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, যান্ত্রিক ক্রটি, কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ চিনি অবিক্রীত থাকাসহ নানা সমস্যার কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান গুনতে হচ্ছে এই চিনিকলকে।

চিনিকলের দেওয়া এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক দশকে পঞ্চগড় চিনিকলের লোকসানের মোট পরিমাণ দেড় শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে এই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই চলছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প-কারখানাটি।

পঞ্চগড় চিনিকল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫-৬৯ সালের সরকারের সময়ে দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড় সদরের ধাক্কামারা এলাকায় ৫৫.৫৫ মিলিয়ন টাকা ব্যয়ে ১৯৮.৪৬ একর জমির উপর স্থাপন করা হয় পঞ্চগড় সুগার মিলস লিমিটেড।

১৯৬৯ সাল থেকে পরীক্ষামূলক আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন শুরু হয়। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৮ হাজার ৫শ’ ৩৬ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হতো এই চিনিকল থেকে। কিন্তু বর্তমানে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে লোকসান গুনছে কারখানাটি।

১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬শ’ ১২ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছিল। সর্বশেষ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১৪ লক্ষ টাকা মুনাফা হয়েছে। তার পর থেকেই চলছে লোকসান। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৭ হাজার ৫শ’ একর জমিতে ৭২ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করলেও ৭০ হাজার ৯ শ’ ৬৯ মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হয়। যা থেকে ৪ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। ওই অর্থ বছরে লোকসান হয় ২৬ কোটি টাকা।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫শ’ একর জমিতে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করলে ৯৪ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হয়েছে। চিনির লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার মেট্রিক টন হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬ হাজার ২৫১ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে আখ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৮৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলে আখ উৎপাদন হয় ৬১ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। আর চিনির লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন হলেও উৎপাদিত হয়েছে ৩ হাজার ৫১৮ মেট্রিক টন।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাড়ে ৪ হাজার একর জমিতে আখ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৭০ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলে আখ উৎপাদন ৪৮ হাজার ৭১৭ মেট্রিক টন। আর চিনির লক্ষমাত্রা ৪ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন হলেও উৎপাদিত হয়েছে ২ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন।

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮০ হাজার মেট্রিকটন আখ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখান থেকে চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।

বিগত অর্থবছরে উৎপাদিত ২ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন চিনির মধ্যে ২ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন ও চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত উৎপাদনের ৩ হাজার ১০২ মেট্রিকটনসহ মোট ৫ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন চিনি গুদামজাত রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩৩ কোটি টাকা।

পঞ্চগড় জেলার আখ চাষ উপযোগী ৩০ হাজার একর জমির মধ্যে ১০ হাজার একর জমি আখ চাষের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু পুরনো জাতের আখে চিনি রিকোভারি হার ব্যাপক অংশে কমেছে। সেই সাথে আখ চাষে চাষীদের লোকসান হওয়ায় চাষীরা অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ৬০ টাকা দরে চিনি বিক্রির বিপরীতে চিনিকলে এক কেজি চিনির উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

দীর্ঘদিন একটানা এই লোকসানের কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পাচ্ছেন না তাদের পেনশনের টাকা। এতে দেশের প্রাচীন এই চিনিকলটি দিন দিন প্রাণ হারাতে বসেছে। সেই সাথে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্থায়ী ও মৌসুমী শ্রমিকসহ মোট ৮২৬টি পরিবারও এগিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে।

প্রতি বছর আখ স্বল্পতায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে চিনিকলটি বন্ধ হয়ে যায় এবং বছরের প্রায় ১০ মাসই বন্ধ থাকে। সংক্ষিপ্ত এই মৌসুমে উৎপাদিত মুনাফা থেকে মৌসুমী এবং স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া লোকসানের একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিস্টরা।

পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমদাদুল হক বলেন, ‘আখ স্বল্পতার কারণে মাত্র দুই মাস চিনিকল চলে। সেখান থেকেই পুরো বছর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনসহ অন্যান্য সকল খরচের কারণে এই লোকসান হচ্ছে। তবে আখ চাষ বাড়ানোর জন্য আমরা চাষীদের বিভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ করছি। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা প্রক্রিয়া চলছে। সেই সাথে সুগার-বিট দিয়ে চিনি উৎপাদনের জন্য সুগার-বিট চাষের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া বৃহৎ এই চিনিকলটিকে বহুমুখী ব্যবহারের প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করা হবে বলে জানান তিনি।’

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/জেডটি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর